উত্তর কলকাতা: পাইকপাড়া ব্যারাকপুর
বেহাল স্বাস্থ্য
অসুস্থ পরিষেবা
শূন্য পদ অনেক। রয়েছে নানা পরিকাঠামোগত ত্রুটি। ফলে ক্রমেই খারাপ হচ্ছে পানিহাটি পুরসভার স্বাস্থ্য পরিষেবার মান। এমনই অভিযোগ অধিকাংশ পুরবাসীর।
পানিহাটি পুরসভার ৩৫টি ওয়ার্ডে উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র রয়েছে ৪০টি। ‘আরবান প্রাইমারি হেলথ কেয়ার সার্ভিস’ প্রকল্পের অধীনে অধিকাংশ কেন্দ্র কোনও ক্লাব বা পরিত্যক্ত স্কুলে চলে। ওষুধপত্র ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সাম্মানিক ভাতা আসে স্টেট আরবান ডেভেলপমেন্ট এজেন্সি (‘সুডা’) থেকে। স্বাস্থ্যকর্মীরা বাড়ি বাড়ি ঘুরে চিকিৎসা ও রোগ প্রতিরোধের জন্য পরামর্শ এবং ওষুধপত্র বিলি করেন। সাধারণত এক জন স্বাস্থ্যকর্মী ২০০টি পরিবার পরিদর্শন করেন। এ জন্য তাঁরা আড়াই হাজার টাকা সাম্মানিক ভাতা পান। রয়েছেন কিছু আংশিক সময়ের চিকিৎসক। তাঁরা সাড়ে তিন হাজার টাকা পান।
পুরসভা সূত্রের খবর, স্বাস্থ্যকর্মীরা স্বেচ্ছাসেবী। তাঁদের অবসরগ্রহণের ব্যবস্থা নেই। অনেকের বয়সই ৬০ ছাড়িয়ে গিয়েছে। কয়েক জন মারাও গিয়েছেন। তা ছাড়া বিগত পাঁচ বছর কোনও নতুন নিয়োগ হয়নি। কারণ, এত কম সাম্মানিকে অনেকেই কাজ করতে আগ্রহী নন। ফলে বাকিদের কাজের চাপ বেড়ে গিয়েছে। অনেকেই বয়সের ভারে এই চাপ নিতে পারেন না। ফলে পরিষেবার মানের অবনতি হচ্ছে।
প্রতিটি কেন্দ্রে পাঁচ জন মহিলা স্বাস্থ্যকর্মী ও এক জন সুপারভাইজার বসেন। কিন্তু অভিযোগ, অধিকাংশ দিনই চিকিৎসক বসেন না। টীকাকরণের মতো নানা বিষয়ে স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণের জন্য সাময়িক ভাবে চিকিৎসক আসেন। ফলে ওষুধ দেন স্বাস্থ্যকর্মীরাই। পুরসভা একটি প্যাথলজিক্যাল ল্যাবরেটরি তৈরি করলেও সেখানে মাত্র এক জন টেকনিশিয়ান রয়েছেন। তিনি ছুটি নিলে বা অনুপস্থিত থাকলে পরীক্ষার কাজ বন্ধ রাখতে হয়।
তা ছাড়া স্বাস্থ্যকেন্দ্রের রক্ষণাবেক্ষণ বা নতুন স্বাস্থ্যকেন্দ্র তৈরির জন্যও ‘সুডা’ থেকে কোনও অর্থ মেলে না। পুরসভা ঠিকমতো রক্ষণাবেক্ষণ করে না বলেও অভিযোগ। বর্ষায় কোনও কোনও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে জল জমে যায়। ঝোপে ভরে ওঠে। কোথাও আসবাব দীর্ঘ দিন ভাঙা অবস্থায় পড়ে। এক স্বাস্থ্যকর্মীর কথায়: “স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কোনও শয্যা নেই। পরিষেবা দেওয়ার কোনও সুযোই নেই।”
পুরসভার বিরোধী নেতা তৃণমূলের মলয় রায় বলেন, “সরকার থেকে যে সাহায্য আসে তাতে অনেক ভাল পরিষেবা দেওয়া যায়। কিন্তু স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কিছুই মেলে না। অনেক স্বাস্থ্যকর্মী বয়সের ভারে ভাল করে হাঁটতেও পারেন না। ওঁরা বাড়ি বাড়ি ঘুরে কী করে পরিষেবা দেবেন?”
পানিহাটি পুরসভার স্বাস্থ্য আধিকারিক অনির্বাণ রায়ের কথায়: “এই প্রকল্প চালাতে বেশ কিছু সমস্যা হচ্ছে। ফলে পরিষেবার গুণগত মান নেমে যাচ্ছে। সরকারি সহযোগিতা পেলে আরও উন্নত পরিষেবা দেওয়া যাবে।” পুরপ্রধান সিপিএমের চারণ চক্রবর্তী বললেন, “প্রকল্পটির কিছু সমস্যা রয়েছে। তা নিয়ে সরকারের ভাবা উচিত। নতুন স্বাস্থ্যকেন্দ্র তৈরির আগে পুরসভার মাতৃসদনটির উন্নয়নের চেষ্টা চালাচ্ছি। উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলির রক্ষণাবেক্ষণ পুরসভা করবে।”
পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম অবশ্য বলেন, “যত দ্রুত সম্ভব স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলির অবস্থার উন্নতির চেষ্টা করছি। মানুষের কাছে আমরা দায়বদ্ধ।”




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.