মোষের ভারে কাত হয়ে গঙ্গায় ডুবে গিয়েছিল যাত্রীবোঝাই ভুটভুটি। সেই মোষের লেজ ধরেই বেঁচে ফিরলেন এক যাত্রী।
শুক্রবার সকালে মালদহের মানিকচকের ডোমহাটের কাছে রুস্তমপুর ফেরিঘাটের কাছে এই দুর্ঘটনায় দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। দুই শিশু, চার মহিলা-সহ নিখোঁজ এখনও ১৩ জন। দুধের ফাঁকা ক্যান ধরে, খড়ের বোঝা আঁকড়ে ভেসে থেকে এবং সাঁতরে বেঁচেছেন ৩০ জন যাত্রী। মৃত্যুর মুখ থেকে বেঁচে ফিরে গঙ্গার পাড়ে দাঁড়িয়ে কাঁপছিলেন মানিকচকের বড়বাজারের ৬৫ বছরের বৃদ্ধ হাকিমুদ্দিন। বারবার বলছিলেন, ‘‘মোষ না তুললে ভুটভুটি ডুবত না। আর ওই মোষ না থাকলে আজ আমি বাঁচতেও পারতাম না।” মৃত দু’জনের নাম দোলগোবিন্দ দাস (৬৫) ও ভগবতী বেওয়া (৫০)। ভুটভুটি ডুবির পরে ওই ঘাটের ইজারাদার সোনারদি শেখ ও তার ছেলে ভুটভুটির মাঝি চিন্টু শেখ পালিয়ে গিয়েছে। জেলা পুলিশ সুপার কল্যাণ মুখোপাধ্যায় বলেন, “ঘাটের ইজারাদার ও মাঝিকে ধরার জন্য পুলিশ তল্লাশি শুরু করেছে। নিখোঁজদের তল্লাশিতে রুস্তমপুর ফেরিঘাট ও পঞ্চানন্দপুরে জেনারেটার বসানো হয়েছে। সেই আলোতে নদীতে তল্লাশি চলছে।” |
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন সকাল সাড়ে ৭টা নাগাদ রুস্তমপুর ফেরিঘাট থেকে জনা পঞ্চাশ যাত্রী, চারটি মোষ এবং ২০টির বেশি সাইকেল নিয়ে ওই ভুটভুটি রুস্তমপুর চরের উদ্দেশে রওনা হয়। যাত্রীদের অভিযোগ, তাঁদের আপত্তি উপেক্ষা করেই মোষগুলি তোলা হয়। ফেরিঘাটের ইজারাদার ও মাঝি মোষ নামাতে রাজি হয়নি। ঘাট থেকে ছাড়ার কিছুক্ষণ পরে মাঝগঙ্গায় চারটি মোষের ভারে কাত হয়ে পড়ে ভুটভুটি। হাকিমুদ্দিন বলেন, “মোষের ভারে ভুটভুটি এক দিকে হেলে যায়। সেই সময় বাতাসের ধাক্কায় জল উপচে ঢোকে। বেগতিক দেখে মাঝি ভুটভুটি ঘাটের দিকে ফেরানোর চেষ্টা করেন। তখনই ভুটভুটি ডুবতে শুরু করে।” এই সময় মাঝি জলে ঝাঁপ দিয়ে পালিয়ে যান বলে অভিযোগ।
ওই নদী-পথে ছোটবেলা থেকেই পারাপার করছেন হাকিমুদ্দিন। যাচ্ছিলেন রুস্তমপুর চরে। সঙ্গে ছিল চর-জমির জমির দিনমজুরদের মজুরি। ভুটভুটি ডুবছে দেখে মোষের লেজ ধরে জলে ঝাঁপ দেন তিনি। তাঁর কথায়, “মোষটা লেজ ছাড়ানোর জন্য চেষ্টা করছিল। আমি লেজ ছাড়িনি। প্রায় ২০ মিনিট পরে মোষটা পাড়ে ওঠে। তখন লেজ ছাড়ি।” বৃদ্ধের দাবি, জলে ঝাঁপানোর সময়ে সঙ্গের টাকা গিয়েছে।
মানিকচক পঞ্চায়েত সমিতি গঙ্গায় রুস্তমপুর ফেরিঘাট-সহ ১১টি ফেরিঘাট এক বছরের মেয়াদে লিজ দিয়েছে। ২০১২-র ১ জুলাই রুস্তমপুর ফেরিঘাটটি ৫২ হাজার টাকায় সোনারদি শেখরা লিজ নেন। ৩০ জুন সেই লিজের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। মানিকচক পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি মেহের আবজুন বিবি বলেন, “লিজ দেওয়ার সময় বলা হয়েছিল, নৌকায় মানুষের সঙ্গে ছাগল-ভেড়া বাদে কোনও গবাদি পশু তোলা যাবে না। তার পরেও ভুটভুটিতে মোষ তোলা হয়। তাতেই এই বিপত্তি ঘটেছে।” |
মানিকচক হাসপাতালে ভর্তি বড়বাগান গ্রামের দীপক মণ্ডল বলেন, “চোখের সামনে আমার পরিচিত আখতার হোসেন, সুকুমার মণ্ডল, পিঙ্কু মণ্ডল তলিয়ে গেল।” ডোমহাটের আকিমুদ্দিন, হেসামুদ্দিনরা বলেন, “ওই ভুটভুটিতে জায়গা ছিল না দেখে উঠিনি। পরের নৌকার জন্য ঘাটেই বসে ছিলাম। মাঝগঙ্গায় দেখি, ভুটভুটিটা ডুবে গেল, যাত্রীদের চিৎকার। ঘাটে একটা ভুটভুটি ছিল, কিন্তু তেল না থাকায় সঙ্গে সঙ্গে যেতে পারিনি।” দুর্ঘটনার খবর পেয়ে স্থানীয় বিধায়ক তথা রাজ্যের নারী ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রী সাবিত্রী মিত্র ঘটনাস্থলে যান। মহাকরণে বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের সচিব ইন্দিবর পাণ্ডে জানান, মৃতদের পরিবারপিছু দু’লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। ৪০ জনের একটি বিপর্যয় মোকাবিলা দল মালদহে যাচ্ছে।
|