জল সংরক্ষণ নামেই, চার বছর বন্ধ বৃষ্টিবাড়ি
বৃষ্টির জল সংরক্ষণ করে জলসঙ্কট মেটানোর চেষ্টায় বছর চারেক আগে সালানপুরে বৃষ্টিবাড়ি বানিয়েছিল সরকার। ব্লকের বাসিন্দাদের হাতেকলমে জল সংরক্ষণ শেখানোর জন্যই তৈরি হয়েছিল এই প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। কিন্তু সেখানেই ইতি। অভিযোগ, বাসিন্দাদের কেউই প্রশিক্ষিত হয়ে নিজের বাড়িতে বৃষ্টির জল সংরক্ষণের ব্যবস্থা করতে পারেন নি। এলাকাবাসীরা জানান, পঞ্চায়েত সমিতির উদ্যোগের অভাবেই ভেস্তে গিয়েছে প্রশিক্ষণ প্রক্রিয়া। ফলে পড়েই রয়েছে ১৫ লক্ষ টাকা ব্যয়ে নির্মিত ওই বৃষ্টিবাড়ি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র।
রুখুসুখু সালানপুরের বিভিন্ন প্রান্তে জল সঙ্কট এমনিই প্রবল। সাধারণ নাগরিক থেকে প্রশাসনিক আধিকারিক সবাই সমস্যার কথাও জানেন। গরমে তা আরও কয়েকগুণ বেড়ে যায়। ভূগর্ভস্থ জলের স্তর নীচে নেমে যায়, পুকুর শুকিয়ে যায়, এলাকার অধিকাংশ কুয়োতেও জল থাকে না। এর সঙ্গে ব্লকের অনেক জায়গায় জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের জলের পাইপ লাইন পৌঁছয়নি। কোথাও আবার পাইপ লাইন থাকলেও বছরের পর বছর জল পড়ে না। ফলে কার্যত নির্জলা দিন কাটাতে হয় বাসিন্দাদের। খনি অঞ্চলের অনেক জায়গাতেই এই সমস্যা দেখা গেলেও সালানপুর ব্লকে ভূগর্ভস্থ জলের স্তর বেশি নীচে নামার কারণ এখানে বেশিরভাগ জায়গায় কয়লার স্তর আছে। ফলে সে সব অঞ্চলে ভূগর্ভস্থ জলের চিহ্নও নেই। আবার অনেক জায়গায় ভূগর্ভস্থ কয়লা কেটে নেওয়ায় মাটির তলা কার্যত ফাঁপা হয়ে গিয়েছে। সেখানেও জলের স্তর মেলে না।

সালানপুরে তালাবন্ধ বৃষ্টিবাড়ি। ছবি: শৈলেন সরকার।
প্রশাসনের তরফে একটি একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে, ছোটনাগপুর মালভূমির শেষপ্রান্তে অবস্থিত সালানপুর ব্লকে মাটির জল শোষণের ক্ষমতা খুব কম। ফলে যা বৃষ্টিপাত হয় তার ৭০ শতাংশই মাটির উপর দিয়ে বয়ে যায়। ভূগর্ভে পৌঁছায় না। ফলে মাটির গভীরে জলস্তর প্রায় থাকেই না। এই পরিস্থিতিতে ব্লকের জলসঙ্কট মেটানোর জন্য রাজ্য সরকার বৃষ্টির জল সংরক্ষণে জোর দেয়। ২০০৯ সালে তৎকালীন রাজ্য সরকার বর্ধমান জেলায় প্রথম এই বৃষ্টিবাড়ি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটি তৈরী করে। দিল্লির সেন্টার ফর সায়েন্স অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট (সিএসই) সংস্থার কারিগরি সহায়তায় কেন্দ্রটি তৈরী হয়। রাজ্য সরকারের ডিস্ট্রিক্ট রুরাল ডেভলপমেন্ট সেল এর জন্য প্রায় ১৫ লক্ষ টাকা খরচ করে।
কেন্দ্রটি তৈরির সময় ঠিক হয়, এটি সালানপুর পঞ্চায়েত সমিতির হাতে তুলে দেওয়া হবে। প্রতিদিন নিয়ম করে যে কোনও একটি পঞ্চায়েত এলাকার বাসিন্দাদের আনা হবে এবং তাঁদের হাতেকলমে বৃষ্টির জল সংরক্ষণের পদ্ধতির প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। প্রশিক্ষণের শেষে ওই বাসিন্দারা বাড়িতে এই পদ্ধতি প্রয়োগ করে বৃষ্টির জল সংরক্ষণ করতে পারবেন। বিশষত, গরমকালে তাঁরা এই জল ব্যবহার করে সঙ্কট মেটাতে পারবেন। কিন্তু বাসিন্দাদের দাবি, কাজের কাজ কিছুই হয়নি। জেমারি পঞ্চায়েতের বাসিন্দা কৃষ্ণেন্দু মাজি বা দেন্দুয়া পঞ্চায়েতের হরিদেব চট্টোপাধ্যায়দের অভিযোগ, কোনও দিনই তাঁদের পঞ্চায়েত এলাকা থেকে কোনও বাসিন্দাকে বৃষ্টিবাড়ি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ডাকা হয়নি। প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়নি। রূপনারায়ণপুর পঞ্চায়েতের বাসিন্দা সুশীল সরকার বলেন, “ব্লক অফিসে যাওয়া আসার পথে প্রথমে কয়েকদিন কেন্দ্রটি খোলা অবস্থায় দেখেছি। তবে অবশ্য কখনও কাউকে প্রশিক্ষণ নিতে দেখিনি।” তিনি আরও বলেন, “বছর তিনেক ধরে এটা খোলাও থাকে না দেখছি।” এলাকার বাসিন্দারাও জানান, বাড়িটি পাকাপাকি ভাবেই তালা পড়ে গিয়েছে। পঞ্চায়েত সমিতির কাজ নিয়ে বাসিন্দাদের ক্ষোভের কথা কিছুটা মেনে নিয়েছেন সালানপুর পঞ্চায়েত সমিতির কংগ্রেসের সহ-সভাপতি শ্যামল মজুমদার। তিনি বলেন, “প্রশাসনিক গাফিলতি নেই সেকথা বলব না। তবে এলাকার বাসিন্দাদের উৎসাহও যথেষ্ট কম।” শ্যামলবাবুর দাবি, প্রথম প্রথম কেন্দ্রটি খোলা থাকত। প্রশিক্ষকও এসেছেন। কিন্তু যাঁদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে তাঁদের অনুপস্থিতিতেই এই বৃষ্টিবাড়ি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের উদ্দেশ্য জলে গিয়েছে। তবে তাঁর আশ্বাস, এবারের নির্বাচনে সমিতি তাঁদের দখলে এলে এটির যথাযোগ্য ব্যবহার করা হবে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.