নাটক সমালোচনা ১...
ব্রাত্য, সুমন, আমি এবং
মার বন্ধুরা বড়ই গুণী।
আমার বন্ধুরা সবাই সবার মতো করে ‘সময়’-এর শিকড়টায় টান মারেন।
আমার বন্ধুরা এমন একটা শিল্প মাধ্যমকে বেছে নিয়েছেন ‘থিয়েটার’... জন্মায় আর মরে ...
আমার বিশ্বাস আমার বন্ধুদের মধ্যে সম্প্রতি তৈরি হওয়া সংঘাত, অবিশ্বাস, অভিমান, ক্ষোভ অথবা রাগ এই সব কিছুই বড় ‘জ্যান্ত’। ‘থিয়েটারের’ মতোই। মানুষে মানুষে সম্পর্ক তো শুধুই বিশ্বাস, মৈত্রী, ভালবাসা বা প্রীতি নয়। পরস্পর বিরোধী নানান ‘মানুষী’ অনুভূতি দিয়ে তৈরি হয় একটা সম্পর্ক... ব্রাত্য-সুমন-দেবেশ-আমি এবং আরও অনেকে এমনই সম্পর্কের নাটক রচনা করছি। মাঝেমধ্যেই বেসামাল হয়ে পড়ছি, ঝলসে উঠছে ‘তথ্যে’র আড়ালে কিছু ব্যক্তিগত ক্ষোভ। বাড়ছে দূরত্ব...
নিজের দোষ দিয়েই শুরু করি। নতুন সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার পর ‘নাট্য আকাদেমি’ আয়োজিত ‘নাট্যমেলা’র কিছু অসংগতি দেখে উৎসবে নাটক না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। প্রবীণ নাট্যনির্দেশক বিভাস চক্রবর্তী ‘আনন্দবাজার’ পত্রিকায় ‘নাট্যমেলা’র সপক্ষে একটি লেখা পাঠান। তাতে যুক্তি ছিল, আবার যুক্তির আড়ালে আক্রমণও ছিল তাঁদের প্রতি যাঁরা উৎসবে অংশ নিলেন না।
আমি পালটা লেখা দিতে পারতাম, ফোন করে প্রশ্নবাণে বিদ্ধ করতে পারতাম কিছুই না করে ওঁর নাট্যদল আয়োজিত সারারাত্রিব্যাপী নাট্যোৎসবে যোগদান করলাম না... কেন? কোথাও, মনের খুব গভীরে কাজ করেছিল যে বিভাসবাবু ‘তৃণমূল’ ঘনিষ্ঠ, তাই সরকারি নাট্যমেলাকে আড়াল করছেন। অর্থাৎ আমার ‘নিরপেক্ষ’ থাকার বিশ্বাস যেমন আমার জোর বাড়িয়েছে, উলটো দিকে তৈরি করেছে একটা অহংবোধ, যা সাময়িক ভাবে আমার ভাবনাকে আচ্ছন্ন করেছিল।
আমার ধারণা, ‘রাজনীতি’ ঘোলাজলকে দায়ী করার আগে বোধহয় দেখা প্রয়োজন ‘নিজেকে’ ব্রাত্য-সুমন-দেবেশ তিনজন গুণী নাট্যজন কি ভেবে দেখবেন একবার?
মনে পড়বে কি পুরনো কিছু স্মৃতি?
একটা নতুন নাট্যমঞ্চ খুঁজে নেওয়ার তাগিদে ব্রাত্য-আমি-সুমন চষে বেড়াচ্ছি কলকাতা এ গলি, ও গলি মনে পড়ে?
একটা নতুন ‘স্পেস’ নতুন নাট্যভাষার সন্ধানে?
দেবেশের সঙ্গে ব্রাত্যর একবার খুব ঝগড়া হল। আমার হরিশ মুখার্জি রোডের বাড়িতে বসল দু’জনে। ব্রাত্য তখন মন্ত্রী নয়। উপস্থিত বিভাস চক্রবর্তী, দেবশংকর হালদারও। মনপ্রাণ খুলে ঝগড়া হল, কথাও হল, বেরিয়ে এল সমাধান।
তারও বেশ কয়েক বছর আগে শিশির মঞ্চে একটা নাট্যসংক্রান্ত আলোচনা শেষে দেখলাম সুমন আর ব্রাত্য মিশে গেল নন্দন চত্বরের ভিড়ে, ব্রাত্য সুমনের জন্য লিখে এনেছিল শিবরাম চক্রবর্তীর ‘কালান্তক ফিতে’র নাট্যরূপ! প্রযোজনাটাও দারুণ হয়েছিল। আমার মনে আছে, কী করব? কে যেন একবার বলেছিলেন, অভিনেতা হচ্ছে ‘সে’, যে ‘মনে রাখে’...
অভিনেতাকে অবশ্য ভুলতেও হয় ভুলতে চাইব আমাদের সকলের প্রিয় অভিনেতা বিমল চক্রবর্তীকে নিগ্রহের প্রতিবাদে বন্ধুদের এক হতে না পারার স্মৃতি। ব্রাত্য-সুমন এক পাশে, আমি-সুমন উলটো দিকে। মন্ত্রী হিসেবে ব্রাত্যর ‘তৃণমূলত্ব দেখাব’ বলে হুঁশিয়ারি ভুলতে চাইব। ভুলতে চাইব বিমলদাকে করা দেবেশের অযৌক্তিক কটাক্ষ। ভুলতে চাইব ‘মিনার্ভা রেপার্টারি থিয়েটার’কে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা কথার পাহাড়।
কৌশিকের সঙ্গে দেবশংকর, ব্রাত্য, সুমন, গৌতম
সুমনের মনে হচ্ছে, ব্রাত্যর কাছে কেন যাব? ব্রাত্যর মনে হচ্ছে এলেই তো পারত, এত দূরত্ব কেন? কেন যে চিঠিতে লেখা হবে সুমনকে উদ্দেশ করে, ‘পালে কত বার বাঘ পড়বে’? সেই চিঠিতে আর যাদের সই থাক, দেবেশের সই থাকবে কেন? যে তৈরি করে ‘উইঙ্কল টুইঙ্কল’, ‘ফ্যাতাড়ু’ বা ‘দেবী সর্পমস্তা’? সে জানে না, শাসকের কোনও রং থাকে না?
‘শাসক’ যখন ‘থিয়েটারকে’ বিপজ্জনক মনে করে তখন সে ‘ডান না বাম’ কোনও কিছুর তোয়াক্কা করে না। নানা উপায়ে বিঘ্ন ঘটায়। কখনও সরাসরি, কখনও ‘কল শো’র রাস্তা বন্ধ করে দিয়ে, কখনও অনুগত সংবাদপত্রে কুৎসার মাধ্যমে। দেবেশ তো ভুক্তভোগী।
সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের মতো দেশবরেণ্য শিল্পী যখন অভিযোগ করেন, যে তাঁর কাছ থেকে ‘ডেট’ নেওয়ার পর বিনা নোটিশে শো বাতিল হত, তখন ব্যাপারটা শুধু ‘মিনার্ভা রেপার্টারি থিয়েটার’-এর ভিতর আটকে থাকে না। বাংলা নাটকে এই মুহূর্তে একটা চমৎকার সময় এসেছে, মানুষ ভিড় করে আসছেন আমাদের প্রযোজনা দেখতে, সেই দর্শকদের কাছেও জবাব দেওয়ার দায় আছে, সেই দায়টা পূরণ করার মতো ক্ষমতা সুমন-ব্রাত্য-দেবেশের আছে।
‘ইচ্ছে’টা আছে কি? আমার বিশ্বাস আছে। কবীর সুমনের গানের মতো
‘ইচ্ছে হল এক ধরনের পাগলা জগাই
হঠাৎ করে ফেলতে পারে যা খুশি তাই’।

আমার বিশ্বাস আমার বন্ধুরা পারে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.