এ যেন নেই-রাজ্য!
রোগীকে পাঁজাকোলা করে তুলে নিয়ে যেতে হচ্ছে অপারেশন থিয়েটারে। কেননা লিফট খারাপ। বিকেল ৫টার পরে ফার্মাসি বন্ধ। অতএব নার্সদের কাছে যেটুকু জরুরি ওষুধ থাকে, তা বাদে সবই বাইরে থেকে আনাতে হয়। আলট্রাসোনোগ্রাফি যন্ত্র খারাপ এক বছর ধরে। বাইরে থেকেই তার ব্যবস্থা করতে হয় রোগীদের। এক্স-রে মেশিন উপযুক্ত মানের নয়। ছ’মাস ধরে ফিজিওথেরাপিস্ট নেই সল্টলেকের রাষ্ট্রীয় হোমিওপ্যাথি সংস্থায়।
এই সব অভিযোগ শুধু রোগীদের নয়, হাসপাতালের পড়ুয়াদেরও। এমনকী শিক্ষকদেরও একাংশ অভিযোগ মেনে নিয়েছেন। এমন সব অভিযোগের সঙ্গে সঙ্গে বেতন, ছাত্রদের ছুটি-সহ নানা দাবিতে সোমবার সকাল থেকে রাতভর ঘেরাও করে রাখা হয় অধিকর্তাকে। মঙ্গলবার ভোরে পুলিশ তাঁকে উদ্ধার করে।
প্রায় গোটা একটা দিন তাঁকে ঘেরাও করে রাখায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন হাসপাতালের অধিকর্তা সমীরকুমার নন্দ। অধিকর্তার অভিযোগ, তাঁর সঙ্গে অমানবিক আচরণ করা হয়েছে। আর রোগীদের পরিবারের অভিযোগ, কয়েক মাস ধরে হাসপাতালে দুরবস্থা চলছে। ব্যাহত হচ্ছে পরিষেবা। কিন্তু বেহাল পরিকাঠামো ঠিক করার কোনও চেষ্টা চোখে পড়ে না।
সল্টলেকের ওই হাসপাতালে একটি অপারেশন থিয়েটার এবং ১০০ শয্যা আছে। দুই ২৪ পরগনা, কলকাতা-সহ অন্তত সাতটি জেলা থেকে রোজ গড়ে প্রায় ২৫০০ হাজার রোগী ওখানে যান চিকিৎসার আশায়। ছাত্রদের অভিযোগ, বারবার সমস্যার কথা বলা সত্ত্বেও অধিকর্তা আমলই দিচ্ছেন না। চিকিৎসার ন্যূনতম পরিকাঠামো নেই। ছুটি ও বেতন নিয়ে নানা ধরনের বৈষম্য চলছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে অধিকর্তা আশ্বাস দিলেও কাজ হয়নি। ছাত্রদের পক্ষে আবীর প্রামাণিক বলেন, “চিকিৎসার পর্যাপ্ত পরিকাঠামো নেই। কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে থাকা একটি হাসপাতালে তো অর্থের সমস্যা নেই। তা সত্ত্বেও দীর্ঘদিন ধরে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না কেন?”
অধিকর্তা যে অমানবিক ব্যবহারের অভিযোগ করেছেন, তা জানানো হলে পড়ুয়ারা জানান, কোনও অমানবিক আচরণ করা হয়নি। রাতে খাবার সরবরাহের আবেদনও জানানো হয়েছিল। এ দিন ভোরে প্রায় ১০টি ভ্যানে বিশাল পুলিশবাহিনী এসে অধিকর্তাকে উদ্ধার করে। ছাত্রদের অভিযোগ, ঘেরাও কর্মসূচির পরেও অধিকর্তা তাঁদের সঙ্গে কথা বলেননি। অধিকর্তা তাঁদের কোনও কথাই শুনছেন না, উল্টে এই নিয়ে দ্বিতীয় বার হাসপাতালে পুলিশ ঢোকালেন তিনি।
কী বলছেন অধিকর্তা? পরিকাঠামো সংক্রান্ত সমস্যার কথা স্বীকার করেছেন অধিকর্তাও। তিনি বলেন, “ঘরের কথা বাইরে বলব না। সমস্যা দূর করতে পরিকল্পনা করা হচ্ছে। আজ বললে কালই তো সমস্যা মিটবে না। তবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” |