পুলিশি হাজতে তিন রাত কেটে গিয়েছে মূল অভিযুক্ত দেবব্রত ঘোষ ওরফে লাল্টু এবং শিবুলাল যাদবের। কিন্তু দফায় দফায় জেরা করেও ব্যারাকপুরের সাম্প্রতিক খুন ও হাঙ্গামার ব্যাপারে তাদের কাছ থেকে তেমন কোনও তথ্য জানতে পারেনি পুলিশ। তার উপরে লাল্টুর বক্তব্যের সঙ্গে তার স্ত্রী সীমা ঘোষের বয়ানের মিল পাওয়া যাচ্ছে না। তাই সীমাকে থানায় ডেকে লাল্টুকে তাঁর সামনে বসিয়ে জেরা করার কথা ভাবা হচ্ছে।
জিতুলাল তাঁতি নামে শিবুর ঘনিষ্ঠ এক যুবক ৬ জুন রাতে ব্যারাকপুরের সদরবাজার এলাকায় খুন হয়। সে শিবুর জুয়ার কারবার দেখভাল করত বলে পুলিশের খবর। খুনের রাতেই শিবু আর তার ঠ্যাঙাড়ে বাহিনী এলাকায় তাণ্ডব বাধায়। ধুন্ধুমার কাণ্ড বেধে যায় পরের দিন সকালেও। প্রায় আড়াই ঘণ্টা ধরে ভাঙচুর চলে। হাঙ্গামার ছবি তুলতে গিয়ে বেধড়ক মার খান দুই চিত্রসাংবাদিক। হামলার পরেই গা-ঢাকা দেয় শিবু। ঘটনার দিন ছয়েক পরে বিহারের চম্পারণে ধরা পড়ে সে। খুনের ঘটনায় মূল অভিযুক্ত লাল্টু শুক্রবার ধরা পড়ে দিঘায়। ব্যারাকপুর কমিশনারেটের এক পুলিশকর্তা জানান, খুনের রাতে সে বাড়িতে ছেলেমেয়েকে পড়াচ্ছিল বলে লাল্টুর দাবি। খুনের ঘটনায় তাকে ফাঁসিয়ে দেওয়া হতে পারে, এই আশঙ্কায় এক বন্ধুর বাড়িতে আশ্রয় নেয় সে। পরের দিন ভোরে সেখান থেকে বাস ধরে চলে যায় দিঘায়।
কিন্তু লাল্টুর স্ত্রী সীমা পুলিশকে জানান, তাঁর স্বামী ৬ জুন সন্ধ্যাতেই মোটরবাইক নিয়ে বেরিয়ে গিয়েছিল। অর্থাৎ সে বাড়িতে বসে ছেলেমেয়েকে পড়াচ্ছিল বলে লাল্টু যা বলেছে, তা ঠিক নয়। পুলিশি সূত্রের খবর, লাল্টুর সাফাই তার স্ত্রীর বক্তব্যের সঙ্গে মিলছে না বলেই দু’জনকে মুখোমুখি বসিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের কথা ভাবা হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান অনুযায়ী খুনের সময় ঘটনাস্থলে আরও কয়েক জন যুবক ছিল। তাদের নামও জেনেছে পুলিশ। তাদের খোঁজ চলছে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, জুয়ার ঠেক চালানোকে কেন্দ্র করেই খুন হয়েছে জিতু। ওই খুন এবং তার জেরে দু’দিন ধরে হাঙ্গামা চলার পরেও প্রকাশ্যে সাট্টার রমরমা চলছে। ব্যারাকপুর সদরবাজার এলাকা থেকে চিড়িয়ামোড়, স্টেশন সর্বত্রই পুলিশের সামনে অবাধে বসছে জুয়া ও সাট্টার জমজমাট আসর। পুলিশ বলছে, ব্যারাকপুরের সদরবাজার ও মণিরামপুর এলাকায় অন্তত সাতটি জুয়ার বোর্ড চালাত শিবু। তার শাগরেদ জিতু সেই সব আড্ডা থেকে টাকা সংগ্রহের দায়িত্বে ছিল। জিতু খুন হয়েছে শুনেই শিবু আর তার দলবল দফায় দফায় হাঙ্গামা বাধায়। তার পরে বেগতিক দেখে এলাকা ছেড়ে পালায়।
পুলিশি জেরায় শিবু অবশ্য জানিয়েছে, সে শিবভক্ত। শিবের পুজো দিতে আট বন্ধুকে নিয়ে নেপালের একটি শিবমন্দিরে যাচ্ছিল। মাঝপথে বিহারের সুগুলি থানা এলাকায় সে তার জামাইবাবুর বাড়িতে যায়। লাল্টু ও শিবু দু’জনেরই দাবি, ব্যারাকপুরের খুন ও সাংবাদিক পেটানোর ঘটনায় তারা জড়িত নয়।
তৃণমূলের গোষ্ঠী-কোঁদলের জেরে ওই খুন ও হাঙ্গামা বলে অভিযোগ। শিবু স্থানীয় তৃণমূল নেতা ও ভাটপাড়ার বিধায়ক অর্জুন সিংহের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত আর লাল্টু তৃণমূল নেতা রবীন ভট্টাচার্যের অনুগামী। রবিবার রাতে লাল্টু ও শিবুকে আলাদা আলাদা সময়ে ব্যারাকপুরের ঘটনাস্থল এবং পার্শ্ববর্তী এলাকায় নিয়ে যায়। চলে জেরা। কিন্তু খুন ও হাঙ্গামার ব্যাপারে তেমন কোনও তথ্য পায়নি পুলিশ। তবে কোন কোন ক্লাবে তাদের আড্ডা ছিল, কোথায় কোথায় কাদের উদ্যোগে জুয়ার আসর বসত, সেই বিষয়ে কিছু তথ্য মিলেছে। সোমবার রাতে অস্ত্রের খোঁজে লাল্টুকে নিয়ে তার বাড়িতে যায় পুলিশ। ছাদে জলের ট্যাঙ্কেও তল্লাশি চালানো হয়। তবে বাড়িতে কোনও অস্ত্র মিলেছে কি না এবং স্ত্রীর মুখোমুখি বসিয়ে লাল্টুকে জেরা করা হয়েছে কি না, পুলিশ তা জানায়নি। |