|
|
|
|
ক্ষত মেরামতের জোড়া কৌশল |
আডবাণীর বাড়িতে মোদী, যাবেন না অযোধ্যা |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
বিজেপি-র মুখ হিসেবে তিনি উঠে আসতেই ভাঙন ধরেছে এনডিএ-তে। বিরূপ হয়েছেন খোদ দলের প্রতিষ্ঠাতা। এই জোড়া ধাক্কা সামাল দেওয়ার চেষ্টায় আজ দু’টি কাজ করলেন নরেন্দ্র মোদী। প্রথমত, দিল্লিতে লালকৃষ্ণ আডবাণীর বাড়ি গিয়ে তাঁর মন জয়ের চেষ্টা করেছেন। দ্বিতীয়ত, বিশ্ব হিন্দু পরিষদের ডাকে অযোধ্যা যাবেন না জানিয়ে এটা বোঝানোর চেষ্টা করেছেন যে, হিন্দুত্ব নয়, উন্নয়নই তাঁর হাতিয়ার।
গোয়ার বৈঠকে মোদীকে লোকসভা ভোটে প্রচার কমিটির প্রধান করার পরেই ক্ষোভে দলীয় পদ ছেড়েছিলেন আডবাণী। সঙ্ঘের মধ্যস্থতায় পদত্যাগপত্র ফিরিয়েছেন বটে, কিন্তু রাগ যে তাঁর পড়েনি সেটা বোঝা গিয়েছে গত রবিবার। নীতীশ কুমার এনডিএ ছাড়ার পরেই আডবাণী বলেছেন, ‘গোয়ায় তাড়াহুড়ো করার পরিণতি এটাই’। এই পরিস্থিতিতে আজ আডবাণীর সামনে বসে মোদী বলে এলেন, “আপনিই আমার নেতা। আমি আজ যা, তা আপনারই জন্য। যদি কোনও ভুল করে থাকি, মার্জনা করবেন।”
যোজনা কমিশনে গুজরাতের বার্ষিক যোজনা বরাদ্দ স্থির করার জন্য মঙ্গলবার দিল্লি এসেছিলেন মোদী। সেই সুযোগে লোকসভা এবং ছয় রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের প্রচারকৌশল স্থির করার লক্ষ্যে প্রথম বৈঠকটিও তিনি সেরে ফেললেন দলের সদর দফতরে। কিন্তু দিল্লিতে নেমেই মোদীর প্রথম গন্তব্য ছিল আডবাণীর বাড়ি। তার পর অটলবিহারী বাজপেয়ী এবং মুরলীমনোহর জোশীর সঙ্গেও দেখা করেন তিনি। |
|
সহাস্য। আডবাণীর বাড়ি পৌঁছে। ছবি: এএফপি |
বিজেপিতে আডবাণীর গুরুত্ব পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হলে তবেই তারা এনডিএ-তে ফিরবে বলে জানিয়েছে জেডিইউ। কিন্তু মোদী-প্রশ্নে নীতীশের চাপের কাছে যে মাথা নোয়ানো হবে না, সেটা ঠিকই করে ফেলেছে বিজেপি। পাশাপাশি, আডবাণী-প্রসঙ্গ তুলে নীতীশরা যে ভাবে বিজেপি-র অন্তর্কলহের দিকে ইঙ্গিত করছেন, সেটাও তারা হজম করতে নারাজ। তাই বিহারে আস্থাভোটের প্রাক্কালে বিজেপি-র মধ্যে সনাতন অবিভক্ত হিন্দু পরিবারের ছবিটা সামনে এনেই নীতীশকে বার্তা দেওয়া হবে বলে ঠিক হয়। আজ আডবাণীর সঙ্গে দেখা করে মোদী ঠিক সেই কাজটাই করলেন বলে বিজেপি সূত্রের খবর।
আজ এমনিতে আডবাণীর সঙ্গে সঙ্ঘ-প্রধান মোহন ভাগবতের বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। পদত্যাগপত্র ফিরিয়ে নিতে আডবাণীকে রাজি করিয়েছিলেন এই ভাগবতই। তার পর এই প্রথম তাঁদের মুখোমুখি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সন্ধ্যায় আডবাণীর বাসভবন সূত্রে জানানো হয়, দিল্লি পৌঁছতে দেরি হচ্ছে ভাগবতের। তাই আজ আর বৈঠক হবে না। দলীয় সূত্রের খবর, আগামী কাল আডবাণীর সঙ্গে প্রাতরাশে মিলিত হতে পারেন ভাগবত। অথবা, বিহারে ভোটাভুটি মিটে গেলেও দু’জনের কথা হতে পারে। বিজেপি নেতাদের একাংশের মতে, আজ আডবাণীর সঙ্গে মোদীর দেখা করা এবং একই সঙ্গে ভাগবতের বৈঠকটি না-হওয়ার পিছনে নির্দিষ্ট রাজনৈতিক কৌশল রয়েছে।
ভাগবতের সঙ্গে আজ বৈঠক হলে আডবাণী তাঁর উষ্মার কথা জানাতেও পারতেন। বিহারে আস্থা ভোটের আগে রফাসূত্র বের করার জন্য চাপ দিতে পারতেন। কিন্তু বৈঠক পিছিয়ে যাওয়া, মোদীর ঘুরে যাওয়া এবং ভোট-প্রচার নিয়ে বৈঠক সেরে ফেলার মধ্য দিয়ে একাধারে আডবাণী-সুষমা শিবির এবং নীতীশ কুমারকে বুঝিয়ে দেওয়া হল এই মুহূর্তে মোদীকে সামনে রেখে নির্বাচনে যাওয়া ছাড়া আর কোনও বিকল্পের কথা ভাবা হচ্ছে না। তার আগে আডবাণী-জোশীর মান ভাঙানোর সুযোগটা এ দিন পেয়ে গেলেন মোদী।
শুধু সুযোগই পেলেন না, তার পূর্ণ সদ্ব্যবহারও করলেন। প্রচার কমিটির প্রধানের পদ পেয়েই আডবাণীকে ফোন করেছিলেন মোদী। আডবাণী ইস্তফার চিঠি পাঠানোর পরেও ফোন করেছিলেন। এ দিন একেবারে বাড়ি এসে আডবাণীকে বলে গেলেন, যদি ভুল হয়ে থাকে ক্ষমা করুন। আডবাণীকেই যে তিনি রাজনৈতিক গুরু মানেন, সে কথাও বারংবার বললেন। এতে দলের ভাবমূর্তিতে অনেকটাই প্রলেপ পড়ল বলে আশা করছেন বিজেপি নেতারা। দলীয়
সূত্রের খবর, আডবাণীও নতুন করে মোদীর সামনে এ দিন আর অসন্তোষ প্রকাশ করেননি।
এর আগে আডবাণী চেয়েছিলেন, মোদীকে লোকসভায় নির্বাচনী প্রচারের দায়িত্ব দেওয়া হলেও বিধানসভার জন্য একটি পৃথক কমিটি বানানো হোক। সভাপতি রাজনাথ সিংহ সেই প্রস্তাব আগেই খারিজ করে দিয়েছেন। এ দিন দলের সদর দফতরে প্রচারকৌশল নিয়ে প্রথম বৈঠকেই মোদী কিন্তু লোকসভার পাশাপাশি এ বছরে ছয় রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচন নিয়েও আলোচনা করেছেন। বুঝিয়ে দিয়েছেন, হিন্দুত্ব নিয়ে উগ্র প্রচারের পথে হাঁটবেন না তিনি। অযোধ্যায় যাওয়ার জন্য বিশ্ব হিন্দু পরিষদের আমন্ত্রণ থাকলেও সেখানে যাবেন না। উন্নয়ন এবং সুশাসনের প্রতিশ্রুতিকে হাতিয়ার করেই লড়াইয়ে নামবেন। কেন? রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, সারা দেশের মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠতে মোদী এ বার বাজপেয়ী হতে উঠতে চাইছেন। বাজপেয়ী জমানায় আডবাণী ছিলেন দলের কট্টরপন্থী মুখ। পরে আডবাণী যখন ধীরে ধীরে নিজের ভাবমূর্তি পরিবর্তনের পথে হাঁটলেন, তখন মোদী কট্টরপন্থার ধ্বজা ওড়াচ্ছিলেন। এখন মোদীর পরিবর্তনের পালা। হিন্দুত্বের তাস এখন খেলবেন উমা ভারতী-বরুণ গাঁধীরা, ভিএইচপি-সঙ্ঘ নেতারা। মোদী গা বাঁচিয়ে চলবেন। সেই কারণেই অযোধ্যা না-যাওয়ার সিদ্ধান্ত। উত্তরপ্রদেশের মতো গো-বলয়ের কোনও রাজ্য থেকেই তিনি প্রচার শুরু করতে চান বটে। কিন্তু সেখানেও বাজপেয়ী জমানা এবং বর্তমানে বিজেপি শাসিত রাজ্যের সুশাসনের কথাই তুলে ধরা হবে।
|
পুরনো খবর: ‘জনপ্রিয়’ মোদীর পাশেই সঙ্ঘ, বিদ্রোহে ইতি টানলেন আডবাণী |
|
|
|
|
|