মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একবার আসুন, চাইছে এ বার গাইঘাটাও।
একই দাবি বেশ কিছু দিন ধরে তুলছিল কামদুনি। কিন্তু সোমবার ধর্ষিত-নিহত তরুণীর ওই গ্রামে গিয়ে বিক্ষোভের মুখে পড়েন মুখ্যমন্ত্রী। তবে, গাইঘাটার রাজাপুর কলোনির নিহত ছাত্রীর পরিবারের লোকজন বা গ্রামবাসীরা জানিয়েছেন, তাঁরা মুখ্যমন্ত্রীর সামনে শুধু ছাত্রীটিকে কতটা নৃশংস ভাবে খুন করা হয়েছে, সে কথাই তুলে ধরতে চান। আর চান, তিনি যেন দোষীদের কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করেন।
রাজাপুরের নিহত ছাত্রীটির মা এবং মাসি এ দিন বলেন, “সকলেই যখন আসছেন, আমরা চাই উনিও (মুখ্যমন্ত্রী) একবার আসুন। আমাদের কাছ থেকে ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ শুনে যান। সেই মতো ব্যবস্থা নিন। ব্যস, এটুকুই চাই। কামদুনিতে তো উনি এলেন। আমাদের অবস্থা তো কামদুনির ওই পরিবারটির মতোই।” একই বক্তব্য গ্রামবাসীদেরও। তাঁরা জানিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রী এসে দোষীদের কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করার আশ্বাস দিলেই তাঁরা সন্তুষ্ট। শুক্রবার এলাকার পাটখেত থেকে বাঁ চোখ ওপড়ানো এবং বাঁ কানের কিছুটা অংশ ছেঁড়া অবস্থায় রাজাপুর কলোনির বছর বারোর ওই স্কুলছাত্রীর দেহ মেলে। পরিবারের লোকজনের সন্দেহ, এটি শারীরিক নির্যাতন করে খুনের ঘটনা। ইতিমধ্যেই ওই ছাত্রীর এক পড়শি যুবককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সোমবার গাইঘাটা থানা সূত্রে জানানো হয়েছে, ময়না-তদন্তের রিপোর্ট পুলিশের হাতে এসেছে। তাতে ধর্ষণের কোনও প্রমাণ মেলেনি। ৪৫ দিনের মধ্যে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেওয়া হবে। ছ’মাসের মধ্যে সাজা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। আপত্তি ওঠায় ‘সিজার-লিস্ট’ তৈরির জন্য আগে নিহতের মামার সই করা যে সাদা কাগজ পুলিশ নিয়েছিল, তা ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
এ দিনই গাইঘাটার ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দিল রাজ্য মানবাধিকার কমিশন। স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে কমিশনের চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি অশোককুমার গঙ্গোপাধ্যায় এবং কমিশনের সদস্য অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি নারায়ণচন্দ্র শীল উত্তর ২৪ পরগনার পুলিশ সুপারকে ওই ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। কোনও একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে দিয়ে ওই তদন্ত করাতে হবে। দু’সপ্তাহে পুলিশ সুপারের মন্তব্য-সহ তদন্ত রিপোর্ট কমিশনে জমা দেওয়ার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।
দুপুরে বনগাঁ আদালতের সরকারি আইনজীবীদের দশ জনের একটি প্রতিনিধি দল ওই গ্রামে গিয়ে নিহত ছাত্রীর পরিবারের লোকজনের সঙ্গে কথা বলেন। দোষীদের কঠোর শাস্তি পাওয়ার ব্যাপারে তাঁরা সকলকে আশ্বস্ত করে জানান, দোষীদের সাজা দেওয়ার জন্যই সরকার তাঁদের নিয়োগ করেছে। পুলিশি তদন্তের উপরে তাঁরা নজর রাখছেন। কেউ ভয় দেখালে পুলিশ এবং তাঁদের সঙ্গে যেন যোগাযোগ করা হয়। ধৃতের জামিন পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। খুনের ঘটনায় আর কারও নাম উঠে এলে মামলায় তার নামও পুলিশ যুক্ত করবে।
রবিবার ওই গ্রামে গিয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী দীপা দাশমুন্সি এফআইআরের কপি নিয়ে পড়ে জানান, যে ভাবে অভিযোগ লেখা হয়েছে, তাতে দোষীদের কঠোর শাস্তি সম্ভব নয়। সে কথা উড়িয়ে দিয়ে এ দিন বনগাঁ আদালতের মুখ্য সরকারি আইনজীবী সমীর দাস ওই কপি সকলের সামনে পড়ে জানিয়ে দেন, ওই এফআইআরের মাধ্যমেই দোষীর কঠোর শাস্তি সম্ভব। তিনি বলেন, “মামলা চালানোর জন্য নিহতের পরিবারকে কোনও অর্থ খরচ করতে হবে না। আমরা সব রকম সাহায্য করব। দোষীরা যাতে কোনও আইনজীবীর সাহায্য না পান, তা নিয়েও আলোচনা করা হবে।”
কামদুনি-রাজাপুরের ঘটনার প্রতিবাদে এ দিন বারাসত ও বনগাঁ মহকুমায় এসইউসি-র ডাকা ১২ ঘণ্টার বন্ধে তেমন কোনও সাড়া মেলেনি। যানবাহন চলেছে। বেশির ভাগ দোকানপাটও খোলা ছিল। বারাসতের কলোনি মোড়, চাঁপাডালি, হাবরা, গাইঘাটায় বন্ধ সমর্থকেরা দফায় দফায় সড়ক অবরোধ করলেও পুলিশ তা তুলে দেয়। যদিও, এসইউসি-র দাবি, বন্ধ সার্বিক ভাবে সফল। |