হেমচিতি রোগে মুখ থুবড়ে পান চাষ
হেমচিতিতে হারাতে বসেছে পানের বরজ। শেষ শীতে তাপমাত্রার আচমকা হেরফেরে মুর্শিদাবাদ জেলা জুড়ে পান পাতায় ‘হেমচিতি’ রোগ দেখা দিয়েছে। মুখ থুবড়ে পড়েছে চাষ। মুর্শিদাবাদের বেলডাঙা-২, নওদা, জলঙ্গি, দৌলতাবাদ, মুর্শিদাবাদ-জিয়াগঞ্জ ব্লকে ইতিমধ্যেই পানের ফলন নিয়ে প্রশ্ন উঠে গিয়েছে। জেলা উদ্যান পালন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, বেলডাঙা-২ ও নওদা ব্লকে ওই ক্ষতির পরিমাণ ‘ভয়ঙ্কর’। শুধু বেলডাঙা-২ ব্লকের ২০০ বিঘা জমিতে হেমচিতির থাবায় হারিয়ে গিয়েছে পান।
হেমচিতি রোগটা ঠিক কী? পানের পাতায় কালো ছোপ। ক্রমে পাতা হলুদ হয়ে ঝড়ে পড়া। ওই রোগ থেকে বাঁচতে উদ্যান পালন দফতর দাওয়াই? পাটকাঠি দিয়ে পানের বরজের বদলে লোহার খাঁচায় নাইলনে মোটা ফাঁক যুক্ত নেট দিয়ে বরজ নির্মাণ। এতে সূর্যালোক অন্তত পঁচিশ শতাংশ ঢুকবে। এ ছাড়াও বলা হচ্ছে বরজগুলো পরিচ্ছন্ন রাখতে।
তবে এরপরেই ওই রোগ যে হতে পারে না এমন নয়। সে ক্ষেত্রে বর্ষার পরে প্রথম শরতে ট্রাইকোডার্মা-ভিরিভি এবং সিওডোমোনাস মাটিতে মিশিয়ে গাছের গোড়ায় দেওয়া ছাড়াও প্রতি লিটার জলে ৫ গ্রাম দিয়ে গাছের পাতায় স্প্রে করতে হবে। ১৫ দিন পর মাইক্রোনিউট্রন গ্রেড-২ প্রতি লিটারে ১.৫ গ্রাম দিয়ে স্প্রে করতে হবে। দেড় মাসের মাথায় থাওফিলেট মিথাইল প্রতি লিটারে ১.৫ গ্রাম দিয়ে পাতায় স্প্রে করতে হবে। তার ১০-১২ দিন পর খুব ঠাণ্ডা পড়লে ইনট্রাইকোন্টিনাল অথবা ফাইটোনাল প্রতি ১০ লিটার জলে ৩ মিলিগ্রাম দিয়ে পাতায় স্প্রে করলে হেমচিতি রোগ অনেকটা রক্ষা পাওয়া সম্ভব।
মুর্শিদাবাদ জেলার সহ-উদ্যানবিদ শুভদীপ নাথ বলেন, “জেলায় ৩৫০ হেক্টরের বেশি জমিতে পান চাষ হয়। প্রায় পৌনে দু’লক্ষ বান্ডিল পান উৎপাদন হয়। এ বছর শীতের তারতম্যের দরুণ সেই ফলনের সম্ভাবনা কম। বেলডাঙা-২ ও নওদা-সহ জেলার বেশ কয়েকটি ব্লকেই হেমচিতি রোগ দেখা দিয়েছে। কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। আমি নওদা-সহ জেলায় কয়েকটি উদ্যান ঘুরে যথাযথ পরামর্শ দিয়েছি।” এ ব্যাপারে কৃষিবিমাও চালু করেছে কৃষি দফতর। দফতরে এসে পরামর্শ নিয়ে কৃষকদের আবহাওয়া ভিত্তিক কৃষিবিমার জন্য পরামর্শ দেওয়া হবে বলে তিনি জানান।
বেলডাঙা-২ ব্লক দফতরের সোমপাড়া-১ পঞ্চায়েতের মহম্মদপুর, নারকেলবাড়ি, পালতাপাড়া অঞ্চলে প্রায় ৫০০ বিঘা জমিতে পান চাষ হয়। বরজ তৈরি করে পান চাষের খরচ ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা। এ বার চাষিরা বিঘা প্রতি ৪০ হাজার টাকাও আয় করতে পারবেন কিনা তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। নওদার পরেশনাথপুরের কৃষক সুজয় মণ্ডল বলেন, “নওদায় প্রচুর পান উৎপাদন হয়। কিন্তু হেমচিতি রোগে এ বার চাষ মুখ থুবড়ে পড়েছে। উদ্যানপালন দফতরের আওতায় এসে আমরা বৈজ্ঞানিকদের পরামর্শে কিছুটা সুফল পাচ্ছি।”
পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য পানচাষি সমিতির জেলা সভাপতি তাজারুল হক বলেন, “হেমচিতি রোগে জেলার বিভিন্ন ব্লকে প্রচুর ক্ষতি হয়েছে। আমরা প্রতিটি ব্লকের পানচাষিদের থেকে খবর পেয়ে সেই মত আধিকারিকদের জানিয়েছি। জেলার পানচাষিদের দাবি এলাকায় কৃষি বিজ্ঞানীরা এসে সমস্যা অনুযায়ী সমাধানের পরামর্শ দেন। এলাকায় না গেলে কৃষকরা ঠিক পরামর্শ পান না। ফলে বড় ক্ষতির মুখে পড়েন।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.