|
|
|
|
বার্তা সঙ্ঘের, তবু নীতীশ-বিচ্ছেদ প্রায় চূড়ান্ত |
নিজস্ব সংবাদদাতা • পটনা ও নয়াদিল্লি |
ইঙ্গিতটা আরও স্পষ্ট হল। নীতীশ কুমারের জেডিইউ-এর সঙ্গে বিজেপির বিচ্ছেদ প্রায় চূড়ান্ত। শুধু ঘোষণাটাই বাকি বলে মনে করছে দুই শিবিরের শীর্ষ নেতৃত্বই।
নীতীশকে এনডিএ জোটে ধরে রাখতে লালকৃষ্ণ আডবাণী-সহ বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বের তরফে বারবার বোঝানো হলেও তাতে যে বিশেষ লাভ হবে না, দুই শিবিরের তরফেই সেই ইঙ্গিত মিলতে শুরু করেছে। সম্ভবত দু’-এক দিনের মধ্যেই এ ব্যাপারে চূড়ান্ত ঘোষণা হবে। এই অবস্থায় ভাঙন রুখতে শেষ পর্যন্ত আসরে নেমেছে সঙ্ঘ পরিবার। কিন্তু তাতেও কতটা লাভ হবে, তা নিয়ে সংশয় সব মহলেই। কারণ নীতীশ নিজেও জোট ছাড়ার ব্যাপারে মোটামুটি স্পষ্ট ভাবেই বার্তা দিয়েছেন।
নরেন্দ্র মোদীকে বিজেপির নির্বাচনী প্রচার কমিটির প্রধান করার পর থেকেই নীতীশ বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, তাঁরা বিজেপি-সঙ্গ ছাড়তে চলেছেন। এই পরিস্থিতিতে আডবাণী শিবির তো বটেই, বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বের তরফেও নীতীশকে বোঝানো হয়, মোদী কেবলই নির্বাচনী প্রচার কমিটির প্রধান। অন্তত এখনই তাঁকে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে তুলে ধরা হচ্ছে না। এ বার সঙ্ঘের মুখপত্র ‘অর্গানাইজার’-এও সেই একই কথা জানিয়ে নীতীশকে বার্তা দেওয়া হল। সেখানে বলা হয়েছে, মোদীকে বিজেপির নির্বাচনী প্রচার কমিটির প্রধান হিসাবে মনোনীত করার অর্থ এই নয় যে, তাঁকেই আগামী দিনে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী করা হবে। সেই সঙ্গে এ-ও বলা হয়েছে, এই মুহূর্তে জেডিইউয়ের এ ভাবে এনডিএ ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়া দেশের পক্ষে ভাল নয়। সঙ্ঘের বক্তব্য, ইউপিএ-কে হটাতে গেলে এনডিএ-কে একজোট হয়েই লড়তে হবে।
কিন্তু সঙ্ঘের এই বার্তাতেও কি এনডিএ জোট অটুট থাকবে? জেডিইউ শীর্ষ নেতৃত্বের তরফে কিন্তু ভাঙনের ইঙ্গিতই স্পষ্ট। স্বয়ং নীতীশ কুমারও এ দিন আনন্দবাজারকে ফোনে বলেন, “নরেন্দ্র মোদীর ব্যাপারে বিজেপির বাধ্যবাধকতা থাকতে পারে। আমি সেটা বুঝতে পারছি। কিন্তু আমারও তো কিছু বাধ্যবাধকতা আছে। আমিও তো চাইব, জোট শরিক হিসেবে বিজেপি সেটা বুঝুক।” তাঁর যুক্তি, মোদীকে নির্বাচনী প্রচার কমিটির প্রধান বলা হলেও আদতে তো বিজেপির প্রচারের আসল মুখ তিনিই। আর সাম্প্রদায়িক তকমা লেগে যাওয়া মোদীকে সামনে রেখে কোনও জোটে যাওয়া যে তাঁর পক্ষে অসম্ভব, তা তিনি বহু বারই স্পষ্ট করে দিয়েছেন। নীতীশের কথায়, “আডবাণী যতই বলুন, মোদীই সব নন, আমি তো জানি যে, নিজের দলেই আডবাণীর অবস্থান কতটা দুর্বল। তাই আমি অপারগ।”
বিজেপি সঙ্গে না থাকলে বিহারে দলের উচ্চবর্ণের ভোটব্যাঙ্কে যে ধস নামবে, এই বাস্তব সত্যটা বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে না জেডিইউ নেতৃত্বের। পাশাপাশি এ-ও স্পষ্ট, জোট ভাঙার দায় শেষ পর্যন্ত নীতীশদের ঘাড়েই পড়বে। কিন্তু নীতীশের কথায়, “রাজনীতিতে লাভ-লোকসানই শেষ কথা নয়। বিশ্বাসযোগ্যতার বিষয়টাও আছে।” কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর এই বক্তব্য একেবারেই মানতে নারাজ বিজেপি নেতৃত্ব। দলের বক্তব্য, যদি সাম্প্রদায়িকতাই প্রশ্ন হয়, তা হলে গুজরাত-দাঙ্গার পরেও নীতীশ কেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা ছাড়েননি? কেন তার পরেও প্রায় এগারো বছর বিজেপির সঙ্গে জোট রেখেছেন? সেই বিজেপির সঙ্গে জোট নিয়েই তো বিহারে দু’-দু’বার ক্ষমতায় এসেছেন, তা হলে এখন এই ধরনের কথা কেন?
এই অবস্থার মধ্যেই কাল সকাল ১১টা থেকে মুখ্যমন্ত্রী সরকারি বাসভবন, ১ অ্যানে মার্গে দলীয় বিধায়কদের নিয়ে আলোচনায় বসবেন দলের জাতীয় সভাপতি শরদ যাদব। দলের কার্যকরী সমিতি ইতিমধ্যেই জোটপ্রশ্নে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভার দিয়েছে নীতীশ কুমার এবং শরদ যাদবের উপরে। জেডিইউ-এর একটি সূত্রের দাবি, রবিবারই জোট ছাড়ার চূড়ান্ত ঘোষণা হতে পারে।
বিহারে জোট ভাঙলেও অবশ্য নীতীশ কুমারের সরকারের সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সমস্যা হবে না দলীয় সূত্রের খবর, এনডিএ জোট ভেঙে জেডিইউ বেরিয়ে আসার পরে দলের পক্ষ থেকে রাজ্যপাল ডি ওয়াই পটেলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হবে। জানা গিয়েছে, এখন পর্যন্ত ৬ জন নির্দল বিধায়কের মধ্যে ৫ জন জেডিইউকে সমর্থনের আশ্বাস দিয়েছে।
জোট ভাঙছে এটা ধরে নিয়ে অঙ্ক কষছে রাজ্য বিজেপিও। নীতীশকে চাপে ফেলার পাশাপাশি বিহারে নিজেদের শক্তিও দেখে নিতে চায় তারা। আজ কিছুটা সেই ইঙ্গিতই দিয়ে বিজেপি নেতা তথা রাজ্যের মন্ত্রী চন্দ্রমোহন রাই বলেছেন, “জোট ছাড়লে মুখ্যমন্ত্রীর গদি ছেড়ে নতুন করে মানুষের রায় নিন নীতীশ।” রাজ্যের দুই বিজেপি নেতা, উপমুখ্যমন্ত্রী সুশীল মোদী এবং রাজ্যে এনডিএ-র আহ্বায়ক নন্দকিশোর যাদবকে আজ আলোচনার জন্য ডেকে পাঠিয়েছিলেন নীতীশ। কিন্তু তাঁরা সে প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছেন। দু’জনেই মুখ্যমন্ত্রীকে জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁরা আলোচনায় যেতে রাজি নন। নন্দকিশোর যাদব বলেন, “যেখানে জাতীয় স্তরের নেতারা মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করছেন, সেখানে আমরা এই বিষয়ে আলোচনা বা মতামত দেওয়ার কে?” দু’দলের সম্পর্কের প্রশ্নে তিনি বলেন, “এটা জাতীয় বিষয়। এই নিয়ে রাজ্য নেতাদের কথা বলার অধিকার নেই।”
কেন মুখ্যমন্ত্রী দুই বিজেপি নেতাকে ডেকেছিলেন, তা নিয়ে জেডিইউ শিবির থেকে স্পষ্ট কিছু বলা না হলেও বিজেপি শিবিরের এক নেতার কথায়, “মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দিল্লি থেকে সকলেই যোগাযোগ করছেন। সেখানে নতুন কিছু তো হওয়ার নেই।” নন্দকিশোর বলেছেন, “রবিবারের মধ্যে সব স্পষ্ট হয়ে যাবে। সোমবার দেখা যাবে।”
জেডিইউ-এর রাজ্য সভাপতি বশিষ্ঠ নারায়ণ সিংহ অবশ্য বলছেন, “আমরা মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবনে ওঁদের জন্য অপেক্ষা করেছি। কিন্তু ওঁরা আসেননি। তবে এলে ভাল হতো।” বিজেপি শিবিরের মত, মুখ্যমন্ত্রী সংবাদমাধ্যমে সরাসরি মুখ খুলে জোট রাজনীতির শর্ত ভেঙেছেন। এ দিন দুই শিবিরে দফায় দফায় বৈঠক হয়। তাতে একটা বিষয় উঠে আসছে, জোট কে ভাঙবে। অর্থাৎ বিহারের মানুষের কাছে কে ‘ভিলেন’ হবে, তা নিয়েই এখন টানাপোড়েন চলছে দুই শিবিরে।
এই অবস্থায় জেডিইউকে পাশে পেতে পরোক্ষে বার্তা দিলেন কংগ্রেস নেতৃত্বও। দলের মুখপাত্র ভক্তচরণ দাস বলেন, “জেডিইউ একটি ধর্মনিরপেক্ষ দল। অতীতেও ধর্মনিরপেক্ষ দলগুলি এক জোট হয়ে সরকার গঠন করেছে। কংগ্রেসের ধর্মরিপেক্ষ দলের সঙ্গে জোট গড়তে কোনও সমস্যা নেই।” বিহারের কংগ্রেসের বিধায়কেরাও এনডিএ জোট ভেঙে গেলে নীতীশকে সমর্থন করার পক্ষে মত দিয়ে বার্তা দিয়েছে কংগ্রেস হাইকম্যান্ডকে। নীতীশকে কংগ্রেস আহ্বান করবে কি না, আজ অবশ্য সে বিষয়ে সরাসরি কোনও উত্তর দেননি কংগ্রেসের সহ-সভাপতি রাহুল গাঁধী। আজ শ্রীনগরে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “জেডিইউকে ডাকা হবে কি না, সেই সিদ্ধান্ত নেবেন দলের শীর্ষ নেতারা।”
|
পুরনো খবর: নীতীশ-বিদায় অনিবার্য, চেষ্টা দরজা খুলে রাখার |
|
|
|
|
|