এক কংগ্রেস কর্মীকে ভোজালি দিয়ে কুপিয়ে, বল্লম দিয়ে খুঁচিয়ে খুন ও জেলা কংগ্রেস সভাপতি মোহন বসুকে মেরে জখম করার ঘটনার জেরে শুক্রবার জলপাইগুড়ির নানা এলাকায় কংগ্রেসের তরফে বিক্ষোভ, অবরোধ হয়। বৃহস্পতিবার রাতে ওই দুটি ঘটনা যথাক্রমে ঘটেছে আলিপুরদুয়ারের চাপরের পাড় ও শিলিগুড়ির উপকণ্ঠে জলপাইগুড়ির মান্তাদাড়ি এলাকায়।
জলপাইগুড়িতে সকালে ৩১ ডি জাতীয় সড়কের অন্তত পাঁচটি এলাকায় অবরোধ করে কংগ্রেস। দলের শ্রমিক সংগঠনের ডাকে, জলপাইগুড়ি শহরে সরকারি বেসরকারি বাস, অটো ধর্মঘট পালিত হয়। দফায় দফায় অবরোধ বিক্ষোভে নাকাল হতে হয়েছে যাত্রীদের। এ দিন কংগ্রেসের বিরুদ্ধে পাল্টা হামলার অভিযোগও উঠেছে। জলপাইগুড়ির এসি কলেজ এবং প্রসন্নদেব মহিলা কলেজে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সহায়তা কেন্দ্রে ভাঙচুর চালানোর অভিযোগ উঠেছে কংগ্রেসের ছাত্র সংগঠন ছাত্র পরিষদের বিরুদ্ধে। প্রসন্নদেব মহিলা কলেজের সামনে দলনেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রীর ছবি ছাপানো ফ্লেক্স পুড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগও তুলেছে তৃণমূল। |
আলিপুরদুয়ারের চাপরের পাড়েও অঘোষিত বন্ধ হয়। আলিপুরদুয়ার মহকুমার বিভিন্ন এলাকায় পথ অবরোধ করেন কংগ্রেস কর্মী, সমর্থকেরা। জলপাইগুড়ি জেলা কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক সৈকত চট্টোপাধ্যায় বলেন, “আমরা নির্বাচন কমিশনের কাছে হামলার বিশদ বিবরণ, তথ্য, ছবি পাঠিয়ে দিয়েছি।”
শুক্রবার, জলপাইগুড়ি পুরসভার বিরোধী দল সিপিএমের কাউন্সিলাররা জলপাইগুড়ির কোতোয়ালি থানায় স্মারকলিপি দিয়ে, পুরসভার চেয়ারম্যান মোহনবাবুর উপর হামলার ঘটনায় দোষীদের গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছে। ফরওয়ার্ড ব্লকের জেলা সম্পাদক প্রবাল রাহা এদিন সদর হাসপাতালে গিয়ে মোহনবাবুর সঙ্গে দেখা করেছেন। জেলা কংগ্রেস সভাপতি মোহনবাবুর সঙ্গে এদিন যোগাযোগ করেছেন প্রদেশ যুব তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি সৌরভ চক্রবর্তীও। সৌরভবাবু বলেন, “তৃণমূলের কেউ ওই ঘটনায় যুক্ত নন। তবে মোহনবাবুর উপর হামলার ঘটনা অবাঞ্ছিত।” যদিও দু’টি ঘটনায় তৃণমূলের কেউ জড়িত নন বলে জলপাইগুড়ি জেলা তৃণমূল সভাপতি চন্দন ভৌমিক দাবি করেছেন। তিনি বলেন, “আমরা কোনও হানাহানির রাজনীতি করি না। কোথাও মারপিট হলে পুলিশ নিরপেক্ষ ব্যবস্থা নেবে।” তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলেও আলিপুরদুয়ারের ঘটনাতেও দলীয় কারও জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছে সিপিএম। কংগ্রেসের অভিযোগ, চাপরের পাড়ের পলাশতলিতে বাজারে রাত ৮টা নাগাদ ট্রান্সফর্মারের সুইচ নামিয়ে অন্ধকারে বল্লম দিয়ে খুঁচিয়ে সূর্যমোহন দেবনাথ (৫৭) নামে এক কংগ্রেস কর্মীকে খুন করা হয়েছে। ওই রাতেই মান্তাদাড়ির মিলনপল্লীতে জেলা কংগ্রেস সভাপতি মোহনবাবু সহ জেলার অনান্য নেতৃবৃন্দ গিয়েছিলেন। ফেরার সময়ে তাঁদের গাড়ি আটকে দিয়ে হামলা হয় বলে অভিযোগ। মোহনবাবুর একটি চোখে গুরতর আঘাত লেগেছে। তিনি জলপাইগুড়ি জেলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। গত সপ্তাহের শুরু থেকেই মিলনপল্লী এলাকায় উত্তেজনা শুরু হয়। গত বুধবার জেলা কংগ্রেসের থেকে অভিযোগ করে জানানো হয়, তৃণমূলের হুমকিতে পঞ্চায়েত আসনে তাঁদের প্রার্থী কালিশঙ্কর সেন এলাকায় ফিরতে পারছেন না। হাসপাতালের চিকিৎসক সুশান্ত রায় বলেন, “মোহনবাবুর হাতেও কালশিটের দাগ আছে। চোখের নিচেও ধারালো কিছু দিয়ে আঘাত করা হয়েছে। চিকিৎসা চলছে।” |