চরিত্রবিরোধী মহেন্দ্র সিংহ ধোনি প্রাক ম্যাচ সাংবাদিক সম্মেলনে। যেখানে আক্রমণাত্মক কিছু কথা বললেন অধিনায়ক। মুখের ভাব অবশ্য গোটা সফরে যেমন রয়েছে তেমনই কঠিন। ভারতীয় মিডিয়ায় পরিচিতদের সঙ্গে ব্যক্তিগত কথাবার্তার কোনও ব্যাপারই নেই।
প্রশ্ন: একটা টিম সেমিফাইনাল উঠে গেছে। আর একটা টিম প্রতিযোগিতাতেই নেই। কত জরুরি কালকের ম্যাচ?
ধোনি: জরুরি তো নিশ্চয়ই। তা বলে পাকিস্তান-পাকিস্তান করে বাড়তি চাপ নেওয়ার মানে হয় না। নর্ম্যাল আর পাঁচটা দিনের মনোভাব নিয়ে নামাই ভাল।
প্র: পাকিস্তান বোলিং খুব ভাল। এই পরিবেশে তো বটেই। তার জন্য বিশেষ কোনও প্ল্যান-ট্যান আছে?
ধোনি: হ্যাঁ, ওদের যেমন ভাল পেস বোলার আছে। তেমন ভাল স্পিনারও রয়েছে। আজমল তো ভাল-ই। হাফিজও বেশ ভাল। তবে ভাল ফাস্ট বোলার তো মোটামুটি সব টিমেরই রয়েছে। শুধু পাকিস্তান নয়। আমরা কিছুই তার জন্য বদলাচ্ছি না।
প্র: রবীন্দ্র জাডেজাকে আমরা আগেও দেখেছি। হঠাৎ করে বোলার জাডেজা বদলে গেল কী করে?
ধোনি: আমার মনে হয় খেলতে-খেলতে এখন জাডেজা অনেক উন্নতি করেছে। অনেক কনফিডেন্স পেয়েছে। বুঝতে পারছে ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেটে ওকে ঠিক কী করতে হবে। ওর একটা গুণ হল, জায়গাটা খুব চেনে। এক জায়গায় টানা রেখে যেতে পারে। প্লাস, এখন ব্যাটসম্যানের মুভমেন্টটাও শেষ অবধি দেখে। ব্যাটসম্যান স্টেপ-আউট করার ধান্দায় দেখলে লাইন হেরফের করে। |
প্র: আর শিখর ধবন? হঠাৎ করে এই ছেলেটাকে আপনারা কোথা থেকে নিয়ে এলেন (প্রশ্নকর্তা ব্রিটিশ সাংবাদিক)?
ধোনি: ধবন কিন্তু একেবারে নতুন ছেলে নয়। আমি আর ও একসঙ্গে খেলেছি চ্যালেঞ্জার্স ট্রফিতে। জাতীয় টিমে ও কয়েক বছর আগেই ঢুকেছিল। দুর্ভাগ্য টানা খেলতে পারেনি। আমাদের নতুন ছেলেদের আমরা টানা সুযোগ দেওয়ার চেষ্টা করি। যাতে একটা-দুটো ব্যর্থতাতেই ওদের সামনে সব দরজা বন্ধ না হয়ে যায়। কোনও সময় পারি। কোনও সময় পারি না।
প্র: ছ’মাস আগে যে পাকিস্তান আপনাদের নিজের দেশে হারিয়ে দিয়ে গিয়েছিল, আপনাদের সেই টিম আর এই টিম তো সম্পূর্ণ আলাদা।
ধোনি: আমাদের শুরুটা ভাল হচ্ছে ইদানীং। শুরু ভাল হওয়াটা আমাদের কাছে খুব ইম্পর্ট্যান্ট। আমাদের ড্রেসিংরুমের কাছে, ওই ওপেনাররা দাঁড়িয়ে আছে এটা খুব ভাল সঙ্কেত।
প্র: এই যে প্রত্যেকটা ইন্দো-পাক ম্যাচের আগেই দেশকে যুদ্ধে বাঁচানোর একটা চাপ ক্রিকেটারদের ঘাড়ে এসে পড়ে, এটা কতখানি সঙ্গত? দু’দেশের ফ্যানেদেরই কি বরঞ্চ শিক্ষিত হওয়া উচিত নয়?
ধোনি: আপনি তো মানুষের মনোভাব বদলাতে পারবেন না। সে যতই চেষ্টা করুন। আমি তো ২০০৪-এর ডিসেম্বরে ইন্ডিয়ান টিমে ঢুকেছি। তখন থেকে দেখছি এই ম্যাচ নিয়ে আগ্রহ-উত্তেজনা বেড়েই চলে। এটা এমন ব্যাপার যা আমাদের নিয়ন্ত্রণের অনেক বাইরে। আর যা বাইরে, তা নিয়ে ভেবে কী হবে? বরং এ ভাবে ভাবি, এই উত্তেজনাটা আমাদের বাড়িয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করে। প্রতিনিয়ত ধাক্কা দেয়।
প্র: নতুন ছেলেরা এই যে আপনার ক্যাপ্টেন্সিতে ভয়ডরহীন খেলে দেয়, তার রহস্যটা কী? কী বলে মোটিভেট করেন এদের?
ধোনি: মোটিভেট করার দরকার পড়ে না। দেশের হয়ে খেলার জন্য সবাই এমনিতেই মোটিভেটেড থাকে। তবে একটা জিনিস ওদের বুঝে নিতে হয় যে, এই খেলাটা প্রথমে উপভোগ করার জন্য। প্রথমেই চাপ নেওয়ার জন্য নয়। এনজয় করতে জানলে চাপটা এমনিতেই মানানসই পর্যায়ে নেমে আসে।
প্র: এ বারের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে টিম পারফরম্যান্স সম্পর্কে কী কী জিনিস আপনাকে সন্তুষ্টি দিয়েছে?
ধোনি: প্রথমত ভাল ব্যাটিং। আমরা ধারাবাহিক ভাল ব্যাট করেছি। রান তাড়া করতে সফল হয়েছি। বোলিংও আশানুরূপ হয়েছে বলতে পারি। আর ফিল্ডিংয়ের কথা যদি বলেন, ঠিক এই মুহূর্তে আমরা টুর্নামেন্টের সেরা ফিল্ডিং সাইড। ফিল্ডারদের মধ্যে যারা খুব ভাল নয়, তারাও গড়পরতা মানের চেয়ে অনেক উঁচুতে।
প্র: মিসবা উল হক সাংবাদিকদের কাছে একটু আগে বলে গিয়েছেন এই যে, ওঁদের হারাবার কিছু নেই। এই অবস্থায় ভারতের ওপর বিনা চাপে ঝাঁপিয়ে পড়তে আরও সুবিধে হবে। আপনার কী মনে হয়, এই পাকিস্তান টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নেওয়া বলে কি বেশি বিপজ্জনক হবে? নাকি কম হবে?
ধোনি: নির্ভর করেছে ওরা কী ভাবে ম্যাচকে দেখবে তার ওপর। ওরা যদি মনে করে শেষ একটাই ম্যাচ। জানপ্রাণ দিয়ে লড়ে জিততেই হবে। আমাদের আর হারানোর কিছু নেই তা হলে বিপজ্জনক হবে। আর যদি মনে করে এই ম্যাচটা জেতা দরকার কারণ দেশে ফেরার আগে আমাদের একটা সান্ত্বনা পুরস্কার চাই, ওটা নিতেই নামব, তা হলে পাকিস্তানের কপালে দুর্ভোগ নাচছে।
(মিডিয়া উপদেষ্টা ঘোষণা করলেন ইংরেজিতে প্রেস কনফারেন্স শেষ হল। তার মানে এ বার হিন্দি শুরু হবে। যেমন একটু আগে মিসবা উল করেছেন। প্রশ্নোত্তর প্রথমে ইংরেজিতে। তার পর হিন্দিতে।)
ধোনি: (যেন শোনেনইনি উঠে পড়লেন)।
মিডিয়া: হিন্দি, হিন্দি...
(ধোনি জাস্ট বেরিয়ে চলে গেলেন। দেশজ মিডিয়ার ওপর গরগরে রাগ এখন তাঁর প্রতিটি পদক্ষেপে)। |