|
|
|
|
মাওবাদী হাতও দেখছে প্রশাসন |
কামদুনিতে রোষের মুখে পড়ে মমতা দুষলেন সিপিএম-কেই |
অরুণাক্ষ ভট্টাচার্য • কলকাতা
আর্যভট্ট খান • কলকাতা
|
সরকারের যাবতীয় প্রতিশ্রুতি উপেক্ষা করে কামদুনি চেয়েছিল, মুখ্যমন্ত্রী অন্তত একটি বারের জন্য সেখানে আসুন। মুখ্যমন্ত্রী গেলেনও। কিন্তু খুন-ধর্ষণের ঘটনার দশ দিন বাদে, সোমবার দুপুরে প্রায় আচমকা ধর্ষিতার বাড়িতে হাজির হয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে যে পরিস্থিতির মুখে পড়তে হল, তা প্রায় নজিরবিহীন!
স্থানীয় মহিলাদের প্রবল বিক্ষোভের মুখে অল্প সময়ের মধ্যে কামদুনি ছাড়তে হল মুখ্যমন্ত্রীকে। পথ চলার ফাঁকে তাঁর দিকে ধেয়ে এল অজস্র চোখা চোখা প্রশ্ন ও তির্যক মন্তব্য। তাতেই শেষ নয়। কনভয়ের পিছনে ছুটে আসা মহিলাদের সঙ্গে রাস্তায় দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রীর যে রকম উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হল, তা-ও প্রায় বেনজির। এবং এ সবের জেরে দৃশ্যতই ক্ষুব্ধ ও উত্তেজিত তৃণমূলনেত্রী বলে গেলেন, ধর্ষণকারী ও বিক্ষোভকারীরা সব সিপিএম!
পরে মুখ্যমন্ত্রী তাঁর এ হেন মন্তব্যের সমর্থনে যুক্তিও দিয়েছেন। “কামদুনিতে ঢুকেই দেখি, লাল পতাকায় চার দিক ঢেকে দেওয়া হয়েছে! তখনই বুঝেছিলাম, কোথাও একটা পরিকল্পনা ছকে রাখা হয়েছে। যদিও এই ধরনের কাজ যারা করেছে তারা বহিরাগত। এর সঙ্গে সাধারণ মানুষের কোনও যোগ নেই বলেই আমার ধারণা।” বলেছেন মমতা। রাজ্য প্রশাসনের দাবি: এ দিন কামদুনিতে ‘সিপিএম-আশ্রিত’ একটি মাওবাদী সংগঠনের মহিলা সদস্যরাও হাজির ছিলেন, যাঁরা মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বিতণ্ডা বাধিয়ে উত্তপ্ত পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছেন। প্রশাসনের আরও অভিযোগ: রাজারহাটের এক সিপিএম নেতার ছত্রচ্ছায়ায় থাকা কয়েক জন মাওবাদী কামদুনি অঞ্চলে সরকার ও শাসকদলের বিরুদ্ধে কুৎসা রটিয়ে হিংসার বাতাবরণ তৈরির চেষ্টা করছে। মুখ্যমন্ত্রীর কামদুনি সফরকালে এরাই হাওয়া গরম করার ইন্ধন জুগিয়েছে বলে প্রশাসন মনে করছে। মহাকরণ-সূত্রের খবর: সিআইডি এবং রাজ্য পুলিশের শীর্ষ কর্তাদের ব্যাপারটা জানানো হয়েছে। তাঁদের বলা হয়েছে মাওবাদী-যোগসাজসের বিষয়টি তদন্ত করে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের চিহ্নিত করতে। |
|
রাস্তা খারাপ থাকায় মোটরবাইকে চেপে ঢুকলেন কামদুনিতে। —নিজস্ব চিত্র |
কামদুনির কলেজ-পড়ুয়া মেয়েটিকে ধর্ষণ করে নৃশংস ভাবে হত্যার ঘটনার পরে পরেই তাঁর পরিবারের ‘পাশে দাঁড়াতে’ গিয়েছিলেন রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী ও তৃণমূলের দুই সাংসদ। স্থানীয় মানুষের বিক্ষোভে তাঁদের পিছু হটতে হয়েছিল। এর পরে মুখ্যমন্ত্রীর আহ্বানে সাড়া দিয়ে গত বৃহস্পতিবার মেয়েটির দু’ভাই ও কিছু গ্রামবাসী মহাকরণে যান। সেখানে মুখ্যমন্ত্রী তাঁদের চাকরি থেকে শুরু করে আর্থিক সাহায্যের বিভিন্ন প্রস্তাব দিলেও ওঁরা প্রশাসনের মাথাকে স্পষ্ট জানিয়ে আসেন, কোনও সাহায্য লাগবে না। কামদুনির দাবি একটাই অপরাধীদের ফাঁসির ব্যবস্থা করুক সরকার। আর মুখ্যমন্ত্রী অন্তত এক বার গিয়ে এলাকার করুণ ছবিটা নিজের চোখে দেখে আসুন।
কামদুনির ওই একরোখা দাবি মানতে এ দিন বলতে গেলে হঠাৎই সেখানে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন মমতা। সফর যথাসম্ভব গোপন রাখার চেষ্টা হয়েছিল। দুপুরে তিনি যখন মহাকরণ থেকে আচমকা বেরিয়ে পড়লেন, তখন কর্তাদের মধ্যেও শোরগোল মুখ্যমন্ত্রী চললেন কোথায়? এমনকী, নিহত তরুণীর পরিবারকেও জানানো হয়নি যে, তিনি আসছেন। ইএম বাইপাস, রাজারহাট হয়ে কনভয় যখন কামদুনি মোড়ে, তত ক্ষণে অবশ্য সংবাদমাধ্যমের দৌলতে গ্রামের কানে বার্তা পৌঁছে গিয়েছে। কামদুনি জেনে গিয়েছে, তিনি আসছেন।
কামদুনি মোড় থেকে ওই বাড়িটি প্রায় সাড়ে চার কিলোমিটার। মাঝে কালভার্ট, যার উপর দিয়ে গাড়ি যায় না। কালভার্টের পাশ দিয়ে অবশ্য যেতে পারে, তবে খানাখন্দে ভরা সে পথে সময় লাগে বেশি। মমতা তাই কালভার্টের সামনে গাড়ি ছেড়ে উঠে পড়েন একটি মোটরবাইকে। সেই দু’চাকায় সওয়ার হয়েই তিনি নিহত তরুণীর বাড়ির সামনে নামলেন। টালির চালের কাঁচা বাড়ির দাওয়ায় পা রাখলেন যখন, ঘড়িতে বেলা প্রায় দু’টো। সঙ্গে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায় ও খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। বাড়ি ও আশপাশে জড়ো হয়ে গিয়েছেন কয়েক হাজার মানুষ, যাঁদের অধিকাংশ মহিলা। বাড়িতে পরিবারের সকলেই হাজির। ভিতরের ঘরে শুয়ে মা।
দাওয়ায় দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রী প্রথমেই জানতে চান, বাবাকে ডাক্তার দেখানো হয়েছে কি? হয়নি শুনে প্রশ্ন, যে দিন মহাকরণে দেখা হল, সে দিনই তো চিকিৎসার কথা বলা হয়েছিল? তা হলে হল না কেন? তরুণীর দাদা বলেন, “ক’দিন আমাদের যা যাচ্ছে! নিশ্বাস ফেলার সময় পাচ্ছি না।” কথা চলাকালীনই মমতা ‘মা কোথায়’ বলে ঘরের ভিতরে ঢুকে পড়লেন। শায়িতা প্রৌঢ়াকে বললেন, “শরীরের কী অবস্থা করেছেন! ডাক্তার দেখাননি? চিকিৎসা করাননি?” পাশে ছিলেন স্থানীয় কামদুনি স্কুলের এক শিক্ষিকা। বাড়ির লোকের হয়ে জবাবটা তিনিই দিলেন “ডাক্তার দেখাবে কি? ক’দিন ধরে ওঁদের যা চলছে! মেয়ে এ ভাবে ধর্ষিতা হয়ে খুন হয়ে গেল, মা বিছানা ছেড়ে উঠবেন কী করে?” |
|
প্রশ্নবাণে ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী। —নিজস্ব চিত্র |
বিব্রত মুখ্যমন্ত্রী সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে থামিয়ে দিয়ে বলে ওঠেন, “ঠিক আছে, এগুলো আমি সব জানি।” শিক্ষিকা থামলেও বাড়ির বাইরে থেকে ভেসে আসে মহিলা কণ্ঠের সমস্বর চিৎকার। যার সারমর্ম: মুখ্যমন্ত্রী এত দিন পরে এলেন কেন? তাঁদের সঙ্গে ওঁকে কথা বলতে হবে। জনতার দাবি শুনে কিছুটা অসহিষ্ণু স্বরে তরুণীর দাদাকে মুখ্যমন্ত্রীর প্রশ্ন, “কী হচ্ছে এ সব? এ জন্যই কি আমাকে গ্রামে আসতে বলা হয়েছিল?”
বস্তুত সেই থেকেই যেন সফরের তাল কেটে গেল।
সাকুল্যে মিনিট পাঁচেক ওই বাড়িতে থেকে মুখ্যমন্ত্রী বেরিয়ে আসেন। এবং আসতেই কার্যত ঘেরাও হয়ে যান গ্রামবাসীদের হাতে। ইতিমধ্যে কনভয়ের গাড়ি কালভার্টের পাশ দিয়ে কোনও রকমে বাড়ির কাছে রাস্তার মুখে চলে এসেছে। কিন্তু থিকথিকে ভিড় ঠেলে সরু গলি পেরিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে সে পর্যন্ত নিয়ে যেতে পুলিশ হিমসিম খায়। প্রবল ঠেলাঠেলি-ধস্তাধস্তির মধ্যে তাঁকে যখন ‘কর্ডন’ করে বার করা হচ্ছে, তখন ভিড় থেকে উড়ে আসছে পরের পর প্রশ্ন ঘটনার পরেও কেন গ্রামে স্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প হল না? কেন মহিলারা মান-সম্ভ্রম খোয়া যাওয়ার ভয়ে সারা ক্ষণ কাঁটা হয়ে থাকবেন?
কনভয় এগিয়ে এলেও মুখ্যমন্ত্রী ভিড়ের চাপে গাড়িতে উঠতেই পারেননি। শেষমেশ হাঁটতে শুরু করেন। পিছনে পিছনে দেহরক্ষীরা, সঙ্গে পুলিশ-র্যাফ। তাদের পিছনে কয়েক হাজার গ্রামবাসী। মমতা প্রায় দৌড়ানোর মতো করে হাঁটতে থাকেন। অন্যরাও তাই। তারই মধ্যে কিছু গ্রামবাসীকে বলতে শোনা যায়, “পালাবেন না, পালাবেন না। পালাচ্ছেন কেন? কথা বলে যান।” ভিড় থেকে দাবি ওঠে, মুখ্যমন্ত্রীকে কামদুনি স্কুল-মাঠে গিয়ে গ্রামবাসীর অভিযোগ শুনতে হবে। কেউ কেউ এ-ও বলেন, “আমরাই ভোট দিয়ে আপনাকে মুখ্যমন্ত্রী বানিয়েছি। আমাদের কথা আপনাকে শুনতেই হবে।” মমতা চুপচাপ হাঁটতে থাকেন। শুধু এক বার স্বগতোক্তির ভঙ্গিতে বলে ওঠেন, “এটা প্ল্যান করে করছে!”
এ ভাবে প্রায় আড়াই কিলোমিটার পথ হেঁটে পেরিয়ে একটি অ্যাম্বাস্যাডর গাড়িতে ওঠেন মুখ্যমন্ত্রী। গাড়ি কামদুনি মোড় ছাড়িয়ে রাজারহাট রোডে এক বেসরকারি স্কুলের সামনে পৌঁছলে গাড়ি থেকে নেমে পড়েন, সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলবেন বলে। কিন্তু সেখানেও তাল কেটে গেল। কী রকম?
মমতার ‘পিছু নেওয়া’ গ্রামবাসীদের কামদুনি মোড়ে আটকে দেওয়া হয়েছিল। পুলিশ-প্রশাসনের কর্তারা ভেবেছিলেন, বিক্ষোভের পালা আপাতত শেষ। অন্য পথ দিয়ে ওঁরা যে পৌঁছে যেতে পারেন, সেটা ওঁদের মাথায় আসেনি। সে ভাবেই দৌড়ে মুখ্যমন্ত্রীর গাড়ির কাছে পৌঁছে যান টুম্পা কয়াল, মৌসুমি কয়াল, সুচিত্রা মণ্ডলের মতো কয়েক জন। এবং সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গেই শুরু হয় তাঁদের কথোপকথন।
“দিদি, আমাদের কিছু বলার আছে।”
মমতা: আমার সব শোনা হয়ে গেছে।
“আমাদের আরও কিছু বলার আছে দিদি।”
মমতা: তুমি কি সব বুঝে গেছ?
এ বার জোর গলায় এক মহিলা বলে ওঠেন, “আপনিও কি সব বুঝে গেছেন? আমরা এত দূর ছুটতে-ছুটতে এলাম! আমাদের সঙ্গে একটুও কথা না-বলে চলে যাচ্ছেন? আমাদের কথা আপনাকে শুনতেই হবে। কেন গ্রামের কোনও লোকের সঙ্গে কথা বললেন না?” শুনে দৃশ্যতই উত্তেজিত মুখ্যমন্ত্রী বলতে থাকেন, “তোমাদের কোনও কথা শুনব না।” মহিলার দিকে তাকিয়ে তাঁর মন্তব্য, “আপনি রাজনীতি করেন, চুপ।” পাল্টা উত্তর আসে, “আপনি চুপ। আপনি রাজনীতি করতে এসেছেন!”
এ বার গাড়ির দিকে এগোতে-এগোতে মহিলাদের উদ্দেশে মমতার উক্তি, “সব সিপিএমের রাজনীতি করতে এসেছে। স্যরি টু সে, যে গুন্ডাগুলো ধরা পড়েছে, ওরাও সিপিএমের সঙ্গেই ছিল!” যাওয়ার আগে ক্ষুব্ধ নেত্রীকে এ-ও বলতে শোনা যায়, “চোরের মায়ের বড় গলা!”
গাড়িতে উঠে পড়েন মুখ্যমন্ত্রী। গাড়ি রওনা দেয় ডিরোজিও কলেজের দিকে। কনভয়ের শেষ গাড়িটা মিলিয়ে যাওয়ার পরেও ক্ষোভে ফুঁসতে থাকেন কামদুনির মহিলারা।
ভাঙাচোরা চেহারা নিয়ে বাড়ির পথ ধরার আগে মৌসুমি কয়াল আক্ষেপ করেন, “গ্রামের মেয়েদের নিরাপত্তার কথা বলতে চেয়েছিলাম ওঁকে। দেহরক্ষী ধাক্কা মেরে সরিয়ে দিল! চপ্পলটা ছিঁড়ে গেল। খালি পায়ে এতটা ছুটতে-ছুটতে এসেছিলাম, যদি সমস্যার কথা কিছুটা বলতে পারি।” মৌসুমির ক্ষোভ, “উনি তো শুনলেনই না! উল্টে বললেন, আমরা নাকি সিপিএম! এখানে তৃণমূল-সিপিএম কেউ নেই। সবাই গ্রামের কথা বলতে এসেছিল। রাজনীতি তো উনিই করে গেলেন!” টুম্পা কয়ালের বিস্মিত মন্তব্য, “এলাকায় মেয়েদের নানা সমস্যা জানাতে চেয়েছিলাম। উনি সেটাই শুনলেন না!” পরে কামদুনি পরিদর্শনে যাওয়া তৃণমূল সাংসদ কাকলি ঘোষদস্তিদারের গাড়ি ওঁদের ক্ষোভের মুখে পড়ে যায়। পুলিশ পরিস্থিতি সামলায়। |
|
প্রশ্নের মুখে। সোমবার কামদুনিতে মুখ্যমন্ত্রী। ছবি: পিটিআই। |
এ তো গেল গ্রামবাসীর কথা। ধর্ষিতার পরিবার কী বলছে?
মুখ্যমন্ত্রী চলে যাওয়ার পরে তরুণীর এক ভাই বলেন, “উনি আশ্বাস দিয়েছেন, কুড়ি-পঁচিশ দিনের মধ্যে দোষীদের সাজার ব্যবস্থা হবে।” তরুণীর বাবার আক্ষেপ, “মুখ্যমন্ত্রী ঘরে ঢোকার পরে ওঁর পাশে বসলাম। একটাও কথা বলতে পারলাম না। সুখ-দুঃখের কথা বলার সময়ই তো দিলেন না উনি!” পরিজনদের কয়েক জনের অবশ্য বক্তব্য, “দিদি যে এখানে এসেছেন, তাতেই আমরা খুশি। আরও আগে এলে ভাল হতো। তবে ওঁকে গোটা রাজ্য সামলাতে হয়! সময়ের অভাব তো হতেই পারে।”
এ দিকে মুখ্যমন্ত্রীর এ দিনের কামদুনি সফর ঘিরে ‘গোপনীয়তা’র বহর দেখে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠেছে। মহাকরণ থেকে বেরিয়ে মমতা বারাসতের গ্রামটিতে ঢোকার আগে পর্যন্ত কার্যত পুলিশ-প্রশাসনকেও অন্ধকারে রাখা হয়েছিল। কেন এত রাখঢাক?
প্রশাসনের একাংশের ব্যাখ্যা: কামদুনির ঘটনার পর থেকে গোটা এলাকা ক্ষোভে ফুঁসছে। শাসকদলের যাঁরাই গিয়েছেন, তাঁরাই ক্ষোভের আঁচ টের পেয়েছেন। এমনকী, মহাকরণে খোদ মুখ্যমন্ত্রীর একাধিক প্রস্তাবও হেলায় ফিরিয়েছে কামদুনি। এ অবস্থায় তাঁর সফর আগাম ঘোষিত হলে সংগঠিত ভাবে বিক্ষোভ প্রদর্শনের সম্ভাবনা থাকত। সেই অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতেই গোপনীয়তা বজায় রাখা হয়েছিল।
তাতেও অবশ্য বিক্ষোভ ঠেকানো যায়নি। বরং মমতার সফর কামদুনির ক্ষোভে কিছুটা ইন্ধনই দিয়ে গেল বলে স্থানীয় মানুষের একাংশের অভিযোগ। যাঁদের কারও কারও বাড়তি প্রশ্ন, “কামদুনির বারোটা গ্রাম পঞ্চায়েত আসনের এগারোটায় তৃণমূল বিনা লড়াইয়ে জিতেছে! তবু আমাদের গায়ে সিপিএমের লেবেল লাগিয়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী! কী ভাবে বলতে পারলেন ও কথা?” মুখ্যমন্ত্রীর ওই মন্তব্য সম্পর্কে সিপিএম দলের কী প্রতিক্রিয়া? সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক তথা বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসুর জবাব, “যিনি এ ধরনের মন্তব্য করেছেন, আমি বলতে পারব না যে, তাঁর মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছে। কিন্তু রাজ্যের কোনও সুস্থ মানুষ যে এমন কথা বলতে পারবেন না, তা হলফ করে বলছি।”
এ দিন বামফ্রন্টের তরফে বিমানবাবুরা রাজ্যপালকে যে স্মারকলিপি দিয়েছেন, তাতে
কামদুনি-কাণ্ড সহ নারী নির্যাতনের অন্যান্য ঘটনারও উল্লেখ রয়েছে। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্যের প্রতিক্রিয়া, “যে কেউ যে কোনও প্রশ্ন করলেই তো মুখ্যমন্ত্রী মেজাজ হারান! এ ক্ষেত্রেও হারিয়েছেন।” বিজেপি-র অভিযোগ: কামদুনি-কাণ্ডে তৃণমূল সমর্থকদের নাম উঠে আসাতেই মুখ্যমন্ত্রী বিব্রত। তাই তিনি এ দিন মেজাজ হারিয়েছেন। তাঁর আচরণ আদৌ মুখ্যমন্ত্রী-সুলভ নয় বলে মনে করছেন রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব। |
পুরনো খবর: নেতাদের আনাগোনায় গলেনি শোকের পাথর |
|
|
|
|
|