মেসির ছায়া দেখছি নেইমারের মধ্যে
বিশ্বের একটি নামী সাপ্তাহিক পত্রিকা কয়েক দিন আগে নেইমারকে নিয়ে প্রচ্ছদ স্টোরি করেছিল। হেডিং করেছিল, ‘নেইমার, দ্য নেক্সট পেলে’।
ব্রাজিলের খেলার পত্রিকাগুলো ফিলিপ স্কোলারির দলের নতুন মহাতারকাকে নিয়ে দেখলাম লিখছে, এ তো গ্যারিঞ্চার উত্তরসূরি!
পেলের শেষ বিশ্বকাপের খেলা দেখেছি টিভিতে। গ্যারিঞ্চার কিছু খেলা দেখেছি, অমল দত্তের বিদেশ থেকে আনা ফিল্মের দৌলতে। ফলে ওই দুই ব্রাজিল-শ্রেষ্ঠর খেলার স্টাইলের সঙ্গে নেইমারকে তুলনা করার মতো জায়গায় আমি নেই। কিন্তু বুধবার রাতে মেক্সিকোর বিরুদ্ধে যে বিধ্বংসী নেইমারকে দেখলাম, তাকে নিয়ে ভবিষ্যতে লিওনেল মেসি বা ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর মতো উচ্ছ্বসিত হতেই পারে ফুটবল-বিশ্ব।
কনফেড কাপে শেষ চারে গেল ব্রাজিল। স্কোরলাইনটা লেখা উচিত নেইমার-২ : মেক্সিকো-০। ম্যাচ শেষ হওয়ার প্রায় আঠারো ঘণ্টা পর যখন এই লেখা লিখছি, তখনও চোখে লেগে আছে ওর পড়তি বলে বাঁ পায়ের অসাধারণ কম্পাস মাপা শটের গোলটা! কী প্রচণ্ড জোরে, সামান্য বাঁক খেয়ে বলটা গোলে আছড়ে পড়ল! টেক্সটবুক টাইমিং বলতে যা বোঝায়, গোলটা তাই। ইনজুরি টাইমে মেক্সিকোর দুই ডিফেন্ডারের মাঝখান দিয়ে ড্রিবল করে বল নিয়ে গিয়ে যে গোলটা জো-কে দিয়ে করাল তাতে মনে হল, নেইমার সত্যিই অন্য জাতের। টাচ, টাইমিং, ভারসাম্য এই তিন অস্ত্রে অসাধারণ।
নেইমার বনাম মেক্সিকো
মেসির সঙ্গে অদ্ভুত একটা মিল আছে নেইমারের। দু’জনের কেউই পজিটিভ স্ট্রাইকার নয়। দু’জনেই শ্যাডো স্ট্রাইকার। মাঝমাঠের অ্যাটাকিং জোন দু’জনেরই যুদ্ধক্ষেত্র। নেইমারের দু’টো পা-ই বলকে কথা বলাতে পারে। কনফেড কাপের পরপর দু’টো ম্যাচে দু’পা দিয়ে দু’টো গোল করল নেইমার। বিশ্ব ফুটবলে একটা ট্রেন্ড চলছে, যে ফুটবলারের যে পা বেশি কার্যকর তাকে উল্টো দিকে খেলাও। যেমন নেইমারের ডান পা তুলনায় বেশি নিখুঁত বলে ওকে কিছুটা বাঁ দিকে খেলাচ্ছেন স্কোলারি। এতে বিপক্ষের ডিফেন্ডারকে বোকা বানাতে সুবিধা হয়। কিন্তু নেইমারের বড় সম্পদ ওর গতি। যা কখনও সাপের মতো। কখনও হরিণের মতো। শুধু উইথ দ্য বল নয়, বল যখন পায়ে থাকে না তখনও বার্সেলোনার নবাগত তারকাটি ভয়ঙ্কর। ড্রিবলটা দুর্দান্ত লিখতে পারছি না। মেসির মতো গাট্টাগোট্টা নয়। রোগাসোগা। সেটা ওকে সমস্যায় ফেলছে। শরীরে আরও শক্তি দরকার। না হলে, বিপক্ষ ডিফেন্ডাররা ধাক্কা দিলে সমস্যা হবে। নেইমারের সেটা হচ্ছেও। শটে কিন্তু প্রচণ্ড জোর। বিপক্ষের বক্সে বা আশেপাশে বল পেলে ওকে রোখা মুশকিল। সেটা জাপান, মেক্সিকো বুঝে গিয়েছে। সবথেকে বড় কথা, একেবারেই উচ্ছ্বাসহীন। বুধবার রাতে অবিশ্বাস্য খেলার পরেও দেখলাম পাড়ার আর পাঁচটা ছেলের মতো সাধারণ। যেন কিছুই করেনি। এটা যে কোনও পারফর্মারকে অনেক এগিয়ে দেয়।
স্কোলারির হাতে পড়ে ব্রাজিল এখন অনেক বেশি ডাইরেক্ট ফুটবল খেলছে। নেইমারের মধ্যেও বিপক্ষের গোলের দিকে একটা ‘ডাইরেক্ট অ্যাপ্রোচ’ আছে। মেক্সিকোর বিরুদ্ধে বিশেষ করে দ্বিতীয়ার্ধে ওর পায়ে যখনই বল পড়ছিল, মন বলছিল কিছু হবে। বাঁ দিকে কাট করছে। হঠাৎ-ই ভিতরে ঢুকে পড়ছে। কিন্তু সমস্যা অন্য জায়গায়। স্কোলারির পুরো টিম বড্ড বেশি নেইমার-নির্ভর হয়ে পড়ছে। এটা খারাপ দিক। ব্রাজিল যে ফর্মেশনে খেলেছে সেটা ৪-২-৩-১। ফ্রেডকে ওয়ান স্ট্রাইকার খেলানো হচ্ছে। আমার মনে হয় ব্রাজিলকে সাফল্য পেতে হলে অ্যাটাকার বাড়াতে হবে।
পাল্টা আক্রমণের ফুটবল খেলাচ্ছেন নেইমারদের কোচ। সে জন্য দেখলাম প্রথম গোলটার পর ব্রাজিল কেমন গুটিয়ে গেল। এটা ঠিক সিজারকে কঠিন কোনও বল ধরতে হয়নি। কিন্তু অন্তত দু’বার গোলের সহজ সুযোগ পেয়েছিল অলিম্পিক চ্যাম্পিয়ন মেক্সিকো। ওদের স্ট্রাইকার ডস স্যান্টোসকে আমার খুব ভাল লাগল। ও গোল করতে পারলে ম্যাচটা প্রথমার্ধে ১-১ হয়ে যেতেই পারত। আলভেজ-ডেভিডরা সময় মতো সামাল দিয়েছে।
বার্সেলোনা রেকর্ড দামে দলে নিয়েছে নেইমারকে। ব্রাজিলের জাতীয় দলে নেইমার সে ভাবে পওলিনহোদের সাহায্য পাচ্ছে না। বার্সেলোনায় ও কিন্তু সাহায্য পাবে জাভি, ইনিয়েস্তাদের। যা মেসি পায়। মেসির সঙ্গে নেইমারের যুগলবন্দি কোন ফুটবল-সুগন্ধী ফোটায় সেটা দেখার অপেক্ষায় থাকব। কিন্তু দেশের মাঠে কনফেড কাপে নেইমার কোথায় শেষ করে সেটাও দেখার জন্য মুখিয়ে আছে ফুটবল বিশ্ব। আমার ধারণা গত দুটো ম্যাচে নেইমার যা খেলেছে তাতে স্কোলারি যদি ওকে ঠিকঠাক ব্যবহার করেন, তা হলে কাপটার সঙ্গে নেইমার নামটাও ডাকটিকিটের মতো সেঁটে যাবে।

নেইমার এখন বিশ্বের সেরা তিন ফুটবলারদের মধ্যে একজন। কনফেডারেশন কাপই হচ্ছে আদর্শ মঞ্চ নেইমারের প্রতিভা দেখানোর। নেইমার হচ্ছে স্কিল আর টেকনিকের মিশেল। মেক্সিকোর বিরুদ্ধে ম্যাচের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ডিফেন্ডারদের ঘুম কেড়ে নিয়েছে নেইমার।
নেইমার এমন একজন ফুটবলার যে মাঠে নামলে সব কিছুই করতে পারে। আমি জানতাম নেইমার বেশ কয়েক জনকে কাটানোর ক্ষমতা রাখে। তাই তৈরি ছিলাম পাসটা পেয়ে গোলটা করার জন্য।
নেইমারের মতো ফুটবলার ব্রাজিলে আছে বলেই ম্যাচ হারতে হল। শুরুতে নেইমারের গোলটা যেমন দারুণ ছিল তেমনই শেষে পাসটাও বিশ্বমানের ছিল।
নেইমারকে যারা খারাপ ফুটবলার বলেছিল, তাদের এখন মুখ লুকনোর জায়গা নেই। আর এই সমালোচকদের সংখ্যাটাও দিনে দিনে কমছে।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.