কংগ্রেসের ১২ ঘণ্টার বন্ধে বুধবার জলপাইগুড়ির স্বাভাবিক জনজীবন বিপর্যস্ত হয়েছে। সরকারি-বেসরকারি যান বন্ধ থাকা, নানা এলাকায় জাতীয় সড়ক অবরোধে দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে যাত্রীদের। জেলার আলিপুরদুয়ারে দলীয় কর্মী খুন এবং জেলা কংগ্রেস সভাপতি মোহন বসুর উপরে রাজগঞ্জ এলাকায় হামলার প্রতিবাদে এ দিন ১২ ঘণ্টা জলপাইগুড়ি জেলা বন্ধ ডাকে কংগ্রেস।
|
মোহন বসুর সঙ্গে দেখা করতে এসেছেন দীপা দাশমুন্সি। |
কেন্দ্রীয় নগর উন্নয়ন দফতরের প্রতিমন্ত্রী দীপা দাসমুন্সি এ দিন শহরে আসেন। মুহুরিপাড়ায় জেলা কংগ্রেস সভাপতি মোহনবাবুর বাড়িতে গিয়ে তাঁর সঙ্গে দেখা করেন তিনি। দলের কর্মী সমর্থকদের সঙ্গে কথা বলে বন্ধের সম্পর্কে খোঁজ নেন দীপাদেবী। তিনি বলেন, “কংগ্রেস কর্মীর মনোবল ভেঙে দিতেই জেলা সভাপতির উপর হামলা করেছে তৃণমূল। জেলা কংগ্রেস সভাপতিকে হত্যার চেষ্টা হয়েছিল। দক্ষিণবঙ্গে এই রকম সন্ত্রাসের ঘটনা দেখেছি। উত্তরবঙ্গে কখনও দেখিনি। আমাদের দল পাল্টা আক্রমণের পথে যায়নি, বরং গণতান্ত্রিকভাবে প্রতিবাদ করা হচ্ছে।”
অন্য দিকে, একই সময়ে বন্ধের বিরোধিতা করে শিলিগুড়ি পুরসভা সংযোজিত এলাকায় পথে নামেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব। ভক্তিনগর থানার সামনে থেকে সেবক রোডের একটি সিনেমা হল পর্যন্ত প্রায় ৪ কিমি রাস্তায় মিছিলেন নেতৃত্ব দেন গৌতমবাবু। নানা এলাকায় বন্ধ সমর্থকদের পিকেটিং-র জেরে দোকান-বাজার বন্ধ দেখে গৌতমবাবু মিছিল শুরুর পরেই শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনারকে ফোন করে জনজীবন স্বাভাবিক রাখার ব্যবস্থা করতে নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, ‘‘আমরা আগেই পুলিশকে বলেছিলাম, বন্ধের দিন স্বাভাবিক জীবনযাত্রা বজায় রাখার ব্যবস্থা নিতে। যে কোনও দলের ডাকা বন্ধে সরকারের এটাই নীতি। এ দিনে বন্ধকে মানুষ প্রত্যাখ্যান করেছেন।” |
জলপাইগুড়িতে বন্ধের সমর্থনে ছাত্র পরিষদ সমর্থকদের মোটর বাইক মিছিল। |
যদিও উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রীর বিরুদ্ধে শিলিগুড়ি লাগোয়া এলাকায় পুলিশ-প্রশাসনের সাহায্যে জোর করে বন্ধ ভাঙার চেষ্টার অভিযোগ তুলেছে কংগ্রেস। প্রদেশ কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক বিশ্বরঞ্জন সরকার বলেন, “তৃণমূল নেতা তথা মন্ত্রী গৌতম দেব পুলিশ দিয়ে শিলিগুড়ির সেবক রোডে কিছু এলাকায় বন্ধ তুলে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। স্থানীয় মানুষ গৌতমবাবুদের কথায় সাড়া দেয়নি। জেলা জুড়ে বন্ধ সর্বাত্মক ভাবেই সফল হয়েছে।”
জলপাইগুড়ি পুলিশ সুপার অমিত জাভালগি বলেন, “বন্ধে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।” পুলিশ সূত্রের খবর, ভক্তিনগর এলাকা থেকে ১২ জন বন্ধ সমর্থনকারীকে আটক করলেও তাঁদের ব্যক্তিগত জামিনে ছেড়ে দেয়।
এ দিন জেলার সর্বত্রই অধিকাংশ দোকান-বাজার বন্ধ ছিল। সরকারি অফিসেও হাজিরা অন্য দিনের তুলনায় কম ছিল। সরকারি-বেসরকারি বাস চলাচল করেনি। জলপাইগুড়ি শহরের থানামোড় এলাকায় বন্ধ সমর্থকদের হাতে এক চিকিৎসক নিগৃহীত হওয়ার অভিযোগ উঠেছে। সদর হাসপাতালের চিকিৎসক রাহুল ভৌমিক কোতোয়ালি থানায় অভিযোগ দায়ের করে বলেন, ‘‘হাসপাতালে যাওয়ার পথে থানা মোড় এলাকায় কয়েকজন বন্ধ সমর্থক গাড়ি আটকে দেয়। আমাকে কলার ধরে মানিয়ে দেয়। চিকিৎসক পরিচয় দেওয়ার পরেও আমাকে শারীরিক ভাবে নিগ্রহ করা হয়।” |
সুনসান ফালাকাটার রাস্তাঘাট। |
বন্ধের কারণে দুর্ভোগ পোহাতে হয় নিত্যযাত্রী থেকে শুরু করে সাধারণ বাসিন্দাদের। জলপাইগুড়ি শহর সংলগ্ন ৩১-ডি জাতীয় সড়কে কংগ্রেসিদের অবরোধে দুরপাল্লার যাত্রিবাহী বাস আটকে পড়ে। শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়ি সহ ডুয়ার্সের বাস যোগাযোগ বন্ধ থাকায় দুর্ভোগ পোহাতে হয় ব্যবসায়ী ও নিত্যযাত্রীদের। বেশি ভাড়া দিয়ে অ্যাম্বুল্যান্সে নিত্যযাত্রীদের যাতায়াত করতে দেখা গিয়েছে। জলপাইগুড়ি শহরে স্কুল কলেজ প্রতিষ্ঠানে পিকেটিং থাকায় স্বাভাবিক কাজকর্ম বন্ধ ছিল। জেলা আদালতেও কাজ হয়নি।
জেলার চা বাগানগুলি এবং রেল পরিষেবা বনধের বাইরে থাকলেও, সকালে জলপাইগুড়ি টাউন স্টেশনে হলদিবাড়িগামী প্যাসেঞ্জার ট্রেন ৫ মিনিটের জন্য অবরোধ করেন বন্ধ সমর্থকরা। এ দিন জলপাইগুড়ি শহরের রাজ্য সরকারের সমবায়িকার একটি দোকানে এক জন মহিলা কর্মী গেট খোলা দেখে ঢুকে পড়েন। বন্ধ সমর্থক এসে দোকানে শাটার নামিয়ে তালা লাগিয়ে দেন। খবর পেয়ে পুলিশ এসে তালা ভেঙে শাটার খুলে দেয়। আলিপুরদুয়ার ও কালচিনি এলাকার দোকান বাজার বন্ধ ছিল। মালবাজার মহকুমাতেও বন্ধের প্রভাব পড়েছে।
|