মুখ্যমন্ত্রীর প্রতীক্ষায় রাজাপুর।
আজ, বুধবার বনগাঁর চাঁদাবাজারে নির্বাচনী সভা করার কথা ছিল তাঁর। সোমবার সন্ধ্যায় পুলিশ-প্রশাসনের কাছে খবর আসে, ওই সভা বাতিল করে কয়েক কিলোমিটার দূরে গাইঘাটার চাঁদপাড়ায় সভা করবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
নির্ধারিত সভাস্থল থেকে রাজাপুরের দূরত্ব মেরেকেটে ছ’কিলোমিটার। গত শুক্রবার এই গ্রামেরই বছর বারোর এক কিশোরীকে চোখ উপড়ে, কান ছিঁড়ে নৃশংস ভাবে খুন করা হয়েছিল। পাটখেতে পড়েছিল ক্ষতবিক্ষত দেহ। ইতিমধ্যেই ওই ঘটনায় গ্রেফতার করা হয়েছে এক যুবককে। আরও কেউ জড়িত থাকতে পারে বলে অভিযোগ নিহত কিশোরীর পরিবারের। দোষীদের চরম শাস্তি চান তাঁরা। আর সে কথাটাই সরাসরি বলতে চান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে। ঠিক যেমন চেয়েছিলেন এই জেলারই (উত্তর ২৪ পরগনা) আর এক প্রান্ত কামদুনির ধর্ষিতা নিহত ছাত্রীর পরিবার। সোমবার অবশ্য কামদুনিতে গিয়ে যথেষ্ট বিব্রত হতে হয়েছে মুখ্যমন্ত্রীকে। স্থানীয় মানুষের ক্ষোভের কথা না শুনেই উষ্মা প্রকাশ করে ফিরে আসেন তিনি। ধর্ষণ কাণ্ডের দায় সিপিএমের ঘাড়ে চাপান। গ্রামবাসীদের স্বতঃস্ফূর্ত বিক্ষোভের পিছনে মাওবাদীদের হাত থাকতে পারে বলেও ইঙ্গিত করেন।
রাজাপুরে নিহত কিশোরীর পরিবারের সঙ্গে শেষমেশ মুখ্যমন্ত্রী দেখা করবেন কিনা, তা নিয়ে দল বা পুলিশ-প্রশাসনের কাছে খবর নেই। জেলা তৃণমূলের একটি সূত্র জানাচ্ছে, গাইঘাটায় সভা করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী স্বয়ং। বনগাঁয় মুখ্যমন্ত্রীর সভা বাতিলের কারণ হিসাবে খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, “দূরত্বের কারণেই এই সিদ্ধান্ত। বুধবার গাইঘাটা হয়ে বারাসতের ফলতিতেও সভা করবেন মুখ্যমন্ত্রী। ঝড়-বৃষ্টির মরসুমে খুব দূরে সভা করতে অসুবিধা হতে পারে। সে কথা ভেবেই এই সিদ্ধান্ত।” তবে জেলার রাজনৈতিক মহলের একাংশের মত, কামদুনির ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রীর ভাবমূর্তি যে ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তা নিয়ে যথেষ্ট ওয়াকিবহাল তিনি নিজেও। গাইঘাটায় গিয়ে সেই ক্ষতেই প্রলেপ দিতে চান মমতা। এ জন্য প্রয়োজনে ওই কিশোরীর পরিবারের সঙ্গে দেখাও করতে পারেন।
মুখ্যমন্ত্রী বাড়ি পর্যন্ত না এলে অবশ্য সভায় গিয়ে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে চান না গাইঘাটায় নিহত কিশোরীর পরিবার। মেয়েটির বড়মামা বলেন, “চাঁদপাড়ায় গিয়ে আমরা মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করব না। উনি যদি আমাদের নিজের লোক ভাবেন, তা হলে নিশ্চয়ই এক বার ঘুরে যাবেন এখানে। আমরাও তাই চাইছি।” কী বলবেন মুখ্যমন্ত্রী এলে? মেয়েটির মায়ের কথায়, “বলব, দোষীরা যেন ছাড়া না পায়। ওদের কঠোর শাস্তি চাই। আর কিছু চাই না।” বস্তুত এর আগে প্রশাসনের দেওয়া চাল-কাপড় ফিরিয়ে দিয়ে সেটা বুঝিয়েও দিয়েছেন তাঁরা।
এ দিকে, রাজাপুরে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ভিড় লেগেই আছে। এ দিন নিহত কিশোরীর পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন গাইঘাটার বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী মঞ্জুলকৃষ্ণ ঠাকুর। তিনি বলেন, “মানুষের কাছে আমরা দায়বদ্ধ। পরিবারটির পাশে আছি, সে কথা বোঝাতেই এসেছিলাম।” রাজ্য যুব কংগ্রেসের সহ সভাপতি অরিন্দম ভট্টাচার্যও এ দিন পরিবারটির সঙ্গে দেখা করে ফের ময়না-তদন্তের দাবি তোলেন। এবিটিএ-র বনগাঁ মহকুমা শাখার পক্ষ থেকে দোষীদের গ্রেফতার ও কঠোর শাস্তির দাবিতে গাইঘাটা থানায় স্মারকলিপি দেওয়া হয়।
মঙ্গলবার গাইঘাটা থানায় নতুন করে অভিযোগ দায়ের করেন নিহত কিশোরীর মা। পরিবারের বক্তব্য, এর আগে এফআইআর-এ শারীরিক নির্যাতনের কথা বলা হয়নি। এ দিন শ্লীলতাহানির কথা অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেছেন ওই কিশোরীর মা। সঞ্জয় মণ্ডল নামে ধৃত এক পড়শি যুবক ছাড়াও ওই কাণ্ডে আরও কেউ জড়িত থাকতে পারে বলেও উল্লেখ করেছেন তিনি। জেলা পুলিশ সুপার সুগত সেন বলেন, “নিহত ছাত্রীর মায়ের বয়ান অভিযোগ আকারে লিপিবদ্ধ করা হবে। সেই মতোই তদন্ত এগোবে। তবে নতুন করে এফআইআর লেখা সম্ভব নয়।”
|