মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে সহবাসের অভিযোগে জেল খাটার পরে শ্লীলতাহানির অভিযোগে ফের জেলে গিয়েছে এক যুবক। এখন তার শাগরেদরা প্রকাশ্য রাস্তায় অভিযোগকারিণী ও তাঁর মেয়েকে ‘তুলে নিয়ে যাওয়া’র বেপরোয়া হুমকি দিচ্ছে। নিউ টাউন থানায় জমা পড়েছে এমনই অভিযোগ।
অভিযোগকারিণীর বক্তব্য, তাঁর মেয়ে স্কুলে যাওয়ার পথে উড়ে আসে বাংলা-হিন্দি মিশিয়ে কটূক্তি। ১৪ বছরের মেয়েটি প্রথমে বুঝতেই পারেনি যে ওই কটূক্তি তার উদ্দেশ্যেই করা। পরদিন ফের একই ঘটনা, এ বারে অন্য লোক। সে দিন অবশ্য আর কটূক্তি নয়, সোজাসুজি হুমকি দেওয়া হয় তাকে। বলা হয়, ‘তোর মা বেশি বাড়াবাড়ি করছে। এখনই না থামলে তোকে তুলে নিয়ে যাব।’
কয়েক দিন এমন চলার পরে মেয়েটি মাকে ঘটনাটি জানায়। এর পরে আর মেয়েকে একা ছাড়েননি মা। কিন্তু মেয়েকে সঙ্গে করে স্কুলে নিয়ে যাওয়ার পথে মা-ও টের পেলেন হুমকির চড়া সুর। সে দিন আবার অন্য লোক। তাঁর অভিযোগ, মামলা না তুললে মেয়ের ‘ক্ষতি’ হয়ে যাবে বলে হুমকি দেওয়া হয়। আতঙ্কে স্কুল যাওয়া দূর অস্ত্, এখন বাড়ির বাইরে বেরোতেই ভয় পাচ্ছেন মা ও চোদ্দো বছরের মেয়ে।
পুলিশের কাছে ওই কিশোরীর মায়ের অভিযোগ, হুমকির ফলে আতঙ্কে সিঁটিয়ে রয়েছে তাঁর পরিবার। কী ভাবে মেয়েকে স্কুলে পাঠাবেন অথবা বাড়ি থেকে বেরোবেন, তাই ভেবে পাচ্ছেন না তিনি। পুলিশকর্তারা জানিয়েছেন, ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। ওই পরিবারের নিরাপত্তার ব্যবস্থাও করা হচ্ছে।
কেন ওই মা-মেয়েকে বারবার হুমকি দেওয়া হচ্ছে?
পুলিশ সূত্রের খবর, বছর চারেক আগে ওই মহিলা কেষ্টপুরের এক যুবকের বিরুদ্ধে চাকরি দেওয়ার মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে সহবাসের অভিযোগ এনেছিলেন। ওই যুবককে তখন গ্রেফতার করে পুলিশ। আদালতে মামলা ওঠার পরে ওই যুবক জামিন পায়। মহিলার অভিযোগ, তার পর থেকে মামলা তুলে নেওয়ার জন্য ওই যুবকের পরিচিতেরা তাঁর উপরে নানা ভাবে চাপ দিতে থাকে। প্রথম দিকে লাগাতার অশ্লীল গালিগালাজ ও হুমকি দেওয়া হয়। পরে তাঁকে বলা হয় যে, মামলাটি তুলে নিলে অনেক টাকা দেওয়া হবে। ধৃত যুবক জামিন পাওয়ার পরে মহিলার উপর চাপ বাড়তে থাকে বলে অভিযোগ।
পুলিশ সূত্রে খবর, অভিযুক্ত ওই যুবক সল্টলেকের একটি তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থায় কাজ করত। আগে সে কেষ্টপুরে ভাড়া থাকত। এই ঘটনার পরে কলকাতার অন্য কোনও জায়গায় ভাড়া নিয়ে থাকত বলে জানা গিয়েছে। তবে কেষ্টপুরে তার নিয়মিত যোগাযোগ ছিল বলে তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন।
এ ভাবেই চলছিল। মাসখানেক আগে সল্টলেকে ওই যুবক ফের তাঁর শ্লীলতাহানি করে বলে মহিলার অভিযোগ। পুলিশের কাছে এই অভিযোগ দায়ের করার পরে ফের ওই যুবককে গ্রেফতার করা হয়। এখনও ওই যুবক জেল হেফাজতে রয়েছে। ওই মহিলার অভিযোগ, দ্বিতীয় বার ওই যুবককে গ্রেফতারের পর থেকে এলাকায় প্রভাবশালী ওই যুবকের সঙ্গীরাই তাঁর মেয়েকে হুমকি দিচ্ছে। পাশাপাশি, মেয়েকে একদল যুবক লাগাতার কুপ্রস্তাব দিচ্ছে। মানসিক ভাবে তাঁর মেয়ে ভেঙে পড়েছে বলে মহিলার অভিযোগ। অভিযোগ, তাঁর পরিবারের উপর রীতিমতো নজরদারি চালানো হচ্ছে। শুধু মেয়ের স্কুলে যাওয়ার পথেই নয়, বাড়ি থেকে বেরোলেই তাঁদের পিছু নিচ্ছে দুষ্কৃতীরা।
বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেটের এডিসিপি সন্তোষ নিম্বলকর বৃহস্পতিবার বলেন, “ওই মহিলা আজই আমার কাছে এসেছিলেন। আমি বাগুইআটি থানার পুলিশকে ওই পরিবারের নিরাপত্তার বিষয়টি দেখতে বলেছি। কেউ কোনও ভাবে ওঁদের বিরক্ত করলে উনি যাতে দ্রুত আমাদের তা জানাতে পারেন, সে জন্য আমি আমার ফোন নম্বরও ওঁকে দিয়ে দিয়েছি।” |