দুলাল চন্দ, দেওয়ানহাট পঞ্চায়েতে তৃণমূল প্রার্থী। শুক্রবার দিনভর এলাকা চষে ভোটের প্রচার করলেন। স্বপন সাহা, তুফানগঞ্জ ২ পঞ্চায়েত সমিতির তৃণমূল প্রার্থী। প্রথমার্ধে দলের কাজে জেলা দফতরে, বিকালে বক্সিরহাট ফিরে প্রচারে যান বাড়ি বাড়ি। সিদ্ধার্থ মণ্ডল জেলা পরিষদের তৃণমূল প্রার্থী। সকাল সন্ধ্যা ধলপল ও লাগোয়া নির্বাচনী এলাকায় চক্কর কাটলেন তিনিও।
শুধু ওই তিন জন নয় জামাই ষষ্ঠীর দিনে দলের নির্দেশ মেনে শ্বশুরবাড়ির আমন্ত্রণ শিকেয় তুলে এভাবেই দিনভর প্রচারে ব্যস্ত থাকলেন কোচবিহার জেলার তৃণমূল প্রার্থীরা। পঞ্চায়েত ভোটের কথা মাথায় রেখে প্রার্থী জামাইদের শ্বশুরবাড়িতে ষষ্ঠী করতে যাওয়ার ব্যাপারে অলিখিত নিষেধাজ্ঞা জারি করেন দলের জেলা নেতৃত্ব। ব্লক সভাপতি থেকে স্থানীয় নেতাদের মাধ্যমে সমস্ত জামাই-প্রার্থীদের ষষ্ঠীর দিনে প্রচার স্বাভাবিক রাখার নির্দেশ পাঠানো হয়। সেইসঙ্গে জানিয়ে দেওয়া হয়, জামাই ষষ্ঠীর দিনে প্রতিটি বাড়িতে পরিবারের বেশিরভাগ সদস্য থাকেন। এই সুযোগকে কাজে লাগাতে হবে। তা ছাড়া বাইরের বিভিন্ন এলাকা থেকে যে জামাইয়েরা আসবেন তাঁদের সকলের কাছেও তৃণমূলকে সমর্থনের আবেদন জানানোর সুযোগ থাকছে।
জেলার নেতারা প্রার্থীদের জানান, ভোটপর্ব মিটে যাওয়ার পর জয়ের মিষ্টি নিয়ে শ্বশুরবাড়িতে যেতে পারলে জনপ্রতিনিধি জামাইয়ের মর্যাদা যেমন বাড়বে, তেমনি আনন্দটাও দ্বিগুণ হতে বাধ্য। জেলা নেতৃত্বের দাওয়াইয়ে তেড়েফুড়ে প্রচারে নামেন বেশিরভাগ প্রার্থীই। বিবাহিত মহিলা প্রার্থীদেরও নির্দেশ পাঠিয়ে বাপের বাড়ি স্বামীর সঙ্গে ষষ্ঠী করতে যাওয়া আটকানো হয়েছে বলে দলীয় সূত্রের খবর।
দলের জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, “দলের কর্মীদের কাছে পঞ্চায়েত ভোট সবথেকে বড় অনুষ্ঠান। তাছাড়া বহিরাগত জামাই ও স্থানীয় ভোটার, এই দুইয়ের কাছে পৌঁছানোর সুযোগ কাজে লাগানো দরকার। তাই সব প্রার্থী জামাইদের ষষ্ঠীতে শ্বশুরবাড়ি না যাওয়ার নির্দেশ দিতে হয়েছে। বিবাহিত মহিলা প্রার্থীদেরও একই কথা বলা হয়েছে।” তিনি জানান, জনপ্রতিনিধি হয়ে শ্বশুরবাড়ি গেলে জামাইরা যেমন বাড়তি কদর পাবেন ঘরের মেয়েকে নিয়ে আত্মীয় পরিজনরা গর্ব করতে পারবেন। দলের মৌখিক নির্দেশ যাতে ফাঁকি দিয়ে জামাইদের কেউ শ্বশুরবাড়ি না যান সেই ব্যাপারে স্থানীয় নেতাদের নজর রাখার নির্দেশ দেওয়া হয় বলেও দলীয় সূত্রের খবর। তৃণমূল জেলা সভাপতি বলেন, “কেউ দলের নির্দেশ যাতে অমান্য না করেন তা নিয়ে খোঁজ তো রাখতেই হয়।” দেওয়ানহাট গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল প্রার্থী দুলাল চন্দ বললেন, “বিচিত্রাকে নিয়ে বিয়ের পর প্রতিবছর বাণেশ্বরে ষ্ঠী করতে গিয়েছি। এবার দিনভর প্রচারে কাটল। দলের নির্দেশ বলে কথা।” আর বক্সিরহাটের স্বপন সাহা বলেন, “স্ত্রী সবিতা এতটুকু আপত্তি করেনি। এখন প্রচারটাই যে আসল।”
নির্দেশ না থাকলেও বিরোধীদের নানা এলাকায় প্রচার করতে দেখা গিয়েছে। প্রচারে ব্যস্ত ছিলেন দিনহাটার কালমাটির ফরওয়ার্ড ব্লকের ধীরেন বর্মন ও সান্ত্বনা বর্মন। রবিবার বিয়ে হয়েছে। ধীরেনবাবুর কথায়, “জনতার দাবি মেনে বিয়ে করে স্ত্রীকে প্রার্থী করেছি। বৌভাত হয়নি। ফলে ষষ্ঠীর ব্যাপার নেই।” নাটাবাড়ির সিপিএমের জেলা পরিষদ প্রার্থী যমুনা সরকার বলেন, “জামাই ষষ্ঠী করতে পারিনি।” ফব জেলা সম্পাদক উদয়ন গুহ বলেন, “আমাদের নির্দেশ ছিল না। প্রার্থীরাই প্রচারে সময় নষ্ট করতে চাননি।” |