বুধবার দুপুর দু’টো। কামদুনি গ্রামের রাস্তার ধারে একটি বাঁশের মাচায় উপর আধশোয়া হয়ে ছিলেন তৃণমূল বিধায়ক সব্যসাচী দত্ত। মাচার পাশেই একটি ক্লাবে তখন খিচুড়ি রান্না হচ্ছে। আয়োজনে কয়েক জন যুবক।
কলেজ ছাত্রীর ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার ১৩ দিন পরে হঠাৎ রাজারহাটের বিধায়ক এখানে কেন?
সব্যসাচীর জবাব, “যে কলেজে ওই মেয়েটি পড়ত, সেই কলেজের প্রেসিডেন্ট আমি। তাই আমি শোক জানাতে আর পাশে থাকতে এসেছি।” শুধু তাই নয়। সব্যসাচী আরও বলেন, “এই গ্রামটা খুব শান্তিপ্রিয়। এখানে যেন কোনও বহিরাগত না আসে সেই ব্যাপারটাও আমরা দেখতে এসেছি।” সব্যসাচী জানান, এদিন দিনভর গ্রামে থাকার সময় তিনি কয়েক জন বহিরাগতকে গ্রামে আসতে দেখেন। দুপুর তিনটে জনা পাঁচেক যুবক ও দুই মহিলা দু’টো অটো চেপে গ্রামে আসেন। এরা কারা ও কোথা থেকে এসেছেন তার খোঁজ নেন তিনি।
কিন্তু কামদুনি গ্রাম তো সব্যসাচীর বিধানসভা কেন্দ্রে পড়ে না। তবু কেন তিনি ওই গ্রামে লোকলস্কর নিয়ে ঘাঁটি গাড়লেন? বহিরাগত আসছে কি না, সেটা দেখার দায়িত্ব -ই বা তাঁকে কে দিল? সব্যসাচীর বক্তব্য, তিনি দলের হয়ে কাজ করছেন। কামদুনি বিধানসভা এলাকার না হলেও দলের কাজ করার জন্য তিনি যে কোনও এলাকাতেই যেতে পারেন। তৃণমূল সূত্রে খবর, গত সোমবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কামদুনি এলাকায় এসে দেখেছিলেন এলাকায় বহিরাগতদের যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে। তিনি জানতে পারেন, এই বহিরাগতরা রাজারহাটের এক সিপিএম নেতার মদতপুষ্ট। এর পরই সিপিএমের ওই নেতার মোকাবিলা করার জন্য সব্যসাচীকে কামদুনি গ্রামে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। |
কিন্তু শোক জানাতে এসে খিচুড়ি ভোজের আয়োজন কেন?
সব্যসাচী বলেন, “এই গ্রামের আতিথেয়তায় আমি মুগ্ধ। আমাদের এখানে আসতে দেখেই এখানকার মানুষরা দুপুরে খিচুড়ির নিমন্ত্রণ করেছেন।” শুধু খিচুড়ি নয়, সঙ্গে পাঁপড় আর বেগুন ভাজাও। রান্নায় ব্যস্ত জনা কয়েক যুবক। বেগুন কাটছিলেন কয়েক জন মহিলা। মুখ্যমন্ত্রীর সফরের দিন এলাকায় মাওবাদীরাও ছিল বলে দাবি করেছিল রাজ্য প্রশাসন। এ দিন কিন্তু হঠাৎই ওই মহিলাদের এক জনকে দেখিয়ে সব্যসাচী বলে উঠলেন, “ওই মহিলাকে আপনি মাওবাদী বলবেন? এখানে সবাই খাওবাদী। খাওয়াতে খুব ভালবাসে। এই গ্রামে হোটেল নেই বলে আমাকে ওরা ডেকে খাওয়াচ্ছে।”
যদিও বিধায়ককে নিমন্ত্রণ করার বিষয়টি গ্রামবাসীদের কেউই স্বীকার করেননি। বরং উল্টো কথাই শোনা গিয়েছে তাঁদের মুখে। ওই গ্রামের কয়েক জন বাসিন্দা দাবি করলেন, সব্যসাচী এ দিন এসে তাঁদের হাতেই চার হাজার টাকা দিয়ে খিচুড়ির আয়োজন করতে বলেন। এবং লোক দিয়ে খবর পাঠান দুপুরে খিচুড়ি খেয়ে যাওয়ার জন্য।
শোকস্তব্ধ গ্রামে কেউ সেই নিমন্ত্রণ সরাসরি প্রত্যাখ্যান না করলেও ‘যাব, যাব’ করে ভোজের আসর এড়িয়ে গিয়েছেন। নাম জানাতে অনিচ্ছুক এক গ্রামবাসী বলেন, “উনি এসেছেন ভাল কথা। কিন্তু এ রকম শোকের গ্রামে হঠাৎ খিচুড়ির নিমন্ত্রণ কেন? আমরা কোনও ভাবেই আমাদের আন্দোলন অন্য দিকে নিয়ে যেতে দেব না।” |
বিকেল চারটের সময় দেখা যায় সব্যসাচীর নিজের দলের লোকজনের সঙ্গে কয়েক জন কচিকাঁচা খিচুড়ি খাচ্ছে। বিকেল সাড়ে চারটের সময় সব্যসাচী রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে খিচুড়ি খাওয়ার সময় কয়েক জন গ্রামের মহিলা পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। বিধায়ক তাঁদের খিচুড়ি খাওয়ার কথা বললেও ওই মহিলারা বলেন, “আপনি খান। পরে আমরা খাব।”
শুধু খিচুড়ি খাওয়া নয়, বিকেলে গ্রামে ফুটবল ম্যাচের আয়োজন করার চেষ্টাও করেন সব্যসাচী। গ্রামবাসীরা না খেলায় ফুটবল ম্যাচও ভেস্তে যায়। সব্যসাচী নিজেই ফুটবলে কয়েকটা লাথি মারেন। খিচুড়ি খেয়েই ফুটবল খেলা? সব্যসাচী বলেন, “গ্রামের পরিবেশটা খুব সুন্দর। এত বড় মাঠ তাই খেলতে ইচ্ছা করল।”
বিধায়ক ঠিক করেছিলেন, রাতটাও কামদুনি গ্রামেই কাটাবেন। কিন্তু সেই ইচ্ছা বদলিয়ে সন্ধ্যার পর ফিরে যান তিনি। থেকে যান তাঁর সঙ্গী যুবকেরা। কেন? সব্যসাচী বলেন, “শান্ত গ্রামে রাতের বেলা বহিরাগতরা যাতে না ঢুকতে পারে, সেটাই ওরা দেখবে।”
|