কাঁচা রাস্তায় ইট ফেলা নিয়ে পারিবারিক বিবাদে বৃদ্ধাকে খুঁটিতে বেঁধে মারধরের অভিযোগ উঠল আত্মীয়দের বিরুদ্ধে। বুধবার সকালে উত্তর ২৪ পরগনার স্বরূপনগর থানার হরিশপুর গ্রামে এই ঘটনায় বৃদ্ধার ছেলে হারানচন্দ্র খাজাঞ্চি বিডিওর কাছে লিখিত অভিযোগ জানান। বিডিও অরুণাভ পাল বলেন, “বৃ্দ্ধার উপরে অত্যাচারের বিষয়টি দেখার জন্য পুলিশকে বলা হয়েছে।” প্রহৃত এবং অভিযুক্তরা ভিন্ন রাজনৈতিক দলের সমর্থক হওয়ায় পঞ্চায়েত ভোটের আগে ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক চাপানউতোর শুরু হয়েছে। স্বরূপনগর থানার ওসি রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “কেনারাম রায়-সহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে বৃদ্ধার উপরে অত্যাচারের অভিযোগ পেয়েছি। পুলিশ তদন্ত করছে। দোষী প্রমাণ হলে অভিযুক্তদের ছাড়া হবে না।”
প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রের খবর, বন্যাদেবীর পরিবার কংগ্রেস করেন। যারা তাঁকে মারধর করেছে বলে অভিযোগ তাঁরা তৃণমূলের সমর্থক। হারানবাবু বলেন, “আমরা কংগ্রেস করি। তৃণমূল না করলে ফল ভাল হবে না বলে অনেকদিন ঘরেই আমাদের হুমকি দেওয়া হচ্ছিল। এ দিন সকালে কাজে বেরিয়েছিলাম। সেই সুযোগে ওরা আমার মাকে মারধর করেছে।” ব্লক কংগ্রেস সম্পাদক মুজিবুর রহমান বলেন, “নির্বাচনের মুখে ইট ফেলে রাস্তা তৈরি নিয়ে কংগ্রেস করা ওই পরিবারটি প্রতিবাদ জানিয়েছিল। সেই কারণেই তৃণমূলের লোকজন ওঁদের উপরে অত্যাচার চালাল। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ করছি।”
|
যাদের দিকে অভিযোগের তীর সেই তৃণমূলের ব্লক সভাপতি রমেন সর্দার বলেন, “সামান্য পারিবারিক ঘটনা। এর সঙ্গে আমাদের দলের কোনও যোগ নেই। আসলে রাস্তায় কাদা হয়ে যাওয়ায় যাতায়াতের সুবিধার জন্য স্থানীয় কয়েকজন নিজেদের মধ্যে চাঁদা তুলে রাস্তায় ইট পাতছিলেন। কংগ্রেসীরা এতে রাজনীতির রং লাগিয়ে ফয়দা তোলার চেষ্টা করছে।”
স্বরূপনগরের তেঁতুলিয়া খালপাড় দিয়ে কিছুটা এগোলে হরিশপুর গ্রাম। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গ্রামের বাসিন্দা বিমলচন্দ্র খাজাঞ্চি ও তাঁর দুই ছেলে চাষবাস করেন। বৃষ্টিতে গ্রামে ঢোকার রাস্তায় কাদা হওয়ায় এ দিন বেলা ১০টা নাগাদ স্থানীয় বাসিন্দা কেনারাম রায়, তপন রায়, রবীন্দ্রনাথ রায়, সুকুমার রায় ও পরিতোষ রায় কয়েকজনকে নিয়ে রাস্তায় ইট ফেলছিলেন। তাঁকে কিছু না জানিয়ে কেন তাঁর জমিতে ইট ফেলে রাস্তা করা হচ্ছে জানতে চেয়ে কাজে বাধা দেন বন্যাদেবী। বছর পঁয়ষট্টির বৃদ্ধা বলেন, “জমি আমার। তাই ইট ফেলার আগে আমার অনুমতি কেন নেওয়া হল না তা জানতে গেলে কেনারাম-সহ কয়েকজন আমাকে টানতে টানতে কাছে মন্দিরে নিয়ে যায়। সেখানে একটা বাঁশের খুঁটির সঙ্গে দড়ি দিয়ে বেঁধে আমাকে প্রচণ্ড মারধর করে। নাতনির বয়সী কয়েকজন এসেও মারে। আধঘণ্টা পরে হাতের দড়ি খুলে দেয়।” |
বৃদ্ধার নাতনি লিপিকা বলে, “আমাদের জমির উপর দিয়ে রাস্তা তৈরির প্রতিবাদ করলে ওরা এসে ঠাকুমার হাত বেঁধে প্রচণ্ড মারে। পরে স্থানীয় তৃণমূলের এক নেতার কথায় হাতের বাঁধন খুলে দেয়।”
অভিযুক্ত কেনারাম, সন্ধ্যা রায়রা অবশ্য বলেন, “ওই রাস্তায় কাদায় যাতায়াত করা নিয়ে সমস্যা হচ্ছিল। তাই কাদার হাত থেকে বাঁচতে ইট ফেলছিলাম। সেই সময় সম্পর্কে পিসিমা বন্যাদেবী এসে ইট ছুড়তে থাকলে একটা বাচ্চার গায়ে লাগে। আর যাতে কারও দিকে ইট ছুড়তে না পারেন সে জন্যই ওঁর হাত বেঁধে দেওয়া হয়। কোনওরকম মারধর করা হয়নি।”
|