এক পলকে একটু দেখা! আর তাতেই কেল্লা ফতে। কয়েক মিনিটের মধ্যেই যে কোনও ধরনের তালা খুলে ফেলতে পারত শেখ শাহিদ। চুরিটা শুধু সময়ের অপেক্ষা।
মনে হতে পারে, শাহিদ কোনও বিখ্যাত লেখকের গোয়েন্দা গল্পের ভিলেন কিংবা বলিউডি সিনেমার নায়ক। বাস্তবে শেখ শাহিদ গার্ডেনরিচের এক সম্পন্ন পরিবারের সন্তান। পুলিশ বলছে, ভদ্র পরিবারের বিপথগামী ছেলে শাহিদ আদতে বেনিয়াপুকুরে একাধিক চুরিতে অভিযুক্ত। দিন দুই আগে তাকে গ্রেফতার করার পরে জেরায় এ কথা জেনেছেন তদন্তকারীরা। তাকে জেরা করে ধরা হয়েছে আরও এক অভিযুক্তকে। মিলেছে প্রায় ৪ লক্ষ টাকার গয়নাও।
পুলিশ সূত্রের খবর, গত কয়েক মাস ধরে বেনিয়াপুকুর এলাকায় ভরদুপুরে একের পর এক বাড়িতে চুরি হচ্ছিল। তদন্তে দেখা যায়, সব ঘটনাই ঘটেছে বহুতলে ও বাসিন্দাদের অনুপস্থিতিতে। চুরির ঘটনা সামাল দিতে প্রায় নাজেহাল হয়ে যাচ্ছিলেন বেনিয়াপুকুর থানার অফিসারেরা। পুলিশ সূত্রের খবর, ১৫ জুন ওই এলাকায় জাননগর রোডের একটি বাড়িতে চুরি হয়। তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, ঘটনার আগে-পরে দুই সন্দেহভাজন যুবককে ওই এলাকায় ঘুরতে দেখা গিয়েছে। এর পরেই বেনিয়াপুকুর থানার দুই সাব-ইনস্পেক্টর সুব্রত পাল এবং গৌতম দাসকে তদন্তের ভার দেওয়া হয়।
এক পুলিশকর্তা জানান, তদন্তে নেমে সোর্স মারফৎ শাহিদকে গ্রেফতার করা হয়। তার সূত্র ধরেই ধরা পড়ে বেনিয়াপুকুর এলাকার এক অটোচালক সাব্বির আলি ওরফে সুড্ডু। পুলিশের দাবি, শাহিদ ও তার দলবলের হয়ে ‘ইনফর্মার’-এর কাজ করত সুড্ডু। এই ঘটনায় তপসিয়ার দারাপাড়ার এক যুবক-সহ আরও কয়েক জনকে খুঁজছে পুলিশ। কী ভাবে চুরি করত শাহিদ ও তার শাগরেদরা? পুলিশ সূত্রের খবর, চুরি করার জন্য চার জনের একটি দল নিয়ে এলাকায় ঢুকত শাহিদ। দু’জন বহুতলের বাইরে দাঁড়িয়ে নজরদারি চালাত। শাহিদ এবং এক সঙ্গী ঢুকে যেত বহুতলে। এর পরে বন্ধ কোনও ফ্ল্যাটে গিয়ে এক পলকে তালা দেখেই চাবির ধরন চিনে ফেলত সে। তার পরে ‘মাস্টার কী’-র গোছা থেকে এক বারে ঠিক চাবিটা বার করে দরজা খুলে ভিতরে ঢুকত তারা। একই ভাবে ঘরের ভিতরে আলমারির তালা খুলে টাকা-গয়না হাতিয়ে ফ্ল্যাট থেকে বেরিয়ে যেত শাহিদ ও তার সঙ্গী। নীচে নেমে অপেক্ষারত সঙ্গীদের দিয়ে মালপত্র পাচার করে ধীরে-সুস্থে এলাকা ছাড়ত শাহিদ। লালবাজারের এক কর্তা বলেন, “শাহিদের কাছ থেকে ৩০-৩৫টি চাবির একটি গোছা মিলেছে।”
শাহিদকে প্রাথমিক জেরা করে পুলিশ জানিয়েছে, সে ওই এলাকার অন্তত ৬টি চুরির ঘটনায় মূল অভিযুক্ত। গয়নাগুলি সে রবীন্দ্রনগরের এক স্বর্ণ ব্যবসায়ীকে বিক্রি করত। সেখান থেকে চুরি যাওয়া গয়নাগুলি উদ্ধার করেছেন তদন্তকারীরা। |