ছোটবেলা থেকে ফোটোগ্রাফির নেশা অভিনবের। সব সময়ের সঙ্গী পেনট্যাক্স। সে কারণে কম কথা শুনতে হয়নি তাঁকে। বন্ধুদের দেওয়া ডাকনাম হয়ে গিয়েছিল ‘সেলেরন’। জেন ওয়াইয়ের যুগেও ফিল্ম রোল ক্যামেরা!
অগত্যা ঝুঁকতে হল ডিজিটাল ফোটোগ্রাফিতে। ঠিক করেছিলেন মাঝারি দামের কোনও ডিজিটাল এসএলআর কিনবেন। কিন্তু নেটে সব থেকে পছন্দের ডিজিটাল ক্যামেরার নাম দেখে মত বদলাতে হল তাঁর। কিনে ফেললেন আইফোন ফোরএস।
শুনতে অবিশ্বাস্য লাগলেও, এটাই বাস্তব। জনপ্রিয় ফোটো ওয়েবসাইট ‘ফ্লিকার’য়ের সব থেকে পছন্দের ক্যামেরা আইফোন ফোরএস, কোনও ডিজিটাল এসএলআর, এমনকী কোনও কমপ্যাক্ট ডিজিট্যাল ক্যামেরাও নয়।
স্মার্টফোনের ক্যামেরা কি তবে পেশাদার ডিজিট্যাল ক্যামেরার প্রয়োজনীয়তাই ফুরিয়ে দিল? “কখনওই নয়। ক্যামেরার পিক্সেল সাইজ নিয়ে যতই বিজ্ঞাপনী হইচই হোক, আসল কিন্তু ক্যামেরার সেন্সর। সেন্সর সাইজে কোনও দিনও স্মার্টফোনের ক্যামেরা ডিজিটাল ক্যামেরাকে হারাতে পারবে না,” জানালেন ফ্যাশন ফোটোগ্রাফার সনৎ ঘোষ। পেশাদারি ক্ষেত্রে এসএলআরকে হারাতে না পারলেও, অ্যামেচার ফোটোগ্রাফিতে কিন্তু বেশ জায়গা করে নিয়েছে স্মার্টফোন। অনেক ফোটোগ্রাফি কম্পিটিশনেই আর ক্যামেরাটা কোনও মানদণ্ড নয়। বছর পঁচিশের আর এক অ্যামেচার ফোটোগ্রাফার মানস মুকুল পাল বললেন, “আরে, ছবি কোন মানের হবে, সেটা তো নির্ভর করছে ফোটোগ্রাফারের ওপর। লাখ টাকার ডিএসএলআর দিয়ে তোলা ছবিও খারাপ হতে পারে। আসল তো দরকার ফোটোগ্রাফির সেন্স। ছবির কম্পোজিশন, লাইটের সেন্স থাকলে পাঁচ হাজার টাকার ক্যামেরাতেও অ্যাওয়ার্ড জেতা ছবি তোলা যায়।”
মানসের যুক্তিটা কিন্তু একেবারে ফেলে দেওয়া যায় না। ২০১১ সালে কান ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে কারোস দ’র জেতা ইরানি চিত্র পরিচালক জাফর পনাহির ‘দিস ইজ নট আ ফিল্ম’ তো আই ফোনেই তোলা। মানের কথা ছেড়ে দিন, দামের দিক থেকেও সস্তা স্মার্টফোনের ক্যামেরা। শুধু দাম নয়, প্রয়োজনীয়তার দিক থেকেও এসএলআর-কে কয়েক গোল দেবে স্মার্টফোন ক্যামেরা। ক্যামেরা নিয়ে বেরোতে আর আলাদা করে মনে রাখতে হবে না। ফোন তো আপনি এমনিই নিয়ে বেরোচ্ছেন। আবার তোলা ছবি সঙ্গে সঙ্গে ফেসবুক বা ট্যুইটারে আপলোড করে দিতে পারেন। যেটা কোনও ভাবেই পেশাদার কোনও ক্যামেরায় সম্ভব নয়। মোবাইল ক্যামেরা না থাকলে হয়তো ‘সিটিজেন জার্নালিজম’ শব্দটাই আসত না।
এ সব যুক্তি কিন্তু অনেকেই একেবারে মানতে চান না। “ধুর, মোবাইল ক্যামেরায় আবার ফোটোগ্রাফি হয় নাকি? হ্যাঁ, হঠাৎ কোনও ছবি তোলার কাজ চালিয়ে দিতে পারে মোবাইল। কিন্তু ওই পর্যন্তই,” উত্তর আর এক জেন ওয়াই সদস্য শুভদীপের। ক্যানন ডিএসএলআর-য়ের গর্বিত মালিক যোগ করলেন, “মোবাইল ক্যামেরায় কেউ ওয়াইল্ড লাইফ ফোটোগ্রাফি করে দেখাক তো!”
শুভদীপের চ্যালেঞ্জ কি সত্যিই অপরাজেয়? মোবাইল ফোনের ক্যামেরা যতই আট কি বারো মেগা পিক্সেল হোক, যতই লেন্স ভাল হোক, তা দিয়ে পেশাদার ফোটোগ্রাফি করা যাবে না? “দেখুন, এক এক কাজের এক এক হাতিয়ার। প্রতিদিনের ছবি তুলতে চাইলে মোবাইল ফোন ঠিক আছে। কিন্তু সেটা দিয়ে পেশাদার পর্যায়ের ফোটোগ্রাফি করার চেষ্টা করা তো হাস্যকর। অপটিক্যাল জুম নেই, ম্যাক্রো লেন্স নেই, টেলি লেন্স লাগানো যাবে না। ওয়াইল্ড লাইফ ফোটোগ্রাফি তো অসম্ভব,” জানালেন অভিনেতা ও ওয়াইল্ড লাইফ ফোটোগ্রাফার সব্যসাচী চক্রবর্তী।
|
ছবি চাইছে আরও বেশি
ছবি না হয় তুললেন, কিন্তু সেটাকে পালিশ না করলে সে তো
আর চকচক করবে না। তাই এই অ্যাপস চাই-ই-চাই। |
স্ন্যাপসিড
পছন্দমতো ফিলটার এফেক্টস আর ফ্রেমের সঙ্গে বাড়তি পাওনা ‘সিলেকটিভ এডিটিং’, মানে ছবির কোনও একটা বিশেষ অংশ এডিট করতে পারবেন, অন্য অংশকে একই রকম রেখে। |
ক্যামেরা প্লাস
ফোন বিশেষজ্ঞদের মতে আইফোন বা আই পডে এই অ্যাপস থাকা চাই-ই-চাই। এর সাহায্যে ফোকাস আর এক্সপোজার পছন্দমতো ঠিক করে নেওয়া যাবে, যেটা ডিফল্ট ক্যামেরা অ্যাপসে সম্ভব নয়। |
ইনস্টাগ্রাম
ফোন যাই হোক না কেন, এই অ্যাপস ফোনে থাকতেই হবে। বিনা পয়সায় নানা ফিল্টার আর এফেক্টসের অ্যাপস আর পাবেন না। |
ফোটোরুম
উইনডোজ ফোনের জন্য একমাত্র এই অ্যাপসটার নাম উল্লেখ করা যায়। ইনস্টাগ্রামের মতো সুবিধা না পেলেও, ছবিকে আরও সুন্দর করে তুলতে এই অ্যাপস ফোনে রাখতেই হবে। |
ফোটোসিন্থ
সব ফোনে তো আর ৩৬০ ডিগ্রি প্যানোরোমার ব্যবস্থা নেই। তখন কাজে আসবে ফোটোসিন্থ। অনেক ছবিকে জুড়ে দিব্যি বানিয়ে দেবে আপনার পছন্দসই ‘প্যানোরোমা’। |
|