বারাসতের কামদুনিতে গণধর্ষণ ও খুনের মামলা তিন মাসের মধ্যে শেষ করা হবে বলে রাজ্য সরকারের তরফে আগেই জানানো হয়েছিল। ঘটনার ১০ দিন পরে, সোমবার কামদুনিতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেই সময়সীমা দু’মাস কমিয়ে জানিয়ে দিলেন, ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টে এক মাসের মধ্যে এই মামলার ফয়সালা করতে চায় সরকার। চার্জশিট দেওয়া হবে ১৫ দিনের মধ্যে। এবং তারা ফাঁসিই চাইবে দোষীদের।
ওই এলাকায় মহিলাদের নিরাপত্তা তলানিতে ঠেকেছে বলে অভিযোগ উঠেছে এবং তা নিয়ে মহিলারা এ দিন বিক্ষোভও দেখান। মুখ্যমন্ত্রী জানান, সিআইডি-কে ওই সব অঞ্চলে বিশেষ নজরদারি চালাতে বলা হয়েছে। কামদুনি এবং তার আশপাশের সীমান্তবর্তী এলাকায় সুরক্ষা বাড়াতে বলা হয়েছে বিএসএফ বা সীমান্তরক্ষী বাহিনীকেও। তার জন্য বিএসএফের অ্যাডিশনাল ডিজি করে সঞ্জয় চন্দকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
কলেজছাত্রীকে ধর্ষণ করে খুনের ঘটনার তদন্তভার সিআইডি-র হাতে তুলে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রাথমিক তদন্তের পরে রাজ্যের এই গোয়েন্দা সংস্থা মনে করছে, ২০ বছরের ওই ছাত্রীকে গণধর্ষণ করা হয়নি। তাঁকে ধর্ষণ করেছে অভিযুক্তদের মধ্যে এক জনই। তবে অন্যেরা প্রত্যক্ষ ভাবে সঙ্গ দিয়েছে। গত বৃহস্পতিবার ছাত্রীটির পরিবারের লোকজনকে মহাকরণে এনে মুখ্যমন্ত্রী প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তাঁদের পরিবারের বড় ছেলেকে সরকারি চাকরি দেওয়া হবে। ছোট ছেলের লেখাপড়ার খরচ এবং বাবা-মায়ের চিকিৎসা খরচ বহন করবে সরকার। ওই তরুণীর পরিবার-সহ গোটা কামদুনিই মুখ্যমন্ত্রীর সেই সাহায্যের প্রতিশ্রুতি প্রত্যাখ্যান করে। তারা জানায়, দোষীদের চরম শাস্তি ছাড়া তাদের আর কিছু চাওয়ার নেই।
তারও পাঁচ দিন পরে, সোমবার কামদুনিতে দিয়ে বেশ কয়েকটি প্রতিশ্রুতি দেন মমতা। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “একটি থানা হওয়াতেই বারাসতের সমস্যা হচ্ছে। তাই আমরা বারাসত থানাকে ভেঙে চারাটি থানা গড়ব। এবং সেই কাজটা খুব শীঘ্রই হবে। ওদের সময়ে (বাম আমলে) কোনও ঘটনা ঘটলে এফআইআর করতে দিত না। এখানে তো অপরাধীরা সকলেই ধরা পড়েছে। আমি মহিলাদের জন্য থানা ও আদালত চালু করেছি। বারাসতেও আলাদা মহিলা থানা চালু হয়েছে।” তার পরেই ক্ষোভ প্রকাশ করে মমতা বলেন, “কেউ কেউ বলছে দু’বছরেও কিছু হয়নি। কিন্তু দু’বছরের মধ্যে এত কিছু করা সম্ভব হবে কী করে?”
এক মাসে শাস্তির ব্যবস্থা সম্ভব কি না, উদাহরণ টেনে তারও ব্যাখ্যা দেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, “এর আগে তিনটি ঘটনায় রাজ্য সরকার চার্জশিট দিয়ে ২৭ দিনের মধ্যে শাস্তির ব্যবস্থা করেছে। কামদুনিতে ধর্ষণের ঘটনায় ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টের মাধ্যমে ৩০ দিনের মধ্যে দোষীদের ফাঁসির ব্যবস্থা করা হবে।” মমতার অভিযোগ, রাজারহাট উপনগরীর জন্য সিপিএম এখানে জমি দখল করেছে। কোনও পরিকল্পনা করেনি। সেই জন্যই এই হাল। কিছু মানুষ প্রাচীর তুলে কারখানার জন্য জমি ফেলে রেখেছে।
ধর্ষণ-খুনের পরে মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক-সহ বিভিন্ন নেতা এলাকায় গেলেও কামদুনি তাঁদের ফিরিয়ে দিয়েছিল। কামদুনি চেয়েছিল, খোদ মুখ্যমন্ত্রী এলাকায় আসুন। মুখ্যমন্ত্রী এ দিন বলেন, “আমি জ্যোতিপ্রিয়কে নিয়ে আসতামই। নানা কাজের চাপে আটকে ছিলাম। তেহট্টের ঘটনাতেও আমি গিয়েছি। বুধবার উত্তর ২৪ পরগনা জেলায় আমার অনুষ্ঠান আছে। আমি সেখানেও যাব। তার আগে দেখতে এসেছিলাম, ডিরোজিও কলেজ থেকে গ্রামটা কত দূর। মানুষ এখানে কী অবস্থায় থাকে।”
যারা কামদুনিতে ছাত্রীকে ধর্ষণ করে মেরেছে, মুখ্যমন্ত্রী তাদের ‘সমাজের শত্রু’ আখ্যা দেন। তিনি বলেন, “রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে সকলকে এর প্রতিবাদে জোটবদ্ধ হতে হবে। মা-বোনেদের সম্মান দিতে হবে। কামদুনির ঘটনায় দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করবে সরকার।” |