ভেবেছিলেন, মেয়ের খুনের ঘটনা জেনে এক বার বাড়িতে আসবেন মুখ্যমন্ত্রী। বুধবার দিনভর কেটেছে সে প্রতীক্ষাতেই। বিকেল গড়াতে ডুকরে উঠলেন গাইঘাটার রাজাপুরে নিহত কিশোরীর মা। বললেন, “মেয়ের খুনের বিচার চেয়ে আমাদের আর মহাকরণে যাওয়ার ইচ্ছে রইল না।
উনি (মুখ্যমন্ত্রী) ব্যস্ত মানুষ। হয়তো আমাদের কথা ভুলেই গিয়েছেন।” একাধিক পড়শির সংযোজন, “এখানে এলে ভয়ের কিছু ছিল না।” মা হতাশ। হতাশ রাজাপুর। হয়তো ব্যথিতও।
বুধবার রাজাপুর থেকে মাত্র ছ’কিলোমিটার দূরে গাইঘাটার চাঁদপাড়ায় নির্বাচনী সভা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে নিহত কিশোরীর বাড়িতে যাননি। ওই কিশোরীকে দিন কয়েক আগে খুন করা হয়। উপড়ে নেওয়া হয় চোখ। ছিঁড়ে নেওয়া হয় কান। তারপর থেকে তৃণমূল -সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা -নেত্রীরা গিয়েছেন মেয়েটির পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে। বনগাঁয় সভা বাতিল করে মুখ্যমন্ত্রী যখন গাইঘাটায় সভা করবেন বলে জানাজানি হয়, তখন থেকেই রাজাপুরের মানুষের আশা ছিল মুখ্যমন্ত্রী নিজেই দেখা করবেন নিহত কিশোরীর পরিবারের সঙ্গে। |
কামদুনিতে স্থানীয় মানুষের সঙ্গে চাপান-উতোরে জড়িয়ে পড়েন মুখ্যমন্ত্রী। জেলার রাজনৈতিক মহলের একাংশের অনুমান ছিল, ওই ঘটনার জেরে ভাবমূর্তিতে তৈরি হওয়া ক্ষতে প্রলেপ দিতে হয়তো গাইঘাটার সভা উপলক্ষে রাজাপুরকে বেছে নেবেন মমতা। স্থানীয় পুলিশ-প্রশাসনেরও হয়তো ধারণা ছিল, মেয়েটির পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে পারেন মুখ্যমন্ত্রী। যে কারণে এ দিন সকাল থেকে স্থানীয় বকচরা মোড় -ন’হাটা সড়কে পুলিশি টহল ছিল চোখে পড়ার মতো। আশা ছিল তৃণমূলের স্থানীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যেও। রাজাপুর কলোনিতে মেয়েটির মামার বাড়িতে ঢোকার মুখে টাঙানো হয়েছিল দলীয় পতাকা।
কিন্তু চাঁদপাড়ায় সভা করে মুখ্যমন্ত্রীর কনভয় বেরিয়ে যায় দত্তপুকুরে পরবর্তী সভাস্থলের দিকে।
সন্ধের দিকে মেয়েটির মামাবাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, তখনও পাড়ার লোকজনের জটলা সেখানে। মামা বললেন, “আমরা চেয়েছিলাম, মুখ্যমন্ত্রী পরিবারটার সঙ্গে দেখা করুন। দশ জনের কথা ভাবলে উনি নিশ্চয়ই আসতেন। উনি কি ভেবেছিলেন কামদুনির মতো বিক্ষোভ হবে এলে?”
কী বলতেন মুখ্যমন্ত্রী এলে? নিহত কিশোরীর মামিমা বলেন, “কামদুনিতে উনি বলে গেলেন, এক মাসে দোষীদের শাস্তি দেবেন। আমরাও দোষীদের দ্রুত গ্রেফতার করে কঠোর শাস্তি চাইতাম। দেখতে বলতাম, কী ভাবে গরিব পরিবারের এক জন মা মেয়েকে বড় করেছিলেন। এত কাছে এসেও উনি এলেন না ! ”
পরিবারের বক্তব্য, ঘটনার পরে প্রাথমিক সন্দেহের ভিত্তিতে তাঁরা অভিযোগ করেছিলেন। সেই মতো পড়শি এক যুবক ধরাও পড়েছে। কিন্তু খুনের ঘটনায় আর কেউ জড়িত কি না, কেনই বা খুন করা হল ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রীটিকে, সে সব কিছুই জানায়নি পুলিশ। ময়না-তদন্তের রিপোর্টও পরিবারের হাতে দেওয়া হয়নি। এ সব নিয়ে দাবি জানানোর ইচ্ছে ছিল মুখ্যমন্ত্রীর কাছে। সিআইডি তদন্তের দাবি জানানোরও ইচ্ছে ছিল। কিছুই হয়নি সে সব। অন্ধকার গাঢ় হয় রাজাপুরে। মনখারাপ আর হতাশাও।
|