প্রস্তুত নয় পুরসভা, ভেসে দেখাল শহর
র্ষার আগে প্রস্তুত নয় পুরসভার নিকাশি ব্যবস্থা। পাম্প বসানোর কাজ শেষ হয়নি বালিগঞ্জ পাম্পিং স্টেশনে। আর সে কারণেই বৃহস্পতিবার ঘণ্টা খানেকের মুষলধারে বৃষ্টিতে কার্যত থমকে গেল দক্ষিণ কলকাতা!
কোথাও হাঁটু জল ঠেলে বাড়ি ফিরতে হল পড়ুয়াদের, কোথাও বা ১৫ মিনিটের পথ পেরোতে লেগে গেল এক ঘণ্টা। কিন্তু বর্ষার আগে পাম্প বসানোর কাজ শেষ করেনি কেন পুর-প্রশাসন, স্বভাবতই প্রশ্ন উঠেছে তা নিয়ে। সারা বছর তবে কী করল নিকাশি দফতর? মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় বলেন, “আজ বালিগঞ্জ এলাকায় ১১৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। সব পাম্প চালু থাকলেও জল জমতই।”
ট্রাফিক পুলিশ জানায়, বেলা সওয়া এগারোটা থেকে সাড়ে বারোটা পর্যন্ত বৃষ্টিতে দক্ষিণ কলকাতার রাসবিহারী অ্যাভিনিউ, সুইনহো স্ট্রিট, গড়িয়াহাট, বালিগঞ্জ ফাঁড়ি, সাদার্ন অ্যাভিনিউ, বর্ধমান রোড, পার্ক সার্কাস কানেক্টর, থিয়েটার রোড, হরিশ মুখার্জি স্ট্রিট প্রভৃতি এলাকায় জল জমে যায়। প্রায় থমকে যায় গাড়ির গতি। একই অভিজ্ঞতা বেহালা-ঠাকুরপুকুর এলাকার বাসিন্দাদেরও। জেমস্ লং সরণি, ডায়মন্ড হারবার রোড, শীলপাড়ার মতো কোনও কোনও অঞ্চল হাঁটু বা গোড়ালি পর্যন্ত জলে ডোবা ছিল।
...যে পথ ভেসে গেছে
বর্ষণের পরে নিউ আলিপুরের রাস্তা। বৃহস্পতিবার। ছবি: অরুণ লোধ
পুরসভার নিকাশি দফতরের এক অফিসার জানান, বালিগঞ্জ পাম্পিং স্টেশনের পাম্প মেশিন চালু না থাকায় জমা জল বেরোতে পারেনি। পুরসভা সূত্রের খবর, ওই স্টেশনে তিনটি পাম্প থাকার কথা। পুরনো পাম্প অকেজো থাকায় সেখানে নতুন করে পাম্প বসানো শুরু করেছে নিকাশি দফতর। কিন্তু সেই কাজ এখনও শেষ হয়নি। যদিও মেয়র শোভনবাবু বলেন, “দিন কয়েক আগেই সেখানে দু’টি পাম্প বসানো হয়েছে। তবে আর্বজনা ধরে রাখার জালি বসানোর কাজ এখনও বাকি।” অন্য একটি পাম্প জুলাই মাসের শেষে বসানো হবে বলে জানিয়েছে নিকাশি দফতর। পুরসভা সূত্রের খবর, রাসবিহারী এলাকায় জল জমার খবর পেয়ে মেয়র নিজেই সেখানে পরিদর্শনে যান। শোভনবাবু বলেন, “বালিগঞ্জ পাম্পিং স্টেশনেও গিয়েছিলাম। বাকি কাজ দ্রুত করার নির্দেশ দিয়েছি।”
বৃহস্পতিবার, দেশপ্রিয় পার্কে। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
এ দিকে, দক্ষিণ কলকাতার বিস্তীর্ণ এলাকা জলে ডুবে থাকায় নাকাল হতে হয় শহরবাসীদের। বেলা সাড়ে এগারোটা নাগাদ কসবার বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন সুকান্ত ঘোষ। বাসে চেপে কালীঘাট মেট্রোয় পৌঁছতে পৌঁছতে সাড়ে বারোটা বেজে যায়। তিনি বলেন, “অন্য দিন এই পথ আসতে পনেরো-বিশ মিনিটের বেশি লাগে না। এ দিন রাস্তায় জল জমে যাওয়ায় বিপত্তি।” পুরসভার এক পদস্থ অফিসারের মতে, “শুধু আজ নয়, আগামী দিনেও ভারী বৃষ্টি হলে ফের ওই এলাকায় এমন হালই হবে।”
বর্ষার আগে কেন ওই পাম্প বসানোর কাজ শুরু হয়নি?
এই প্রশ্নের অবশ্য কোনও উত্তর দিতে চাননি পুরসভার নিকাশি দফতরের অফিসারেরা। তবে তাঁরা জানান, রাতের মধ্যেই রাসবিহারী এলাকার জমা জল সরে যাবে।
জমা জলে পা ছুঁইয়ে। বৃহস্পতিবার দেশপ্রিয় পার্কে। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক।
বৃষ্টিতে জল জমা ছাড়াও এ দিন শহরের কয়েকটি জায়গায় ৬টি গাছ ভেঙে পড়ার ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে দু’টি আলিপুর চিড়িয়াখানার সামনে, একটি আলিপুরের অশোক রোডে, সদানন্দরোড ও মহিম হালদার স্ট্রিটের মোড় এবং মেনকা সিনেমা হলের কাছে আব্দুল রসুল রোডেও গাছ ভেঙে পড়ে। তাতে যান চলাচল ব্যাহত হয়। যদিও পুরসভার বিপর্যয় মোকাবিলা কর্মীরা ইলেকট্রিক করাত নিয়ে তা কেটে দ্রুত রাস্তা পরিষ্কার করে দেয়।
আলিপুর আবহাওয়া দফতর সূত্রের খবর, ঘণ্টা খানেকের মধ্যে শহরে প্রায় ১০০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। সবচেয়ে বেশি বর্ষণ হয় কালীঘাট এলাকায়, ১১৫ মিলিমিটার। মোমিনপুরে ৮৬, বালিগঞ্জে ৭৮ এবং চেতলায় ৮৪ মিলিমিটার। এর জন্য দায়ী মৌসুমি অক্ষরেখার স্থানবদল। আবহাওয়া অফিসের কর্তারা জানান, বুধবার রাত থেকেই মৌসুমি অক্ষরেখা উত্তর-পূর্বাঞ্চল থেকে সরে এসে দক্ষিণবঙ্গের উপর দিয়ে বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে।
আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গোকুলচন্দ্র দেবনাথ বলেন, মৌসুমি অক্ষরেখার ফলেই বঙ্গোপসাগর থেকে জলীয় বাষ্প পরিমণ্ডলে ঢুকছে। উল্টো দিকে, উত্তর ভারত থেকে বয়ে আসছে ঠান্ডা হাওয়া। ঠান্ডা হাওয়া ও জলীয় বাষ্পের মিলনে তৈরি হচ্ছে উল্লম্ব মেঘ এবং তা থেকেই বৃষ্টি হচ্ছে। ঘটনাচক্রে, বুধবার বাঁকুড়াতেও এমন উল্লম্ব মেঘ থেকে অতি অল্প সময়ে প্রায় ১৩০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছিল।
আলিপুর আবহাওয়া দফতর সূত্রের খবর, এ দিন শহরে উল্লম্ব মেঘের উচ্চতা ছিল ১০-১২ কিলোমিটার। আবহবিদেরা জানান, মৌসুমি বায়ু দুর্বল থাকলে এমন পরিস্থিতি দেখা যায়। বর্তমানে গোটা দেশেই মৌসুমি বায়ু দুর্বল রয়েছে বলে আবহাওয়া দফতরের এক কর্তা জানান।
আবহবিদদের মতে, উল্লম্ব মেঘ থেকে এমন বৃষ্টি খুব বড় এলাকা নিয়ে হয় না। এ দিনও তেমনই ঘটেছে। শহরের মধ্য ও দক্ষিণ অংশে জোরালো বৃষ্টি হলেও উত্তর ও পূর্ব কলকাতায় তেমন বৃষ্টি হয়নি বলেই জানান আবহাওয়া দফতরের কর্তারা। ট্রাফিক পুলিশ সূত্রেরও দাবি, উত্তর ও পূর্ব কলকাতায় তেমন প্রভাব পড়েনি।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.