|
|
|
|
পিস্তলের হাতবদলে ঘুম ছুটেছে পুলিশের |
সুরবেক বিশ্বাস • কলকাতা |
তিন বছর আগের ঘটনা। তা-ও আবার একটি মাত্র পিস্তল লেনদেনের। কিন্তু পিস্তলটি রাঁচি থেকে এনে কলকাতার মেটিয়াবুরুজে হাতবদল হয়েছে, এ কথা জানতে পেরেই ত্রস্ত হয়ে পড়েছেন কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দারা। কারণ রাঁচি থেকে আগ্নেয়াস্ত্রটি কলকাতায় নিয়ে এসেছিল ইন্ডিয়ান মুজাহিদিন জঙ্গি এবং দেশের বেশ কয়েকটি বড় শহরে বিস্ফোরণে অভিযুক্ত মনজর ইমাম। আর যার হাতে সে গুলি-সহ ওই পিস্তল
তুলে দিয়েছিল, সে মেটিয়াবুরুজেরই বাসিন্দা, নিষিদ্ধ সংগঠন সিমি-র
নেতা এবং ইন্ডিয়ান মুজাহিদিন (আইএম)-এর ঘনিষ্ঠ হারুন রশিদ। মুম্বইয়ে ২০১১ সালের ১৩ জুলাই ধারাবাহিক বিস্ফোরণেও হারুনের নাম উঠে এসেছে।
এ বছরের ৪ মার্চ ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি (এনআইএ) রাঁচির কাঁকে থেকে মনজরকে গ্রেফতার করে। তাকে জেরা করেই এনআইএ জেনেছে, সে কলকাতায় হারুনকে ২০১০-এর গোড়ায় একটি নাইন এমএম পিস্তল দিয়েছিল। হারুনকে গত বছর জুলাই মাসে শহর থেকেই গ্রেফতার করেছিল কলকাতা পুলিশের স্পেশ্যাল টাস্ক ফোর্স (এসটিএফ)। |
|
অভিযুক্ত ইন্ডিয়ান মুজাহিদিন জঙ্গি মনজর ইমাম। |
কিন্তু একটি মাত্র পিস্তল রাঁচি থেকে কলকাতায় আসার ঘটনায় কেন উদ্বিগ্ন গোয়েন্দারা?
কলকাতা পুলিশের এক শীর্ষ কর্তার কথায়, “মনজরের সঙ্গে যে গত ছ’বছর ধরে তার যোগাযোগ ছিল, সে বিষয়টি আমরা হারুনকে জেরা করে গত বছরই নিশ্চিত হয়েছিলাম। হাজারিবাগে সিমি-র একটি সভায় প্রথম দু’জনের দেখা হয়, যেখানে হারুনও বক্তৃতা করেছিল।” ওই কর্তা বলেন, “প্রথম দিকে সিমি ও পরে আইএম সংগঠনের সূত্রেই দু’জনের যোগাযোগ। আমরা জানতাম, পশ্চিমবঙ্গ থেকে কয়েক জন যুবককে বেছে নিয়ে জেহাদি প্রশিক্ষণে পাঠানোতেই হারুনের ভূমিকা শেষ। কিন্তু অস্ত্র লেনদেনে তার জড়িত থাকার বিষয়ে আমরা একেবারেই অন্ধকারে ছিলাম। মনজরের স্বীকারোক্তি থেকে বোঝা যাচ্ছে, আইএম-এর অস্ত্রও কলকাতায় হারুনের কাছে আসত।” ওই অফিসারের বক্তব্য, “মনজর হয়তো হারুনকে একটি পিস্তল দিয়েছিল। কিন্তু আমাদের আশঙ্কা, ঘটনাটি শুধু একটা পিস্তলেই শেষ নয়। বিভিন্ন সূত্র থেকে আগ্নেয়াস্ত্র, বিস্ফোরক আসত হারুনের কাছে।”
এনআইএ সূত্রের খবর, কাক্কু নামে রাঁচির এক অস্ত্র ব্যবসায়ীর কাছ থেকে সেই সময়ে মনজর দেড় লক্ষ টাকা দিয়ে তিনটি নাইন এমএম পিস্তল জোগাড় করেছিল। তারই একটি কলকাতায় গিয়ে হারুনকে দিয়ে আসতে মনজরকে নির্দেশ দিয়েছিল আবু ফয়জল। বাকি দু’টি পিস্তল আবু ফয়জল নিজেই নিয়েছিল। ২০০৮-এর আমদাবাদ বিস্ফোরণের মূল চক্রী হিসেবে অভিযুক্ত ওই আবু ফয়জলকে ২০১১-এ মধ্যপ্রদেশে গ্রেফতার করা হয়। গোয়েন্দাদের বক্তব্য, আবু ফয়জল, মনজর ইমামেরা সিমি-র সফদর নাগরি গোষ্ঠীর সদস্য হিসেবে পরিচিত এবং ওই গোষ্ঠী কেরলের ওয়াগমন শিবিরে জেহাদি প্রশিক্ষণ নিয়েছিল। মূলত ওয়াগমন শিবির মামলার অন্যতম প্রধান অভিযুক্ত হিসেবেই মনজরকে এনআইএ গ্রেফতার করেছে। |
|
এই ধরনেরই একটি নাইন এমএম পিস্তল হাতবদলের অভিযোগ উঠেছে। |
লালবাজার থেকে গোয়েন্দাদের একটি দল মনজরকে জেরা করতে কিছু দিন আগে হায়দরাবাদে যায়। জেরায় তারা জেনেছে, মেটিয়াবুরুজে হারুন একটি জেহাদি পত্রিকার অফিসে মনজরের কাছ থেকে পিস্তলটি নিয়েছিল। সেখানে তখন হারুনের বিশ্বস্ত দুই যুবক উপস্থিত ছিল। গোয়েন্দারা এখন ওই দু’জনের খোঁজ করছেন। মনজরের বক্তব্য, গার্ডেনরিচ-মেটিবাবুরুজ এলাকায় হারুনের অনুগামী ১০-১২ জন যুবক আছে, যারা জেহাদি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। হারুনকে ফের পুলিশি হেফাজতে নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। মনজর এখন কেরলের জেলে। হারুন অবশ্য কলকাতারই প্রেসিডেন্সি জেলে বন্দি। হারুন ও মনজরকে মুখোমুখি বসিয়ে জেরা করতে চান গোয়েন্দারা। তাঁদের আশা, সে ক্ষেত্রে এই রাজ্যে সিমি এবং আইএম-এর কার্যকলাপ সম্পর্কে নতুন তথ্য মিলতে পারে।
|
—নিজস্ব চিত্র |
পুরনো খবর
• হায়দরাবাদ বিস্ফোরণে জড়িত সন্দেহে ধৃত যুবক
• সিমি-র সদস্য সন্দেহে গ্রেফতার |
|
|
|
|
|