প্রথাগত পান চাষে খরচ প্রচুর। সঙ্গে রয়েছে ‘হেমচিতি’ রোগের প্রভাব। তাই নওদার পরেশনাথপুর গ্রামে শুরু হল নতুন পদ্ধতি ‘শেড নেট’ ব্যবহারের মাধ্যমে পান চাষ।
জেলা উদ্যান কর্তাদের দাবি, এটা জেলায় প্রথম। এবং সফল চাষ পদ্ধতি। এতে ফল মিলছে। পানচাষিদের উৎসাহিত করতে জেলা উদ্যান পালন দফতর প্রাথমিক ভাবে পরীক্ষামূলক ক্ষেত্রে অনুদান ও কারিগরি সহযোগিতা দিচ্ছে। এর ফলে পানের শীতকালীন রোগ পাতা হলুদ হয়ে ঝরে পড়া থেকে পান পাতা রক্ষা করা যাচ্ছে।
এক বিঘা জমিতে প্রথাগত পান চাষ করতে খরচ হয় ১ লক্ষ ১০ হাজার টাকা। প্রতি বছর ওই চাষ করতে ৫০ হাজার টাকা পানের বরজ মেরামতিতে খরচ হয়। চাষের খেতকে বাঁশ দিয়ে ঘিরে পাটকাঠির কাঠামো তৈরি করে পানের লতা ঠিক মতো বৃদ্ধির ব্যবস্থা করা হয়। সঙ্গে প্রচুর শ্রমিক। |
এই পদ্ধতিতে প্লাস্টিকের মতো দেখতে নেটকে লোহার খাঁচার উপর জড়িয়ে দেওয়া হয়। এতে সূর্যালোক প্রবেশ করতে পারে ২৫ শতাংশ। কিন্তু কুয়াশা প্রবেশ করতে পারে না। বাতাস ও সূর্যালোক প্রবেশের ফলে ছত্রাকের সমস্যা কমে যায়। ফলে হেমচিতি রোগ হয় না। শেড নেটে বাঁশ ব্যবহার করতে প্রায় ১ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা খরচ হয়। লোহার পাইপে খরচ ৩ লক্ষ টাকা। কিন্তু প্রথাগত চাষের মতো খরচ এই শেড নেটে হয় না। শেড নেট লোহার রড দিয়ে তৈরি করলে ৭ বছরে অন্তত ৩ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা সাশ্রয় হবে। শেড নেট মেরামতে বাড়তি খরচ নেই।
নওদার পরেশনাথপুরের পানচাষি সুজয় বিশ্বাস জেলায় প্রথম শেড নেটের সাহায্যে পানচাষ শুরু করেছেন। তিনি বলেন, “ওই রোগ এবং প্রতি বছর মেরামতির খরচের সমস্যা নিয়ে জেলা উদ্যান পালন দফতরে গিয়ে জানতে পারি শেড নেটের কথা। উদ্যান পালন দফতরের অনুদান ও কারিগরি সহায়তায় ১০ কাঠা জমিতে পরীক্ষামূলক ভাবে পান চাষ শুরু করেছি। ফলনও শুরু হয়েছে। হেমচিতির প্রকোপও কমেছে।” জেলায় ১০০০ হেক্টরেরও বেশি জমিতে মূলত বাংলা পান পাতার চাষ হয়। শেড নেট প্রচলন প্রসঙ্গে মুর্শিদাবাদ উদ্যান পালন দফতরের যুগ্ম আধিকারিক গৌতম রায় ও শুভদীপ নাথ বলেন, “নওদায় এটাই প্রথম পরীক্ষামূলক শেড নেট চাষ। এতে প্রাথমিক ভাবে কৃষকদের উৎসাহ দিতে মোট খরচের অর্ধেক অনুদান এবং সমস্ত কারিগরি সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।” তিনি জানান, নওদার চাষি সুজয় বিশ্বাসকে ওই পদ্ধতি হাতেকলমে শেখাতে উত্তর ২৪ গরগনার বিরাতে পাঠানো হয়েছিল। পানের দামের ক্ষেত্রে এক বিঘা জমিতে মোটামুটি এক বছরে ৭ লক্ষ ৬৪ হাজার পানপাতা উৎপন্ন হয়। সেই হিসেবে গড়ে সারা বছর ১০০০ পান বিক্রি হয় ৩০০ টাকায়। এতে আয় হয় ২ লক্ষ ১৬ হাজার টাকা প্রথাগত পান চাষে। অন্য দিকে শেড নেটে আয় এক বছরে ২ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা। জেলা পানচাষি সমিতির সভাপতি তাজারুল হক বলেন, “শেড নেটে চাষ করলে কৃষকরা উপকৃত হবে। প্রথাগত পদ্ধতিতে পান চাষ করে গত বছর হেমচিতিতে পান নষ্ট হয়েছিল। এতে তা হবে না। চাষের খরচ কমবে।”
|