|
|
|
|
দেশজ মডেলে আস্থা রেখেই চিনা স্বপ্নের খোঁজে কারাট |
প্রেমাংশু চৌধুরী • নয়াদিল্লি |
‘চিনা স্বপ্ন’ দেখতে চিনে চললেন প্রকাশ কারাট।
আট বছর পরে গণপ্রজাতান্ত্রিক চিন সফরে যাচ্ছেন সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক। শেষ বার যান ২০০৫ সালে। তখন সবে হরকিষেণ সিংহ সুরজিতের বদলে দলের শীর্ষপদে তাঁর অভিষেক হয়েছে। ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির নয়া প্রজন্মের নেতাকে আমন্ত্রণ জানায় চিনা কমিউনিস্ট পার্টি। এ বার চিনের সরকার ও দলে নতুন নেতৃত্ব এসেছে। তাই ফের তাঁরা ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির কাণ্ডারী কে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। সেই আমন্ত্রণ রক্ষা করতে শনিবার গভীর রাতেই বেজিং রওনা হচ্ছেন কারাট।
এই আট বছরে অনেক জল গড়িয়েছে দু’দেশের কমিউনিস্ট পার্টিতেই। চিনের দেং জিয়াওপিংয়ের মডেল অনুসরণ করে পশ্চিমবঙ্গে শিল্পায়নের চেষ্টা করেছিল বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের বাম-সরকার। তার খেসারত দিয়ে ৩৪ বছরের বাম দুর্গের পতন ঘটেছে। যার পরে গত বছর কোঝিকোড় পার্টি কংগ্রেসে চিনের সমালোচনার পথ নিয়েছে সিপিএম। চিনের উন্নয়ন মডেল নিয়ে চুলচেরা বিতর্ক হয়েছে। মতাদর্শগত দলিলে চিনের সমালোচনা করে বলা হয়েছে, চিনে তিন দশকের আর্থিক সংস্কারের ফলে অভূতপূর্ব আর্থিক বৃদ্ধি হয়েছে ঠিকই, কিন্তু বাড়ছে অসাম্য ও দুর্নীতি। এই পরিস্থিতিতে চিনের ছাতার তলা থেকে বেরিয়ে প্রথম বার পুরোপুরি ভারতীয় পথে সমাজতন্ত্রের দিকে এগোনোর কথা বলেছে সিপিএম।
আজ কলকাতার সভায় সেই সুরই শোনা গিয়েছে বুদ্ধবাবুর বক্তৃতায়। যেখানে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অন্ধ ভাবে কোনও অর্থনৈতিক মডেলের অনুকরণ না করে দেশজ অর্থনীতির মধ্য থেকেই পথ খোঁজার কথা বলেছেন। তিনি মনে করিয়ে দেন, সারা বিশ্বে এখন বিরাট এক অর্থনৈতিক পরিবর্তন ঘটছে। তাতে ‘পুঁজিবাদী দুনিয়া’ যেমন সঙ্কটে পড়েছে, তেমনই চিন নিজেদের মতো করে বাজার অর্থনীতি নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছে। আবার ক্যারিবিয়ান ও লাতিন আমেরিকান দেশগুলি (এই প্রসঙ্গে চাভেসের ভেনেজুয়েলার কথা বলেন বুদ্ধবাবু) চলছে নিজস্ব অর্থনৈতিক মডেলে। এই অবস্থায় নানা দেশের অর্থনৈতিক মডেল খতিয়ে দেখা যেতে পারে যে তাতে গ্রহণযোগ্য কী কী আছে। কিন্তু পথ খুঁজতে হবে দেশজ কাঠামোর মধ্যেই। কারাটের চিন সফরের প্রেক্ষিতে এই দৃষ্টিভঙ্গি তাৎপর্যপূর্ণ মনে করা হচ্ছে। কারাট নিজেও যথেষ্টই চিনপন্থী ছিলেন। কিন্তু এখন পরিস্থিতি বদলেছে। সিপিএম পলিটব্যুরো নেতাদের হাবেভাবেই স্পষ্ট, তাঁরা আর আগের মতো চিনের সুরে সুর মেলাতে রাজি নন।
তবে চিনের ছত্রচ্ছায়া থেকে বেরোনোর কথা বললেও চিন কোন পথে হাঁটছে, তা নিয়ে সিপিএমের মধ্যে চর্চার শেষ নেই। সে কারণেই সাধারণ সম্পাদকের চিন সফর ঘিরে দলের মধ্যে ঔৎসুক্য প্রবল। চিনেও কিন্তু কমিউনিস্ট শাসনের বিরুদ্ধে জনমানসে অসন্তোষ তৈরি হয়েছে। এক দিকে আর্থিক উন্নয়ন, অন্য দিকে অসাম্য ও দুর্নীতির পরস্পরবিরোধিতা চিনের নেতারা কী ভাবে সামলান, তা নিয়ে এ কে গোপালন ভবন থেকে আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের নেতাদের প্রবল আগ্রহ। এর সঙ্গে রয়েছে চিনা কমিউনিস্ট পার্টির নতুন সাধারণ সম্পাদক তথা দেশের প্রেসিডেন্ট জি জিনপিংয়ের ‘চায়না ড্রিম’ স্লোগান। সিপিএমের কেন্দ্রীয় সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের ব্যাখ্যা, জিনপিং যে নতুন চিনা স্বপ্নের কথা বলছেন, তা ঠিক কী, সেটা এখনও স্পষ্ট নয়। জিনপিং চিনা বৈশিষ্ট্যপূর্ণ সমাজতন্ত্রের পথে এগোনোর কথা বলছেন। দেশপ্রেমের কথা বলছেন। উদ্ভাবনী উপায়ে আর্থিক সংস্কারের কথা বলছেন। দেশের মানুষের অসন্তোষ সামলাতে চিনের পার্টি নেতৃত্ব ঠিক কোন পথে হাঁটতে চাইছেন, কারাটের এই সফরে তার ইঙ্গিত মিলতে পারে। সেই কারণেই এই সফর তাৎপর্যপূর্ণ।
গত মে মাসে চিনা প্রধানমন্ত্রী লি খ্যছিয়াং যখন দিল্লিতে এসে মনমোহন সিংহের দিকে বন্ধুত্বের হাত বাড়ান, তখন ইতিবাচক বার্তা দিয়েছিল নয়াদিল্লিও। ইউপিএ-র সেই বিদেশনীতিকে স্বাগত জানিয়েছিলেন কারাট। বেজিং রওনা হওয়ার আগে তাঁর গলাতে উৎসাহেরই সুর। কারাট বলেন, “এ বার এক সপ্তাহের সফর। বেজিংয়ে চিনা কমিউনিস্ট পার্টির নেতাদের সঙ্গে মত বিনিময় হবে। সেখানে একটি আলোচনাসভাতেও যোগ দেব। ওখানকার দু’টি প্রদেশেও যাওয়ার কথা রয়েছে আমাদের।” কারাটের সফরসঙ্গী পলিটব্যুরো ও কেন্দ্রীয় কমিটির আরও চার নেতানেত্রী। এই দলে অবশ্য পশ্চিমবঙ্গের কেউ নেই। পলিটব্যুরো সদস্য তথা সিটু-র সভাপতি এ কে পদ্মনাভন রয়েছেন। কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে রয়েছেন ত্রিপুরার রমা দাস, অন্ধ্রের পেনুমাল্লি মধু এবং দিল্লির যোগেন্দ্র শর্মা। পশ্চিমবঙ্গ বাদ কেন? এ কে গোপালন ভবনের তরফে বলা হচ্ছে, পশ্চিমবঙ্গের নেতারা এখন পঞ্চায়েত নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত। তা ছাড়া রাজ্যের অনেক নেতাই গত কয়েক বছরে দলীয় প্রতিনিধি হিসেবে চিনে ঘুরে এসেছেন। সেই কারণেই এ বার পশ্চিমবঙ্গ থেকে কেউ নেই। |
|
|
|
|
|