সারদা গোষ্ঠীর আর্থিক কেলেঙ্কারির মামলায় সংস্থার কর্ণধার সুদীপ্ত সেন এবং অন্যতম ডিরেক্টর দেবযানী মুখোপাধ্যায় দু’জনেই ছিলেন জেল হেফাজতে। বৃহস্পতিবার দু’জনকেই ফের পুলিশি হেফাজতে পাঠিয়ে দিল আদালত। বিচারকের নির্দেশ, জেরার সময় দু’জনেরই আইনজীবীদের পাশে থাকতে দিতে হবে।
এ দিন দুপুরে কলকাতার হেস্টিংস থানার পুলিশ প্রতারণার দু’টি পৃথক মামলায় ওই দুই অভিযুক্তকে ব্যাঙ্কশাল আদালতে তোলে এবং তাঁদের নিজেদের হেফাজতে নেওয়ার আবেদন জানায়। চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট বিশ্বরূপ শেঠ একটি মামলায় তাঁদের ২৫ জুন পর্যন্ত পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন। প্রতারণার অন্য মামলায় ওই দুই অভিযুক্তকে ২ জুলাই পর্যন্ত জেল হেফাজতে রাখার দিয়েছেন বিচারক।
কলকাতা পুলিশ সূত্রের খবর, চলতি বছরের মে মাসে রামচন্দ্র শর্মা নামে এক ব্যক্তি হেস্টিংস থানায় অভিযোগ করেন, তিনি সারদা ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস সংস্থায় ৪২ হাজার টাকা বিনিয়োগ করেছিলেন। বিনিয়োগের শংসাপত্রে সুদীপ্তের সই রয়েছে। টাকা ফেরতের আবেদন জানিয়ে তিনি সংস্থার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। কিন্তু ওই সংস্থা তাঁকে টাকা ফেরত দেয়নি।
পুলিশ জানায়, সঞ্জীবকুমার দাস নামে অন্য এক ব্যক্তিও মে মাসে হেস্টিংস থানায় অভিযোগ দায়ের করে জানান, সারদা রিয়েলটি ইন্ডিয়া প্রাইভেট লিমিটেড সংস্থায় প্রতি মাসে তিনি ৫০০ টাকা বিনিয়োগ করতেন। ২৮ মাস ধরে ওই পরিমাণ টাকা বিনিয়োগ করে তিনি ওই সংস্থায় ১৪ হাজার টাকা জমিয়েছিলেন। কিন্তু বিনিয়োগের টাকা ফেরত চেয়ে আবেদন জানানো সত্ত্বেও তাঁকে তা ফেরত দেওয়া হয়নি। |
সরকারি আইনজীবী বাসুদেব দত্ত আদালতে জানান, যে-দু’টি সংস্থায় অসংখ্য আমানতকারী বিনিয়োগ করেছেন, সেগুলির কর্ণধার সুদীপ্ত সেন। অভিযুক্ত দেবযানী একটি সংস্থার অন্যতম ডিরেক্টর। দু’জনের বিরুদ্ধেই প্রতারণার অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে। সেই কারণে অভিযুক্তদের হেফাজতে নেওয়ার প্রয়োজন আছে।
সুদীপ্তের আইনজীবী সমীর দাস আদালতে জানান, সারদা গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ওঠা যাবতীয় অভিযোগ প্রাক্তন বিচারপতি শ্যামল সেনের বিচার বিভাগীয় কমিশনে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আমানতকারীদের অধিকাংশই সেই কমিশনে গিয়ে নিজেদের বক্তব্য পেশ করছেন। এই অবস্থায় অভিযোগকারীরা পৃথক ভাবে কেন বিভিন্ন থানায় অভিযোগ জানাচ্ছেন, তা তিনি বুঝতে পারছেন না। তিনি বুঝতে পারছেন না, সুদীপ্তকে বারবার নিজেদের হেফাজতে নিয়ে পুলিশ আর কী নতুন তথ্যপ্রমাণ জোগাড় করবে! আরও জানান, অভিযুক্ত সুদীপ্ত অসুস্থ। আলিপুর সেন্ট্রাল জেলের হাসপাতাল থেকে সরাসরি আদালতে হাজির হন। তাঁকে হেফাজতে না-পাঠিয়ে তাঁর উপযুক্ত চিকিৎসার বন্দোবস্ত করা হোক।
দেবযানীর আইনজীবী অনির্বাণ গুহঠাকুরতাও আদালতে আর্জি জানান, পুলিশি জেরার সময় তাঁকে যেন তাঁর মক্কেলের পাশে থাকতে দেওয়া হয়। বিচারক ওই আর্জি মেনে পুলিশকে নির্দেশ দেন, দুই অভিযুক্তকেই আইনজীবীর সামনে জেরা করতে হবে। ১৪ হাজার টাকা প্রতারণার মামলায় অভিযুক্তদের জেল হেফাজতে পাঠানো হচ্ছে। আর ৪২ হাজার টাকা প্রতারণার মামলায় ছ’দিন হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে। |