ক্ষুব্ধ নীতীশ
বনধ ঘিরে রাস্তায় সংঘর্ষ বিজেপি-জেডিইউয়ের
মাত্র তিন দিন আগে শেষ হয়েছে ১৭ বছরের বন্ধুত্ব। আর তিন দিনের মধ্যেই যুযুধান দু’পক্ষ, বিজেপি-জেডিইউ জড়িয়ে পড়ল রাস্তার মারামারিতে!
একেবারে সম্মুখসমরে!
পটনার বীরচন্দ পটেল পথে রাজ্যের সব বড় রাজনৈতিক দলের দফতর। বিজেপি, জেডিইউ, আরজেডি, সিপিআই-এমএল, বসপা সবারই দফতর এই রাস্তার দু’দিকে। আজ সকাল থেকে বিজেপির ডাকা বিহার বন্ধে বিজেপি-জেডিইউ, এই দু’দলের ছাড়া বাকি সব রাজনৈতিক দলের দফতরই ছিল বন্ধ। সকাল থেকেই বিজেপি অফিস ছিল জমজমাট। সকাল ন’টা নাগাদ জেডিইউ অফিসেও একে একে কর্মী-সমর্থকরা জড়ো হতে থাকেন। ততক্ষণে বিজেপি অফিসের সামনে কয়েক হাজার নেতা-কর্মী-সমর্থক জড়ো হয়েছে ‘নীতীশ কুমার মুর্দাবাদ’, ‘নরেন্দ্র মোদী জিন্দাবাদ’ স্লোগান দিতে থাকেন।
আগুনটা ভিতরে ভিতরে জ্বলছিলই। বিশেষত কাল থেকে বিজেপি-জেডিইউ নেতাদের পারস্পরিক বিষোদ্গার উত্তাপ আরও বাড়িয়ে দিয়েছিল। তাতে ঘি পড়ল সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ। বিজেপি অফিসে খবর এল, জেডিইউ অফিস থেকে রাজীব রঞ্জনের নেতৃত্বে একটি মিছিল আসছে। এর পরের ছবিটা অনেকটাই ফিল্মি! রাজীব রঞ্জনের সঙ্গে শ’খানেক জেডিইউ সমর্থকের মিছিল। সেখানে স্লোগান, ‘নীতীশ কুমার জিন্দাবাদ’, ‘বিজেপি মুর্দাবাদ’। অন্য দিকে, গেরুয়া শিবিরের হাজারখানেক সমর্থকের জোরালো স্লোগান, ‘জয় শ্রী রাম’। দুই মিছিলের মাঝখানে বড়জোর চার-পাঁচ জন পুলিশ। নিছকই দর্শকের ভূমিকায়!
বিজেপি-জেডিইউ হাতাহাতি। মঙ্গলবার জয়প্রকাশের তোলা ছবি।
মিছিল কাছাকাছি আসতেই আচমকা দু’পক্ষের ঝান্ডা বদলে হয়ে গেল লাঠি! বিজেপি শিবির থেকে স্লোগান উঠল ‘আক্রমণ’। শ’খানেক জেডিইউ সমর্থকের উপরে ঝান্ডা নিয়েই ঝাঁপিয়ে পড়ল বিজেপি সমর্থকরা। খণ্ডযুদ্ধ শুরু হয়ে গেল দু’পক্ষের মধ্যে! ঝান্ডার ডান্ডার আঘাতে নিমেষে মাথা ফেটে গলগল করে রক্ত গড়াতে শুরু করল এক জেডিইউ সমর্থকের। প্রায় মিনিট দশেক চলার পরে ঘটনাস্থলে এসে পৌঁছয় বিশাল পুলিশবাহিনী।
ঘটনার জন্য ততক্ষণে শুরু করেছে পারস্পরিক দোষারোপ। দু’দলেরই দাবি, সংঘর্ষে দু’দলেরই দশ জন করে সমর্থক গুরুতর জখম হয়েছেন। বিজেপি নেতা শাহনওয়াজ হুসেনের দাবি, “জেডিইউ সমর্থকেরা আমাদের অফিস দখল করতে এসেছিল। সাধারণ মানুষ ওদের তাড়িয়ে দিয়েছে। নীতীশ কুমার এখন লালু-জমানার নৈরাজ্য ফিরিয়ে আনতে চাইছেন।” রাজীব রঞ্জনের পাল্টা দাবি, “আমরা শান্তিপূর্ণ মিছিল করছিলাম। তার মধ্যে বিজেপি সমর্থকরা আক্রমণ করল। বেরিয়ে পড়ল আরএসএসের আসল চেহারা।”
নীতীশ কালই দলের নেতা-কর্মীদের নির্দেশ দিয়েছিলেন, বিজেপির ডাকা বনধ ব্যর্থ করতে দল যেন রাস্তায় না নামে। এর পরেও দলের মিছিল হওয়ায় যথেষ্ট ক্ষুব্ধ তিনি। দলের এক প্রথম সারির এক নেতার কথায়, “এটা একেবারেই অনভিপ্রেত ঘটনা। দল এই পদক্ষেপকে সমর্থন করে না।” তবে জেডিইউয়ের তরফে যা-ই বলা হোক না কেন, বিজেপির আক্রমণের মূল লক্ষ্য কিন্তু ছিলেন নীতীশ কুমারই। বিজেপির রাজ্য সভাপতি মঙ্গল পাণ্ডে বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের নির্দেশেই ওই হামলা হয়েছে। এই ঘটনা থেকেই প্রমাণিত নীতীশ কোন পথে চলতে চাইছেন।” তবে সার্বিক ভাবে বনধ সফল হওয়ার জন্য বিহারের মানুষকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন মঙ্গল পাণ্ডে। জেডিইউ-বিজেপি মারপিটের ঘটনাকে কটাক্ষ করতে ছাড়েননি লালু প্রসাদ। তিনি বলেন, “আরএসএস আজ নীতীশকে তার ‘অওকাত’ বুঝিয়ে দিয়েছে।”
প্রশাসন সূত্রের খবর, এ দিন শুধু পটনা নয়, পটনা সিটি, মুজফ্ফরপুর-সহ রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় বনধকে কেন্দ্র করে দু’তরফের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। মুজফ্ফরপুরের ইসলামপুর এবং জুরান চাপরা রোড এলাকায় জেডিইউ-বিজেপি সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। সেখানেও কয়েক জন জখম হয়েছেন। সংঘর্ষের পরে বন্ধের সমর্থনে মিছিল বের করেন বিজেপি নেতা-কর্মীরা। মিছিলে দলের কেন্দ্রীয় নেতা রবিশঙ্কর প্রসাদ, রাজীবপ্রতাপ রুডি, শাহনওয়াজ হুসেন, সুশীল মোদী উপস্থিত ছিলেন। ডাকবাংলো মোড়ে বিজেপি নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়। পুলিশ সূত্রের খবর, সারা রাজ্যে ৩২২৭ বনধ সমর্থককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এর মধ্যে পটনাতেই গ্রেফতার হয়েছেন ৭৮৪ জন। পটনায় জেডিইউ অফিসের সামনে রাখা একটি গাড়ি থেকে রাইফেল উদ্ধার হওয়াকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা ছড়ায়। জেডিইউয়ের দাবি করা হয়েছে, গাড়িটি তাদের কোনও সমর্থকের নয়। বিজেপি শিবিরের পাল্টা দাবি, অশান্তি ছড়াতে জেডিইউ অস্ত্র জড়ো করছে, এটা তার প্রমাণ।

পুরনো খবর:


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.