দিনভর দুর্ভোগে রোগীরা
বিক্ষোভের পরে কর্মবিরতি উঠল বাঁকুড়া মেডিক্যালে
হাউসস্টাফদের কর্মবিরতি চললেও পরিষেবা ব্যহত হচ্ছে না। বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ এমনটা দাবি করলেও বাস্তবে তার উল্টো ছবি ধরা পড়ল। ঠিক মতো পরিষেবা না পেয়ে ক্ষুব্ধ রোগীর আত্মীয় পরিজনেরা মঙ্গলবার হাসপাতাল সুপারের ঘরে বিক্ষোভ দেখান। পরিস্থিতি সামাল দিতে এ দিন বিকেলে মেডিক্যাল কলেজের প্রশাসনিক ভবনে হাউসস্টাফ ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে নিয়ে বৈঠকে বসেন রাজ্যের মন্ত্রী শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়। নিরাপত্তা কঠোর করা হবে এই আশ্বাস পেয়ে রাত প্রায় সাড়ে ৮টা নাগাদ কর্মবিরতি প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেন হাউসস্টাফ ও জুনিয়র চিকিত্‌সকেরা। আজ বুধবার থেকে স্বাভাবিক পরিষেবা দেবেন বলে তাঁরাও আশ্বাস দিয়েছেন।
রবিবার রাতে বাঁকুড়া মেডিক্যালে বড়জোড়ার তাজপুর এলাকার বাসিন্দা আয়েষাণা খাতুনের(১৬) মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ঝামেলার সূত্রপাত। মৃতার পরিবারের লোকজন ও হাউসস্টাফ একে অপরের বিরুদ্ধে মারধরের অভিযোগ করেছিলেন। এর পরেই নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার দাবিতে কর্মবিরতি শুরু করেন মেডিক্যাল কলেজের হাউসস্টাফরা। তাঁদের সঙ্গে এই কর্মবিরতিতে যোগদেন শতাধিক জুনিয়র চিকিত্‌সকও। সোমবার বিকেলে সাংবাদিক বৈঠক ডেকে মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ দেবব্রত সর্বপল্লি দাবি করেছিলেন, “হাউসস্টাফদের কর্মবিরতির জেরে হাসপাতালের চিকিত্‌সা পরিষেবা ব্যহত হবে না। আমাদের হাতে পর্যাপ্ত পরিমাণ চিকিত্‌সক রয়েছে। প্রতিটি ওয়ার্ডেই তাঁরা পরিষেবা দিয়ে যাচ্ছেন।”
এ দিকে হাউসস্টাফ ও জুনিয়র চিকিত্‌সক না থাকায় পরিষেবা শিকেয় উঠেছে বলে দাবি করছেন রোগীর আত্মীয়রা। ১১ দিন জন্ডিসে আক্রান্ত বাচ্চাকে মেডিক্যালে ভর্তি করেছেন বেলিয়াতোড়ের বাসিন্দা নবীন চেল। তাঁর ক্ষোভ, “সোমবার রাতে আমার বাচ্চাকে হাসপাতালে ভর্তি করেছি। মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত মাত্র একবারই চিকিত্‌সক তাকে দেখেছে। ওয়ার্ডে কোনও চিকিত্‌সককেই দেখা যাচ্ছে না।” রাইপুর থেকে তিন দিনের বাচ্চাকে নিয়ে এসেছেন বুদ্ধদেব মুর্মু। তিনি বলেন, “হাসপাতালে চিকিত্‌সক নেই। ওয়ার্ডে শুধু কয়েকজন নার্স বসে রয়েছেন। এ ভাবে চিকিত্‌সা হবে কি ভাবে বুঝতে পারছি না।” পুরুলিয়ার কাশীপুরের বাসিন্দা সীমন্ত মুর্মু বলেন, “আমার দু-বছরের বাচ্চার বুকে কফ জমেছে। রবিবার ওকে ভর্তি করেছি। কিন্তু সোমবার সকাল থেকেই নিয়মিত চিকিত্‌সক আসছেন না।”
ওয়ার্ডগুলিতে যে পর্যাপ্ত চিকিত্‌সক নেই সে কথা স্বীকার করে নিয়েছেন বাঁকুড়া মেডিক্যালের এক আধিকারিক। তিনি বলেন, “ওয়ার্ডগুলিতে পর্যাপ্ত চিকিত্‌সক নেই। মেডিক্যাল অফিসার ও শিক্ষক চিকিত্‌সকেরা কোনও মতে হাসপাতাল সচল রেখেছেন। এই পরিস্থিতিতেও মঙ্গলবার কিছু চিকিত্‌সক ছুটিতে চলে যাওয়ায় সমস্যা আরও বেড়েছে।” তবে এ দিনের বিক্ষোভের জেরে মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ তাঁর আগের বক্তব্য থেকে অবশ্য কিছুটা সরে এসেছেন। তিনি বলেন, হাউসস্টাফ ও জুনিয়র চিকিত্‌সকেরা কর্মবিরতি করায় কিছুটা সমস্যা তো হচ্ছেই। এত বড় হাসপাতালের কাজ শুধু মেডিক্যাল অফিসার বা শিক্ষক চিকিসকদের দিয়ে চালানো সম্ভব নয়। তবে রোগীদের যাতে কোনও অসুবিধা না হয় তার জন্য আমরা আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।”
জুনিয়র চিকিত্‌সক অর্পিত সাহা, সোমনাথ দে বলেন, “হাসপাতালের নিরাপত্তা ব্যবস্থা কড়া না হলে আমাদের পক্ষে কাজ চলানো সম্ভব নয়। দিন বা রাত কোনও সময়ই নিরাপত্তা নেই এখানে।” তাঁদের দাবি, “মদ্যপ অবস্থায় রোগীর আত্মীয়রা হাসপাতালে ঘোরাফেরা করেন। কড়া নিরাপত্তার ব্যবস্থার দাবি করেছি।” মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ বলেন, “নিরাপত্তা বাড়ানোর ব্যাপারে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করব। হাউসস্টাফ ও জুনিয়র চিকিত্‌সকেরা আজ থেকে স্বাভাবিক পরিষেবা দেবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন।”

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.