মুখ্যমন্ত্রী মঞ্চে উঠতেই মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল জনতা। পায়ে পায়ে বাড়ির পথ ধরা গ্রামবাসীরা জানিয়েছিলেন, দিনভর অভূক্ত তাঁরা। আর অপেক্ষা সম্ভব নয়।
নদিয়ার হরিণঘাটার পরে সে জেলারই সদর-শহর কৃষ্ণনগরে প্রায় একই অজুহাত দেখিয়ে এ বার শ্রমমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসুর সভা ছাড়লেন কয়েকশো কর্মী-সমর্থক।
সে দিনের সভায় মমতা দলীয় কর্মীদের অনুরোধ করেছিলেন, ‘আমি কিন্তু আপনাদের কথা বলতেই এসেছি।’ জনতা তেমন আমল দেননি। পূর্ণেন্দুবাবু অবশ্য সভা ছাড়তে তাঁদের কোনও অনুরোধ-উপরোধের পথে যাননি। উল্টে এ ঘটনাকে সংবাদমাধ্যমের ‘অপপ্রচার’ বলেই মনে করছেন তিনি। তিনি বলেন, “সাংবাদমাধ্যমের একটা অংশ অপপ্রচার করছে।” |
মঙ্গলবার কৃষ্ণনগর শহরে শ্রম দফতরের অনুষ্ঠানে রাজ্যের শ্রমমন্ত্রী বক্তব্য রাখতে শুরু করার কিছুক্ষণের মধ্যেই সভা কক্ষের ভেতরে বসে থাকা অসংগঠিত শ্রমিকরা একে একে বাইরে বেরিয়ে যেতে থাকেন। মন্ত্রী যখন বক্তব্য শেষ করেন তখন সভা কক্ষ প্রায় ফাঁকা। তবে পূর্ণেন্দুবাবু দমে যাননি। প্রায় ফাঁকা প্রেক্ষাগৃহে সামান্য কয়েক জন দলীয় কর্মীর সামনে শেষতক অসংগঠিত শ্রমিকদের জন্য একটার পর একটা প্রকল্পের সাফল্য ঘোষণা করতে থাকেন মন্ত্রী। কিন্তু সে সময়ে হাততালি দেওয়ার মতও লোক ছিল না সভায়।
এ দিন পূর্ণেন্দুবাবু ছাড়াও অনুষ্ঠানে ছিলেন কারিগরি শিল্প দফতরের মন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাস এবং জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দফতরের প্রতিমন্ত্রী পুণ্ডরীকাক্ষ সাহা। শ্রমমন্ত্রীর আগে তাঁরা দু-জন দীর্ঘ বক্তব্য রাখেন। মন্ত্রীর সভা থেকে বেরিয়ে আসা রাজমিস্ত্রীর জোগাড়ের কাজ করা পূর্ণিমা মণ্ডল বা টুনি বিবিরা বলেন, “সকাল থেকে বসে আছি। একটার পর একটা বক্তৃতা। কিছুই বুঝছি না। কার শুনতে ভাল লাগে?”
পূর্ণেন্দুবাবু তো আপনাদের উন্নয়নের কথা বলছেন? বাইরে চার বাঁধা ভিড়টা স্পষ্ট জানিয়ে দেয়, “মন্ত্রীরা অনেক কথা বলেন। সে সব শুনে তো পেট ভরবে না। তার চেয়ে বরং তাড়াতাড়ি কাজ সেরে বাড়ি ফিরলে কিছু উপার্জনের চেষ্টা করা যাবে।”
এ দিন কৃষ্ণনগরের বিপিলিআইটি কলেজে বিভিন্ন সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পের আর্থিক সহায়তা প্রদান অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল শ্রম দফতর। সেখানে চার হাজারের বেশি বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংগঠিত শ্রমিকদের ডাকা হয়েছিল। নির্মাণ শ্রমিকদের লাইসেন্স প্রদান, পেনসন, ডেথ সার্টিফিকেট-সহ একাধিক প্রকল্পের সুযোগ-সুবিধা তাদের হাতে তুলেও দেওয়া হয়। কিন্তু সে আশ্বাস শুনল কে? |