বুদবুদ পঞ্চায়েত
উচ্ছেদের পরে মেলেনি সাহায্য, ক্ষোভ
বুদবুদের ডিভিসি ক্যানাল পাড়ের বাসিন্দা প্রফুল্লদেবী। তিন বছর আগে গলসি ১ ব্লকের বুদবুদ পঞ্চায়েতের জোজিলা লাইন থেকে উচ্ছেদ হয়ে ডিভিসির ক্যানালের পাড়ে চলে এসেছিলেন। আদতে ওড়িশার বহরমপুরের বাসিন্দা। বিবাহিতা মেয়ে ও তিন নাতি নাতনিদের নিয়ে কোনও রকমে দিন গুজরান করেন এখানে। একটাই মাটির ঘর, খড়ের নীচু চাল। ভাঙা কুটিরের থেকেও খারাপ অবস্থা। জানালেন ভোটার কার্ড বা বিপিএল কিছুই নেই তাঁদের। ১০০ দিনের কাজও নেই।
প্রফুল্ল একা নন। তাঁর সঙ্গে রয়েছেন আরও প্রায় ৩০টি উচ্ছিন্ন পরিবার। সেনাবাহিনীর এলাকাতেই থাকতেন তাঁরা। ২০১০ সালে উচ্ছেদ হওয়ার পরে তৃণমূল পরিচালিত বুদবুদ গ্রাম পঞ্চায়েতের সহায়তায় জায়গা পান ডিভিসি ক্যানালের পাশে। কিন্তু ওই পর্যন্তই। তার পর থেকে আর কিছুই এগোয়নি। অথচ, এই উচ্ছিন্ন মানুষদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থার জন্যই তিন বছর আগে সিপিআই ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন সচ্চিদানন্দ সদা। তার জেরে বামফ্রন্ট পরিচালিত পঞ্চায়েতে ২০১০ সালে সংখ্যাগরিষ্ঠতাও পায় তৃণমূল। অথচ তিন বছর পেরোতেই ‘মোহভঙ্গ’ হল তাঁর। বললেন, “যে আশা নিয়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলাম, তা পূরণ হয়নি। যত দিন যাচ্ছে, মনে হচ্ছে, এ তো একই মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ।” তবে তৃণমূলকে আরও একটু সময় দিতে চান তিনি।

কোনও মতে কাটে দিন। ক্যানাল পাড়ে তোলা নিজস্ব চিত্র।
ঘটনার সূত্রপাত ২০১০ সালের এপ্রিলে। দীর্ঘ দিন ধরে সেনাবাহিনীর জায়গায় প্রায় শ’খানেক পরিবার বাস করছিল ওই পঞ্চায়েত এলাকায়। ‘জোজিলা লাইন’ নামেই পরিচিত ছিল সেই জায়গা। সেখান থেকেই পঞ্চায়েতে নির্বাচিত হন সচ্চিদানন্দবাবু। এপ্রিল মাসের শেষে উচ্ছেদ অভিযান চালায় সেনাবাহিনী। অধিকাংশ পরিবার অন্যত্র চলে যেতে পারলেও সচ্চিদানন্দের পরিবার-সহ প্রায় তিরিশটি পরিবার সমস্যায় পড়ে। তাঁদের নিজেদের কোনও জমি ছিল না। কার্যত আশ্রয়হীন হয়ে যান ওঁরা। ওই তিরিশটি পরিবারের তরফে বামফ্রন্ট পরিচালিত পঞ্চায়েতে দরবার করেন সিপিআই সদস্য সচ্চিদানন্দ। কিন্তু তেমন সাড়া পাননি। সেই সময়ে বিরোধী তৃণমূল নেতা কাশীনাথ চট্টোপাধ্যায় সিপিএমের প্রধান ক্ষেত্রনাথ ঘোষের অপসারণ চেয়ে অনাস্থা আনেন। সচ্চিদানন্দবাবুও তৃণমূলের পক্ষ নেন।
ওই বছর ১০ মে আস্থা ভোটে হেরে যান ক্ষেত্রনাথবাবু। তৃণমূল বোর্ড গড়ে। নতুন প্রধান হন কাশীনাথবাবু। সচ্চিদানন্দ পরে প্রকাশ্য সভায় তৃণমূলে যোগ দেন। তৃণমূলের উদ্যোগে আশ্রয়হীন ওই ৩০টি পরিবারকে জাতীয় সড়কের মধ্যে দিয়ে বয়ে যাওয়া ডিভিসি ক্যানাল এর পারে পুনর্বাসন দেওয়া হয়। অস্থায়ী ঘর বানাতে তৃণমূল পরিচালিত ওই পঞ্চায়েতের তরফে সাহায্যও করা হয়েছিল। তাতে সন্তুষ্টও হয়েছিলেন সচ্চিদানন্দ।
কিন্তু ওই টুকুই। তার পরে আর তেমন কিছুই এগোয়নি। উচ্ছিন্ন মানুষ এখনও পাননি তাদের ভোটার কার্ড। বিপিএল কার্ডও এখনও মেলেনি, যাতে অন্তত ১০০ দিনের কাজটুকু পাওয়া যায়।
সচ্চিদানন্দ ও আর এক বাসিন্দা ফ্রান্সিস কুজুরের পরিবারের অবস্থা অবশ্য ‘মন্দের ভাল’। সচ্চিদানন্দ বলেন, “আমাদের দু’জনের বাড়ি তৈরির জন্য তৃণমূল থেকে কিছু আর্থিক সাহায্য করা হয়েছিল। তাই আমাদের বাড়িগুলো তুলনায় ভাল। কিন্তু অন্যদের অবস্থা তো আগের মতোই রয়ে গেল!”
সবার জন্য যে উপযুক্ত ব্যবস্থা করা যায়নি, তা স্বীকার করে নিয়েছেন বুদবুদ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান কাশীনাথবাবু। তিনি বলেন, “সচ্চিদানন্দবাবুর ক্ষোভ সঙ্গত। কিন্তু ওই জমির মালিকানা তো ওঁদের নয়। ওঁরা যাতে সরকারি জমির পাট্টা পান, তার জন্য উদ্যোগী হয়েছি আমরা। সেটা হয়ে গেলেই ‘নিজভূমি, নিজগৃহ’ প্রকল্পে বাড়ির জন্য সংশ্লিষ্ট দফতরে ওই পরিবারগুলির তালিকা পাঠিয়ে দেওয়া হবে। উচ্ছেদ হওয়া কয়েকটি পরিবার সাধুনগরে চলে গিয়েছিলেন। ইতিমধ্যেই ৮টি পরিবারকে ইন্দিরা আবাস যোজনা প্রকল্পে বাড়ি করে দেওয়া হয়েছে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.