|
|
|
|
|
|
|
নাটক সমালোচনা ২... |
|
নাটকের জন্যই নাটক নয় |
ভালবাসায় কখনও কখনও ‘স্বার্থপর’ও হতে হয়। লিখছেন সঞ্চারী বন্দ্যোপাধ্যায় |
রণজয় চট্টোপাধ্যায় এমনই চরিত্র, ২৪ ঘণ্টাই নিজেকে সমর্পণ করেছেন নাটকের জন্য। নাটকের প্রতি ভালবাসা, নাটকের স্বার্থে ভাবনা অথচ প্রচারবিমুখ রণজয় আজ সকলের কাছে স্বার্থপর এক মানুষ। এ হেন স্বার্থপর রণজয় পরিবৃত্তে সুদীপ্তা, রাজা, অনন্যা, বিদিশার প্রেম-অপ্রেম, দ্বন্দ্ব-অন্তর্দ্বন্দ্বর এক অনবদ্য কাহিনি মিউনাস-এর প্রযোজনায়। নাট্যকার পরিচালক এবং অভিনেতা উৎসব দাসের মুন্সিয়ানায় ‘স্বার্থপর’ নাটকের প্রতিটি চরিত্রই বাস্তবের মাটি থেকে উঠে এসেও নতুন করে অবচেতন মনের অচেনা মানুষকে খুঁজে ফেরে। বাবলু সরকারের নির্দেশনায় আলোর ব্যবহার নাটকের প্রতিটি মুহূর্ত ও চরিত্রগুলিকে বিমূর্ত করে তুলেছে। সন্দীপ করের আবহসঙ্গীত প্রযোজনার অন্যতম প্রাপ্তি। তবে খলচরিত্রে বিনয় ঘোষের চরিত্রায়ন ও মহিলাকক্ষের দৃশ্যে অভিনেতাদের আরও সুসংহত হওয়ার দাবি রাখে। সুন্দর অভিনয় করেছেন রত্না ধর, সৌগত কর্মকার, তুহিনা বসু, পিঙ্কি বসু, দেবজ্যোতি চক্রবর্তী, পিনাকী বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ। |
|
নাটকটি দেখতে দেখতে এই প্রতিবেদকের মনে হল, রণজয়রূপী উৎসব দাস কি তাঁর নাটক নিয়ে নিরলস সাধনার মানসিক উপলব্ধি ও যন্ত্রণাকেই তুলে ধরেছেন? প্রশ্নটি অমূলক নয়। কারণ প্রতিটি ক্ষেত্রেই রণজয় ও উৎসবের চারিত্রিক মিল হুবহু মিলে যায়। যেখানে নাটকের স্বার্থে ২৪ ঘণ্টাই তিনি নিজেকে সমর্পণ করেছেন ওই নাটকের জন্যই। কারণ তাঁরই মস্তিষ্কপ্রসূত ‘টানা ২৪ ঘণ্টা নাট্যোৎসব’ চলছে নাটকেরই স্বার্থে। ব্যতিক্রমী প্রয়াস।
অন্য দিকে রণজয় চট্টোপাধ্যায়ও এক জন নাটক পাগল মানুষ। যার শয়নে, স্বপনে, ভাললাগা ভালবাসায়, সুখে দুঃখে শুধুই নাটক। সস্তার বিনোদন থেকে একটু দূরে থাকতে চাওয়া মানুষটি শিল্পের সঙ্গে কখনও কমপ্রোমাইজ করেননি। শুধু মাত্র নাটক নিয়ে পাগলামোর জন্য এই মানুষটি আস্তে আস্তে সমাজের সমস্ত স্তরের মানুষের কাছে স্বার্থপর হয়ে উঠল। যে দিন সব চেয়ে কাছের মানুষ স্ত্রীর কাছ থেকে ‘স্বার্থপর’ শব্দটি শুনতে হল, সে দিন তিনি মানসিক যন্ত্রণা নিয়েও স্থির করলেন নাটক থেকে সরে আসবেন। কিন্তু সে কথা দলের কাছে জানাতেই দলের সবাই জানাল, তাঁর দল ছেড়ে চলে যাওয়াটা এক ধরনের স্বার্থপরতা।
আজ রণজয় চট্টোপাধ্যায়ের মনে হাজার প্রশ্ন, নাটক করি কেন? নিজের নাম প্রচার, না কি সত্যিই ভালবাসি নাটককে? সত্যিই কি আমি স্বার্থপর? সত্যিই এই নাটক দেখে প্রেক্ষাগৃহ ছেড়ে বেরোবার আগে দু’ চোখের পাতা চিকচিক করে ওঠে। নাটকের বাইরেও জীবনের অন্য নাটক। |
|
|
|
|
|