পূর্ব কলকাতা: লেকটাউন, বারাসত
বিপদ-সরণি
বাজারের ফেরে
স্থায়ী দখলদারির জেরে এমনিতেই অপরিসর হয়ে গিয়েছে রাস্তা। সেই রাস্তার দু’ধার জুড়ে আবার তৈরি হচ্ছে অস্থায়ী দোকানপাট। ফলে গাড়ি বা পথচারীর চলাচলের পথের একেবারে দফারফা।
রাজারহাট ব্লকের নিউটাউন থানার পাথরঘাটায় (আহিরীটোলা থেকে পাথরঘাটাগামী) ২১১ নম্বর বাসের যাত্রা শেষ হয়। বাসগুলিকে প্রায় ১৫০ মিটার দূরে পাথরঘাটা বাজার চৌমাথা থেকে ঘুরিয়ে এনে, বাজার সংলগ্ন একটি পুকুরপাড়ের স্ট্যান্ডে রাখতে হয়। কিন্তু অভিযোগ, গাড়ি ঘোরানো দুরূহ হয়ে ওঠে রাস্তার ধারের দোকানপাটের জন্য। শনি ও মঙ্গলবার হাটবার হওয়ায় সমস্যা আরও জটিল হয়ে ওঠে।
অভিযোগ, সুনির্দিষ্ট বাজার থাকা সত্ত্বেও রাস্তা জুড়ে বসে যায় দোকানপাট। কিন্তু এই দখলদারি উচ্ছেদে উদ্যোগী নয় রাজ্য পূর্ত বিভাগ (সড়ক)। ব্যবসায়ী সমিতির তরফে জানা গিয়েছে, মাঝেমধ্যেই অস্থায়ী দোকানপাট রাস্তার ধার থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু রাস্তায় বসলে বিক্রি বেশি হয় এমন ধারণা থেকে দোকানিরা আবার সেখানে চলে আসেন। ফলে সমস্যার স্থায়ী সমাধান হয় না।
নিউটাউনের বিভিন্ন এলাকা থেকে তিনটি এবং রাজারহাট থেকে একটি রাস্তা পাথরঘাটা বাজারে এসে মিশেছে। এ ছাড়া পাথরঘাটা বাজারেই রয়েছে পঞ্চায়েত অফিস, একটি স্কুল এবং স্বাস্থ্যকেন্দ্র। ফলে নিত্য দিন অসংখ্য মানুষকে যাতায়াত করতে হয় ওই রাস্তা দিয়ে। বাসরাস্তার ধারে এই দখলদারির জেরে ভুগতে হয় তাঁদের। স্থানীয়দের অভিযোগ, পূর্ত দফতরের উদাসীনতার জেরেই রাস্তার ধারে বিকল্প বাজার গড়ে উঠেছে। কেনাকাটা করার সময়ে ক্রেতাদের একাংশ রাস্তার ধারে সাইকেল, মোটরসাইকেল দাঁড় করিয়ে রাখেন।
স্থানীয় বাসিন্দা নির্মল নস্করের কথায়: “২১১ বাসস্ট্যান্ড থেকে পাথরঘাটা বাজার চৌমাথা পর্যন্ত এই রাস্তায় বাস ঘোরানোর সময়ে সাধারণ পথচারীর পক্ষে রাস্তার পাশে সরে দাঁড়ানোও সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। রাস্তায় জল জমে থাকলে বাসের চাকায় তা ছিটকে যায় রাস্তার ধারের দোকানগুলিতে। কখনও বা বাসের চাকা উঠে যায় সব্জির উপরে। এ নিয়ে প্রায়ই অশান্তি হয়। পূর্ত (সড়ক) বিভাগের রাস্তার ধারের অনেকটা জুড়ে রয়েছে স্থায়ী দোকান। তার পরেও অস্থায়ী দোকানের দখলদারি।” বাসকর্মীদের সঙ্গে স্থানীয় বাসিন্দা আর ব্যবসায়ীদের বাগবিতণ্ডা আর হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে বেশ কয়েক বার। ছোটখাটো দুর্ঘটনার জেরে বাস পরিষেবা সাময়িক ভাবে বন্ধ হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। কিন্তু স্থায়ী সমাধান হয়নি।
পাথরঘাটা ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক আসাদুল ইসলাম বলেন, “রাস্তার ধারের দোকানগুলি কয়েক বার সরানো হয়েছে। কিন্তু তারা কিছু দিনের মধ্যেই ফিরে আসে। ব্যবসায়ীদের একাংশের ধারণা, রাস্তার ধারের দোকানে বেশি বিক্রি হয়। পূর্ত বিভাগের রাস্তার অনেকটাই আগে থেকে স্থায়ী-অস্থায়ী দখলদারিতে চলে গিয়েছে। এখন পরিকল্পিত বহুতল বাজার ভবন নির্মাণ করলে হয়তো সমস্যা মিটবে, কিন্তু বাজারের ভবন তৈরি আর রাস্তা খালি করার জন্য সরকারি উদ্যোগ প্রয়োজন।”
২১১ নম্বর বাসমালিক সংগঠনের সম্পাদক শ্যামল দে বলেন, “পাথরঘাটায় বাস ঘোরানো এবং বাসস্ট্যান্ড নিয়ে দীর্ঘ দিন সমস্যা চলছে। মাঝেমধ্যে আমাদের ক্ষতিপূরণও দিতে হয়। সামান্য ত্রুটি হলেও বাসকর্মীদের গালিগালাজ করেন ব্যবসায়ীরা। কিন্তু একটা বাসকে এগিয়ে নিয়ে গিয়ে ঘোরাতে গেলে ন্যূনতম যেটুকু জায়গা প্রয়োজন দোকানপাটের জন্য তা-ও ওখানে নেই। বাসস্ট্যান্ডে বেশি বাস দাঁড়ালেও বাসকর্মীদের সঙ্গে দোকানদারদের বচসা বেধে যায়। সরকারি উদ্যোগ ছাড়া এ সমস্যা শেষ হওয়ার নয়!”
পূর্ত (সড়ক) দফতরের এক আধিকারিক বলেন, “ওই রাস্তা মেরামতের জন্য ২ কোটি টাকার দরপত্র ডাকা হয়েছে। তখন উচ্ছেদ সম্ভব কি না খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” পাথরঘাটার পঞ্চায়েত প্রধান তৃণমূলের অশোক নস্কর বলেন, “যে ব্যবসায়ীরা রাস্তায় বসেন তাঁদের কয়েক বার তুলে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু দু’-চার দিনের মধ্যেই তাঁরা ফিরে আসেন। তাই স্থায়ী সমাধান হয়নি। নির্বাচনের পরে প্রশাসনিক সহযোগিতা নিয়ে কী করা যায় দেখছি।”

ছবি: সুদীপ ঘোষ




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.