ভোট সরিয়ে উদ্ধারে দু’দলই
নৌকাডুবির খবর চাউর হতেই মানিচকচকের রুস্তমপুর গঙ্গার ঘাট লোকে লোকারণ্য। গঙ্গার ধারে ছুটে গিয়েছেন নৌকাডুবিতে নিখোঁজ যাত্রীর পরিবারের লোকজন। সামিল কৌতুহলী গ্রামবাসীরাও। চড়া রোদে নদীর পাড়ে সকাল থেকে ঠায় দাঁড়িয়ে কয়েক হাজার গ্রামবাসী। নৌকাডুবির খবর পেয়ে মানিকচকে ছুটে গিয়েছেন জেলাশাসক পুলিশ সুপার থেকে শুরু করে মালদহ রেঞ্জের ডিআইজি, উত্তরবঙ্গের আইজিও।
সামনে পঞ্চায়েত ভোট। তা নিয়ে কংগ্রেস-তৃণমূল যুযুধান হলেও অন্তত দুর্ঘটনার পরে এদিন কোনও পক্ষ কাউকে দোষারোপ করেননি। বরং উভয় তরফের নেতা-মন্ত্রী, প্রাক্তন মন্ত্রীরা দুর্গতদের পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছেন। সেখানে দেখা গিয়েছে এলাকার তৃণমূল কংগ্রেসের বিধায়ক তথা রাজ্যের নারী ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রী সাবিত্রী মিত্রকে। গিয়েছেন রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী তথা কংগ্রেস বিধায়ক সাবিনা ইয়াসমিন। প্রথমে বর্তমান ও কিছুক্ষণ পর প্রাক্তন মন্ত্রী একই সময়ে একই জায়গায় থাকলেও কেউ কারও সঙ্গে কথা বলেননি। নদীর ধার থেকে মানিকচক হাসপাতালে নৌকাডুবিতে অসুস্থদের দেখতে গেলেও সেখানেও বাকাল্যাপ করতে দেখা যায়নি তাঁদের।
রাজ্যের নারী ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রী সাবিত্রী মিত্র বলেন, “নৌকাডুবিতে যাঁদের মৃত্যু হয়েছে, তাঁদের পরিবারকে ২ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য সরকারের কাছে আর্জি জানিয়েছি। নৌকায় অতিরিক্ত যাত্রী তোলা হয়েছে। সঙ্গে অনেকগুলি মোষ তোলার জন্যই নৌকাডুবি হয়েছে। নৌকায় যারা অতিরিক্ত যাত্রী তুলবে তাদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য জেলাশাসক ও জেলা পুলিশ সুপারকে বলেছি।” রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, “অতিরিক্ত যাত্রী তোলার জন্য ঘটনা ঘটে। প্রশাসনের দেখা উচিত।”
মানিকচকে গঙ্গায় তল্লাশি। ছবি: মনোজ মুখোপাধ্যায়।
এ দিকে সকাল আটটা নাগাদ নৌকাডুবির ঘটনা ঘটলেও জেলায় কোনও ডুবুরি না থাকার কারণে মহা ফাঁপড়ে পড়ে জেলা প্রশাসন। ডুবুরি না থাকায় নৌকাডুবিতে নিঁখোজ যাত্রীদের উদ্ধার করতে রীতিমতো হিমসিম খেতে হয়েছে জেলা প্রশাসন কর্তাদের। দুপুর দু’টো পর্যন্ত গঙ্গায় প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কোনও ডুবুরি না পৌঁছনো নৌকাডুবিতে নিখোঁজ যাত্রীদের উদ্ধারকাজ ব্যহত হয়েছে।
জেলাশাসক কিরণ কুমার গোদালা বলেন, “জেলায় কোনও ডুবুরি নেই। মুর্শিদাবাদ ও রায়গঞ্জ থেকে ডুবুরি আনার ব্যবস্থা করা হয়েছে। পাশাপাশি কলকাতা থেকে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা কেন্দ্র থেকে ৩০-৩৫ জনের একটি টিম মালদহের উদ্দেশে রওনা হয়েছে। জেলা পুলিশ সুপার কল্যাণ মুখোপাধ্যায় জানান, রাতে গঙ্গায় নিখোঁজদের তল্লাশি চালাতে যাতে কোন অসুবিধা না হয় সেই জন্য রুসতমপুরঘাট ও পঞ্চানন্দপুর ঘাটে জেনারেটরের ব্যবস্থা করা হয়েছে। পাশাপাশি দুটি ভুটভুটি নৌকাতেও জেনারেটর লাগিয়ে নদীতে নিখোঁজ যাত্রীদের খুঁজতে তল্লাশি হবে।
প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ডুবুরি পৌঁছনোর আগেই স্থানীয় কয়েকজন মাঝি তল্লাশি চালিয়ে ৬৫ বছর বয়সী দোলগোবিন্দ মন্ডল ও ৫০ বছর বয়সী ভগবতী বেওয়ার মৃতদেহ জল থেকে তোলেন। তা দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন নদীর ধারে দাঁড়িয়ে থাকা তাঁদের আত্মীয়রা। মৃতদেহ উঠেছে খবর পেয়ে নদীর পাড়ে ছুটে যায় হাড়খাচ্চা গ্রামের টুনু মন্ডল। টুনু মণ্ডল বলেন, “আমার ভাই সুকুমার মন্ডল এবারই উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেছে। ভুট্টা কাটতে ওই নৌকায় আজকে সকালে রুস্তমপুর চরে যাচ্ছিল। ভাইকে খুঁজে পাচ্ছি না।”

প্রাণ বাঁচাল খড়ের আঁটি
খড়ের বোঝা আঁকড়ে মৃত্যুর মুখে থেকে বেঁচেছেন ওই নৌকার যাত্রী হাড়জোড়াটোলার ৫৫ বছরের কৌশল্যা মণ্ডল। মানিকচক হাসপাতালে ভর্তি কৌশল্যার কথায়, “সাঁতার জানি না। গঙ্গায় নৌকা ডুবে যাওয়ার পর যখন খাবি খাচ্ছি, তখন হাতের কাছে কিছু না পেয়ে খড়ের বোঝা আঁকড়ে ধরে চিৎকার শুরু করি। ১৫-২০ মিনিট পর একটি ভুটভুটি এসে আমাকে জল থেকে তোলে। না হলে আমি বেঁচে ফিরতাম না।” কৌশল্যার স্বামী ভিন রাজ্যে দিনমজুরি করে। ৪ সন্তান। গরু ছাগলের জন্য ঘাস আনতে ভুটভুটিতে রুস্তমপুর চরে যাচ্ছিলেন কৌশল্যাদেবী।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.