লালকৃষ্ণ আডবাণীর ক্ষোভ প্রশমনে এ বারে উদ্যোগী হলেন সরসঙ্ঘচালক মোহন ভাগবত। তবে আগের মতো দলের রাশ যে আর আডবাণীর হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে না, তা-ও স্পষ্ট করে দিয়েছেন তিনি।
গোয়ায় কর্মসমিতির বৈঠকে নরেন্দ্র মোদীর উত্থানের পরেই আডবাণীর ইস্তফা-নাটক আলোড়ন ফেলে দেয় বিজেপিতে। আজ দিল্লিতে আরএসএস দফতরে গিয়ে ভাগবতের সঙ্গে এক ঘণ্টারও বেশি বৈঠক করেন তিনি। যাবতীয় অসন্তোষের কথা জানান আরএসএস-প্রধানকে। আডবাণীর উদ্বেগ দূর করার প্রতিশ্রুতি দেন ভাগবত। কিন্তু সম্পর্ক মেরামতির প্রক্রিয়া শুরু করলেও আডবাণীর কথামতো দলের সব কিছু বদলের প্রতিশ্রুতি দেননি ভাগবত। মোদীকে প্রচার কমিটির দায়িত্ব থেকে সরানো হবে, এমন কথাও বলেননি।
আরএসএসের এক নেতা জানান, “অনেক দিন ধরেই আডবাণীর সঙ্গে সঙ্ঘের দূরত্ব তৈরি হচ্ছিল। ক্ষত মেরামতির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। সেই সঙ্গে তাঁর ইস্তফার চিঠি প্রকাশ্যে আসায় যে দলের ভাবমূর্তিতে আঁচড় পড়েছে, সে কথাও তাঁকে জানানো হয়েছে।”
কিন্তু সঙ্ঘ-প্রধানের কাছে আডবাণী নিজের ক্ষোভ উগরে দেওয়ায় এ বারে তার কিছু নিদান হবে বলে মনে করছেন তাঁর অনুগত নেতারা। তাঁদের আশা, সঙ্ঘ নেতা সুরেশ সোনি যে ভাবে রাজনাথ সিংহ, নরেন্দ্র মোদী, অরুণ জেটলির সঙ্গে অক্ষ তৈরি করেছেন, তার বদল হবে। জুলাইয়েই সরিয়ে দেওয়া হতে পারে সোনিকে। পরিবর্তে দত্তাত্রেয় হোসাবোলের মতো কারওকে সেই পদে নিয়ে আসা হতে পারে। সেটি হলেই রাজনাথের প্রভাব বিজেপিতে লঘু হবে। আডবাণীদের মতো প্রবীণ ও অভিজ্ঞ নেতারাও সম্মান পাবেন। নাগপুরে আডবাণীর সঙ্গে ভাগবতের আরও একটি বৈঠক হবে শীঘ্রই।
বিজেপি সূত্রের মতে, আডবাণী জানিয়েছেন, ব্যক্তিগত ভাবে তিনি মোদীর বিরোধী নন। কিন্তু আলোচনা ছাড়াই একতরফা ঘোষণা, প্রবীণদের সম্মান না দেওয়া, ঔদ্ধত্য প্রকাশ করা এ সব নতুন সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে বিজেপিতে। আডবাণীর সাফ কথা, মোদীকে সামনে রেখে দল যদি দু’শোর বেশি আসন নিয়ে আসতে পারে, তা হলে কিছু বলার নেই। কিন্তু যদি তা না হয়, তা হলে আরও শরিক প্রয়োজন। শরিকদের কাছে গ্রহণযোগ্য একটি মুখও দরকার। অথচ বিজেপি এখন এনডিএ-র বিস্তারের কথা না ভেবে এমন পথে হাঁটছে, যার ফলে জেডিইউ-এর মতো বিশ্বস্ত শরিকও জোট ছেড়ে গিয়েছে।
আরএসএস নেতৃত্ব বলছেন, আডবাণীর অসন্তোষের পিছনে যে সব যুক্তি রয়েছে, তা যতটা সম্ভব মানা হবে। তার বেশি নয়। আডবাণীর সহযোগী সুধীন্দ্র কুলকার্নি সম্প্রতি তাঁর একটি নিবন্ধে মোদীকে ‘একনায়ক’, রাজনাথকে ‘শেয়াল’ বলে বর্ণনা করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী পদের জন্য আডবাণীই যে শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি, সে কথাও বুঝিয়েছেন তিনি। এ ধরনের প্রচার যে দলকে আরও বেগ দিচ্ছে, সেই বিষয়টিও দলের প্রবীণ নেতাকে ভাবতে হবে। যদিও আডবাণী জানিয়েছেন, এই লেখাকে তিনি সমর্থন করেন না।
কিন্তু দলের এই পরিস্থিতি নিয়ে সঙ্ঘের মনোভাব আজ আরও স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে আডবাণীর একদা ঘনিষ্ঠ বেঙ্কাইয়া নায়ডুর সাংবাদিক সম্মেলনে। আজ কুলকার্নি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “তিনি বিজেপির কোনও পদেও নেই, দলের সদস্যও নন। আমরা তাঁর সঙ্গে একমতও নই।” এখানেই থেমে থাকেননি বেঙ্কাইয়া। নীতীশের সঙ্গে বিচ্ছেদের পর তিনি আজ সমীক্ষার ফল তুলে দেখান, শুধুমাত্র বিহারেই প্রধানমন্ত্রী পদের জন্য নীতীশের থেকে ঢের বেশি জনপ্রিয় নরেন্দ্র মোদী।
বিজেপি সূত্র বলছে, মোদীর জনপ্রিয়তা যে বাস্তব, সে কথাও ধীরে ধীরে আডবাণীকে মেনে নিতে বলছেন ভাগবত। তবে আডবাণীও যাতে নিজেকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন, তার জন্য বৈঠকের পর নজিরবিহীন ভাবে ভাগবত তাঁর ঘনিষ্ঠ নেতা মনমোহন বৈদ্যকে দিয়ে একটি বিবৃতি প্রকাশ করান। তাতে বলা হয়েছে, “খোলামেলা আলোচনায় আডবাণী নানা বিষয় উত্থাপন করেন। উপযুক্ত সময়ে এ নিয়ে আলোচনা হবে।”
|