অভাবী পরিবার বলে অভিভাবকরা উচ্চ মাধ্যমিক পাশের পরে পড়াতে পারবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন। তাই সব সার্টিফিকেট নিয়ে তুফানগঞ্জের প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে শিলিগুড়ি শহরে পৌঁছে আশ্রয়ের খোঁজে উদ্দেশ্যহীন ঘোরাফেরা করছিলেন ১৮ বছরের তরুণীটি। রাত ৮টায় তা দেখে সন্দেহ হওয়ায় হিলকার্ট রোডের এয়ারভিউ মোড়ের দুই ব্যবসায়ী সুধাংশু পাল ও বাবলা ঘোষ মিলে পুলিশকে খবর দেন। কারণ, গ্রাম থেকে আসা তরুণীটি কোনভাবে দুষ্টচক্রের পাল্লায় পড়লে বড় ধরনের বিপদ ঘটার আশঙ্কা ছিল। সে কথা মাথায় রেখেই দুই ব্যবসায়ী উদ্যোগী হওয়ায় শেষ পর্যন্ত তরুণীটিকে উদ্ধার করে মহিলাদের হোমে পাঠিয়ে দেয় পুলিশ ও রাজ্য মহিলা কমিশন।
পুলিশ জানায়, রাত সওয়া ৮টা নাগাদ থানার ১০০ নম্বরে ফোন করেন ব্যবসায়ী বাবলাবাবু। শিলিগুড়ি থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছয়। ইতিমধ্যে খবর পেয়ে রাজ্য মহিলা কমিশনের সদস্য জ্যোৎস্না অগ্রবাল মেয়েটিকে নিজের অফিসে নিয়ে যান। সেখানে নিজের পড়ার ইচ্ছের কথা জানিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন তরুণীটি। তিনি জানিয়ে দেন, পড়াশোনা চালানোর জন্য যে কোনও কাজ করতেই তিনি রাজি। সে কথা ভেবেই শিলিগুড়িতে পৌঁছন। জ্যোৎস্না দেবী সব শুনে তাঁকে পড়াশোনার খরচ জোগাড় করে ভর্তি করার আশ্বাস দেন। যোগাযোগ করা হয় তুফানগঞ্জের গ্রামেও। রাত হয়ে যাওয়ায় পুলিশের মাধ্যমে তরুণীটিকে মেয়েদের হোমে নিয়ে যাওয়া হয়।
তরুণীটি জানান, বাড়ির অবস্থা ভাল নয়। নিজে কাজ করে পড়াশোনা করার জন্য তুফানগঞ্জ থেকে চলে এসেছে শিলিগুড়িতে। বেলা সাড়ে বারোটা নাগাদ বাড়ি ছেড়ে একাই বাসে উঠে চলে আসে শিলিগুড়িতে। সন্ধ্যে নাগাদ এয়ারভিউ মোড়ের কাছে ঘোরাফেরা করতে দেখে সন্দেহ হয় সুধাংশুবাবুদের। আশেপাশের ব্যবসায়ী পরিবারের মহিলারাও সেখানে জড়ো হয়ে তরুণীটিকে প্রশ্ন করেন। তরুণীটি তাঁদের বলেন, “আমি বাড়ি যেতে চাই না। বাবা পড়াতে পারবেন না। নিজেই কাজ করে পড়াশোনা করতে চাই।”
এ বছরই তুফানগঞ্জের বারকোদালি হাই স্কুল থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেছে সে। ফল ভাল হয়নি। উচ্চ মাধ্যমিকে প্রাপ্ত নম্বর ১৯৮। বক্সিরহাট কলেজ থেকে ভতির্র ফর্ম তুললেও পড়াতে চাইছেন না বাবা সুভাষ বর্মন। তিনি লখিমপুরে কাজ করেন। বাড়িতে বাবা-মা ও ছোট ভাই বোন রয়েছে। তারাও পড়াশোনা করে। বাড়িতে যাওয়ার কথা বললে সে জানায় বাড়ি ফিরতে চায় না। তরুণীর কথায়, “বাড়ি গেলে আর কিছু হবে না। আমি কাজ করব।” এ দিন থানায় পুলিশের সামনে দাঁড়িয়ে কাঁদতে থাকেন ছাত্রীটি। মহিলা কমিশনের সদস্য জ্যোৎস্না অগ্রবাল বলেন, “খুব গরিব পরিবারের মেয়েটি পড়তে চায়। আমরা সবরকম সাহায্য করব। ওঁর বাড়িতে খবর দেওয়া হয়েছে। বাড়ির লোক জনকে বোঝানো হবে। মেয়েটির ভর্তির খরচ ও বই খাতা ইত্যাদি সব কিছুই তাঁদের তরফ থেকে দেওয়া হবে। আপাতত বিধি মেনে পুলিশের মাধ্যমে ওঁকে এনজেপি এলাকার একটি হোমে রাখা হয়েছে। ওঁর বাড়ির লোকজন এলে পরের পদক্ষেপ করা হবে।” |