|
|
|
|
পৃথক তেলেঙ্গানা গঠনে নারাজ সনিয়া-মনমোহন |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
শেষ মুহূর্তে বড় কোনও অঘটন না-ঘটলে পৃথক তেলেঙ্গানা রাজ্য গঠন না করারই সিদ্ধান্ত নিতে চলেছেন সনিয়া গাঁধী-মনমোহন সিংহ।
লোকসভা ভোটের আগে পৃথক রাজ্যের দাবিতে সম্প্রতি ফের উত্তাল হয়েছে তেলেঙ্গানা। সেই দাবিতে সায় দিয়ে স্থানীয় দুই কংগ্রেস সাংসদ ইতিমধ্যেই দল ছেড়ে তেলেঙ্গানা রাষ্ট্রীয় সমিতিতে যোগ দিয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে তেলেঙ্গানা নিয়ে কয়েক দফায় কংগ্রেস কোর গ্রুপের বৈঠকে আলোচনা করেন সনিয়া-মনমোহন। তার পর দলীয় তরফে অন্ধ্রপ্রদেশের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা তথা কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী গুলাম নবি আজাদ এ-ও জানিয়ে দিয়েছিলেন, জুন মাসের মধ্যেই তেলেঙ্গানার ব্যাপারে চূড়ান্ত অবস্থান জানাবে কংগ্রেস।
যদিও সরকারি ভাবে সেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এখনও ঘোষণা হয়নি। কিন্তু কংগ্রেস সূত্রে খবর, পরিস্থিতি পর্যালোচনার পর সনিয়া-মনমোহন এই সিদ্ধান্তই নিয়েছেন যে, পৃথক তেলেঙ্গানা গঠনে সায় দেবে না কংগ্রেস। অন্ধ্রপ্রদেশের রাজ্যপালকে দিল্লিতে ডেকে আজ সেই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েও দেওয়া হয়েছে কংগ্রেস নেতৃত্বের তরফে। পরে দলের এক শীর্ষ নেতা জানান, হাইকম্যান্ডের সেই সিদ্ধান্তের ইঙ্গিত কাল কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার রদবদল থেকেই পাওয়া গিয়েছে। অন্ধ্রের দুই কংগ্রেস সাংসদ কে এস রাও ও যেশুদাসু সেলমকে মন্ত্রিসভায় আনা হয়েছে। এরা দু’জনেই পৃথক তেলেঙ্গানার ঘোর বিরোধী। |
|
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অনেকে অবশ্য মনে করছেন, শেষ পর্যন্ত যদি তেলেঙ্গানা গঠন না করার দৃঢ়তা দেখাতে পারে কংগ্রেস, তা হলে বুঝতে হবে তাদের আত্মবিশ্বাস বাড়ছে। বিরোধী শিবিরের ছত্রভঙ্গ অবস্থাই এমন দৃঢ় সিদ্ধান্ত নেওয়ার সাহস জোগাচ্ছে তাদের। তবে কংগ্রেস সূত্রে বলা হচ্ছে, চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে অনেক রাজনৈতিক অঙ্ক রয়েছে। প্রথমত, সনিয়া-রাহুলের কাছে এটা স্পষ্ট যে, পৃথক তেলেঙ্গানা গঠনে সায় দেওয়ার অর্থ লোকসভা ভোটের আগে দেশজুড়ে নতুন বিতর্কের জন্ম দেওয়া। সে ক্ষেত্রে গোর্খাল্যান্ড, বিদর্ভ, হরিৎক্ষেত্রের মতো পৃথক রাজ্যের দাবি নিয়ে ফের পরিস্থিতি অশান্ত হতে পারে। দ্বিতীয়ত, পৃথক তেলেঙ্গানা রাজ্য গঠনে সায় না দিলেও সেখানকার সব কংগ্রেস সাংসদের পক্ষে দল ছেড়ে টি আর এস-এ সামিল হওয়া সম্ভব নয়। কারণ, টিআরএস-এ গেলে তাঁরা সবাই যে লোকসভা ভোটে টিকিট পাবেন, তা নয়। তৃতীয়ত, গত লোকসভা ভোটের মতো তেলেঙ্গানায় এ বারও বিরোধী ভোট ভাগাভাগির পূর্ণ সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে কংগ্রেসের একেবারে ধুয়েমুছে যাওয়ার আশঙ্কা নেই বলেই অনেকে মনে করছেন।
এই অঙ্ক কষার পাশাপাশি তেলেঙ্গানা বাদে বাকি অন্ধ্রে নিজেদের শক্তি ধরে রাখার চেষ্টা চালাচ্ছেন সনিয়া-রাহুল। সেই কারণেই গতকাল উপকূলবর্তী অন্ধ্রপ্রদেশের নেতা কে এস রাওকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় সামিল করা হয়েছে। অন্ধ্রপ্রদেশে কংগ্রেস সরকার এবং প্রদেশ কংগ্রেসের মধ্যে সমন্বয় কমিটির চেয়ারম্যান হলেন রাও। তা ছাড়া লোকসভা ভোটের আগে অন্ধ্রপ্রদেশের প্রয়াত কংগ্রেস মুখ্যমন্ত্রী রাজশেখর রেড্ডির পুত্র জগন্মোহন রেড্ডির সঙ্গেও তলে তলে সমঝোতা করতে চাইছেন কংগ্রেস নেতৃত্ব। সূত্রের খবর, মূলত সেই জন্যই এ বার অন্ধ্রপ্রদেশের দায়িত্ব দিগ্বিজয় সিংহকে দিয়েছেন রাহুল গাঁধী। কংগ্রেস ছেড়ে জগন্মোহন ইতিমধ্যেই ওয়াই এস আর কংগ্রেস নামে নতুন দল গড়েছেন। লোকসভা ভোটে তিনি কংগ্রেসের যাত্রা ভঙ্গ করবেন বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ধারণা। কিন্তু তাঁর সঙ্গে সমঝোতা করে খেলাটাই ঘুরিয়ে দিতে চাইছেন দিগ্বিজয়রা।
জগনকে কেন্দ্র করে কংগ্রেসের এই কৌশল কিছুটা আঁচ করতে পেরেছেন বিরোধীরাও। এ ব্যাপারে টিডিপি নেতা নমো নাগেশ্বর রাও বলেন, “আসলে জগনকে কংগ্রেস ভয় দেখাচ্ছে। রাজশেখর-পুত্র যদি কংগ্রেসের সঙ্গে সমঝোতা করে নেন, তা হলে সিবিআই মামলা থেকে তাঁকে রেহাইয়ের ব্যবস্থা করে দেবে কংগ্রেস। না হলে লোকসভা ভোটের সময়েও জগনকে জেলে আটকে রাখার ব্যবস্থা করবে কংগ্রেস। তবে অন্ধ্রের মানুষও এর জবাব দেওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়ে রয়েছেন।”
|
পুরনো খবর: সময় কিনতে পৃথক তেলেঙ্গানায় সায় কংগ্রেসের |
|
|
|
|
|