সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় সতেরো বছর আগে ঠিক এই দিনটাতে প্রথম টেস্ট ম্যাচে নেমেছিলেন
লর্ডসে।
অ্যাসেজের
লর্ডস টেস্ট ম্যাচে এমসিসি তাঁকে আমন্ত্রণ জানিয়ে ১৮ জুলাই নিয়ে যাচ্ছে।
সোফিয়া
গার্ডেনের
পাশের
গল্ফ কোর্সের
মতো বড় মাঠটায় প্রচুর ভারতীয় সমর্থক শোভিত
হয়ে
সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়
একান্ত সাক্ষাৎকার দিলেন আনন্দবাজারকে। |
অধিনায়ক ধোনি: এই টুর্নামেন্টে দুর্দান্ত ক্যাপ্টেন্সি করছে। বলা যেতে পারে নিখুঁত। বিদেশে ওর অধিনায়কত্ব নিয়ে প্রচুর সমালোচনা হয়েছে। তার অনেকটাই ও ঢেকে দিয়েছে। তবে সমালোচনাটা মুখ্যত হয়েছে টেস্ট ম্যাচে। সেখানে প্রমাণ করাটা শুধু বাকি থেকে গেল।
ধোনির আজ বল করতে আসা: একদম ঠিক সিদ্ধান্ত। কোহলিকে দিয়েও করাতে পারত। কিন্তু কোহলির চেয়ে ওর বলে জোর বেশি। আর আজকের উইকেটে চার নম্বর পেসার দরকার ছিল। অথচ অশ্বিনকে বসানো সম্ভব ছিল না। সে দিক থেকে ঠিকই করেছে। ধোনি বল করতে আসার ঠিক আগেই আমাকে নাসির হুসেন বলছিল, এ বার না ধোনি গ্লাভসটা খুলে ফেলে! ঠিক তাই-ই হল। আমি জানি আগের বার লর্ডসে বল করায় ও প্রচণ্ড সমালোচিত হয়েছিল। এ বার মনে হয় না সে রকম কিছু হবে বলে। হওয়া উচিতও নয়।
আজকের শ্রীলঙ্কা: আমার অবাক লাগল ওদের বডি ল্যাঙ্গোয়েজ দেখে। ঠান্ডায় যেন ওরা জমে গেছিল। আসলে ওরা আটকে গেল দিলশানের চোট হয়ে যাওয়ায়। দিলশানই ওদের খেলাটা তৈরি করে। ওখান থেকেই ওরা অদ্ভুত রকম জবুথবু হয়ে গেল। আর এত ক্যাচ ফেললে কি ম্যাচ জেতা যায় নাকি? শিখর ধবনকে কেউ আজকালকার দিনে ছাড়ে?
রায়নাকে স্লিপে আনা: খুব ভাল সিদ্ধান্ত। বাইরে এখন দৌড়নোর মতো ছেলে হয়েছে তাই ধোনি এটা করতে পারছে।
|
‘ধবন, তুমি আমাদের সৌরভের কথা মনে করিয়ে দাও’। এই প্ল্যাকার্ড নিয়ে
কার্ডিফে খেলার পরে সৌরভের সঙ্গে দেখা করলেন ভারতীয় সমর্থকরা। ছবি:গৌতম ভট্টাচার্য |
তরুণরাই তা হলে ওয়ান ডে ক্রিকেটে রাজত্ব করবে: এখনও বলার সময় আসেনি। আরও কিছু দিন যাক।
বিদেশে ওয়ান ডে-তে এত ভাল খেলা: আমরা ন্যাটওয়েস্ট জিতেছিলাম একটাও ম্যাচ না হেরে। ২০০২-এ কলম্বোতেও তাই। বৃষ্টি এসে দু’দিন ট্রফি পেতে দেয়নি। তখন খোঁজও করেছিলাম জয়সূর্য শ্রীলঙ্কার কোন মন্দিরে যায়? এ বার মনে হচ্ছে রোববারই ফয়সালা হয়ে যাবে।
রবীন্দ্র জাডেজা: যত দেখছি তত মুগ্ধ হচ্ছি। এই ছেলেটা সত্যিই দারুণ স্পিন করাচ্ছে। আগের দিনই বলেছি যুবরাজের চেয়ে ভাল। আজকেও বলছি যুবরাজ ব্যাটে এগিয়ে, জাডেজা বলে এগিয়ে।
কোচ ফ্লেচার: প্রথম বড় টুর্নামেন্টে ওর সাফল্য। ভালই হল। আগামী দেড় বছরের কঠিন ক্রিকেটের জন্য তৈরি করে রাখল।
স্পট-ফিক্সিং বিতর্কের পরেও টিমের এমন রোমাঞ্চকর প্রত্যাবর্তন: যে কোনও টুর্নামেন্টে আসল হচ্ছে ফর্মটা পেয়ে যাওয়া। ভারত এর আগের বার যখন ইংল্যান্ড আর অস্ট্রেলিয়ায় গেছিল, প্রস্তুতি ম্যাচ প্রায় খেলেইনি। এ বার কিন্তু দুটো ম্যাচ খেলে জিতেছে। আর তা থেকে যে মোমেন্টাম পেয়েছে সেটাই ধরে রেখেছে।
ফাইনালে ইংল্যান্ড: ওদের অবিশ্বাস্য কিছু খেলতে হবে। বার্মিংহ্যাম এমন একটা পিচ যেখানে বল সবচেয়ে বেশি ঘুরেছে। নর্ম্যাল বার্মিংহ্যাম পিচে ওরা ভারতকে কোনও ভাবেই হারাতে পারবে না। ইংল্যান্ডকে ফাইনালে জিততে হলে সবুজ উইকেট তৈরি করতে হবে। তা হলে যদি ওরা ম্যাচে ফিরে আসতে পারে। আর যদি অ্যান্ডারসন ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে। কার্ডিফে ভারতের প্রাধান্য এত বেশি যে আজকেও কার্ডিফের এই পিচে পারত কি না সন্দেহ। ভারতকে ফাইনালে হারতে হলে হতচ্ছাড়া ক্রিকেট খেলতে হবে।
ফাইনালের দিন টিমের কী করণীয়: জাস্ট এই ভাবে খেলা। ফাইনালকে বাড়তি কিছু মনে না করা। টিমে অনেক নতুন ছেলে আছে যারা কখনও ফাইনাল খেলেনি। তাদের মনে করারই দরকার নেই যে ফাইনাল খেলছে। আর ধোনি অনেক আরাম করেছে। টুর্নামেন্টে ব্যাটই আসেনি ওর। অথচ ও ওয়ান ডে ক্রিকেটে বেস্ট ব্যাটসম্যান। কে বলতে পারে ফাইনালে ও একটু হাতের সুখ করে নেবে না?
|
সাক্ষাৎকার শেষ করে বেরিয়ে যাওয়ার মুখে সৌরভ বললেন, আমাদের বাংলায় একটা কথা আছে।
সব ভাল যার শেষ ভাল। ফাইনালটা জিতে সেই প্রবাদটাকে যেন ধোনিরা সত্যি করে।
|
ধোনি উবাচ |
• স্ক্রিপ্টটা দারুণ। টস জেতা। বোলারদের শুরুটা ভাল করা। শ্রীলঙ্কার দুর্ভাগ্য, দিলশান চোট পেয়ে মাঠের বাইরে চলে গেল। আমরা সেই সুযোগটা নিয়েছি। মাঝের ওভারেও বোলাররা দারুণ বল করেছে। বিশেষ করে স্পিনাররা।
• একটা দলের কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হল, ভাল মানের বোলার থাকাটা। এই ম্যাচেও আমাদের বোলাররা যেটা দেখিয়েছে। তবে এখনও কয়েকটা আরও উন্নতি করার মতো জায়গা রয়েছে।
• ভুবনেশের ৭-৮ ওভার হয়ে গিয়েছিল। ডেথ ওভারে ওর কয়েকটা ওভার হাতে রাখতে হত। স্পিনারদেরও। আমি আর বিরাট ছাড়া অন্য কোনও বিকল্প ছিল না। দীনেশ কিপারের দায়িত্বটা সামলাতে পারবে মাথায় রেখে ভাবলাম এক ওভার নিজে চেষ্টা করে দেখা যাক। যখন সব ঠিকঠাক হল, আরও কয়েকটা ওভার চালালাম।
• রায়না সব জায়গাতেই ভাল ফিল্ডিং করে। শুধু ও-ই কেন, দলে আরও ভাল ফিল্ডার রয়েছে। যেটা আমাদের শক্তি।
• চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে সব দলই যে কোনও দলকে হারানোর ক্ষমতা রাখে। ইংল্যান্ডও ব্যতিক্রম নয়। তবে গত দু’বছরে আমরা বেশ কয়েকবার পরস্পরের বিরুদ্ধে খেলেছি। তাই ইংল্যান্ডের খুঁটিনাটি আমরা জানি। |
|
|