নিজস্ব সংবাদদাতা • শ্রীরামপুর |
অঙ্কের ফর্মুলার পাশাপাশি পেট চালানোর রসায়নটাও বিলকুল মুখস্থ। তাই ঝুরি-ঝুরি নম্বর পেয়েও পরের দিনই কোদাল চালাতে যেতে হয় পরের জমিতে। তবে প্রবল খাটুনিতেও শিক্ষক হওয়ার বাসনায় মরচে পড়তে দিতে চায় না সে।
মা সন্ধ্যাদেবী এবং দাদা অভীককে নিয়ে সংসার রবীনচন্দ্র ধারার। তিন জনেই দিনমজুরি করেন। সন্ধ্যাদেবী মাঝে মধ্যে মিড-ডে-মিলের রাধুনির কাজ পান। নবাবপুর পঞ্চায়েতের দুধকলমি গ্রামের শিবতলায় তাঁদের একচিলতে বাড়ি। বাবা কার্তিকচন্দ্র ধারা ১৪ বছর আগে মারা গিয়েছেন। সংসারের জোয়াল টেনে পড়াশোনার খরচ চালাতে নাভিঃশ্বাস ওঠে। রবীনের রেজাল্ট দেখে অবশ্য তা বোঝার উপায় নেই। অলিপুর সতিশচন্দ্র পাল হাইস্কুল থেকে এ বার মাধ্যমিক দিয়ে রবীন পেয়েছে ৬১৭। ভৌত বিজ্ঞানে ১০০ পেয়েছে। বিজ্ঞান নিয়ে ভর্তি হয়েছে আঁকুনি বিজি বিহারীলাল ইনস্টিটিউশনে। কিন্তু উচ্চশিক্ষা কতদূর চালাতে পারবে, তা নিয়ে সংশয়ে ছেলেটি। |
|
|
দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে সুমিত (বাঁ দিকে) ও রবীনচন্দ্রের। —নিজস্ব চিত্র। |
|
রবীনের দাদা অভীক এ বার ওই স্কুল থেকে ভোকেশনাল (সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং) বিষয়ে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেছে। তার ইচ্ছে ওই বিষয়ে ডিপ্লোমা করার। কিন্তু টাকার অভাবে ভর্তি হতে পারেনি। অভীক বলে, “ভাইকে স্কুল অনেক সাহায্য করেছে। নতুন স্কুলের প্রধান শিক্ষকও ওকে সাহায্য করবেন বলেছেন। একটি সংস্থাও আশ্বাস দিয়েছে। কিন্তু তাতেও কতটা চালানো যাবে, বুঝতে পারছি না।” আর সন্ধ্যাদেবীর প্রতিক্রিয়া, “রেজাল্ট বেরোতেই ঘুম উবে গিয়েছে। দেখি কী করে টাকা জোগাড় হয়।”
হরিপালের গোপীনাথপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সুমিত দুলেরও নিত্যসঙ্গী দারিদ্র। সে মাধ্যমিকে পেয়েছে ৬৩৯। বাংলা বাদে সব বিষয়েই নম্বর নয়ের কোটায়। সুমিতের স্বপ্ন চিকিৎসক হওয়ার। কিন্তু দিন আনি দিন খাই পরিবারের ছেলেটির কাছে তা যেন ছেঁড়া কাঁথায় শুয়ে লাখ টাকার স্বপ্ন দেখার মতোই। তিন ছেলেমেয়ে, স্ত্রী আর বৃদ্ধ মা-কে নিয়ে পশ্চিম গোপীনাথপুর পঞ্চায়েতের হাজরা মোড়ে সুমিতের বাবা দিলীপ দুলের সংসার। মাটির দেওয়াল আর টালির ছাউনির বাড়িতে অভাবের চিহ্ন সর্বত্র। ছ’জনের সংসার চলে দিলীপবাবুর দিনমজুরির টাকায়। ছোট ছেলের পাহাড়প্রমাণ নম্বরেও কেমন যেন কুঁকড়ে যায় তাঁর মুখ। স্বগতক্তির ঢঙেই প্রশ্ন ছুড়ে দেন, “অত টাকা কোথায় পাব বলতে পারেন?” আপাতত দ্বারহাট্টা রাজেশ্বরী ইনস্টিটিউশনে বিজ্ঞান নিয়ে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছে সুমিত। সে বলে, “কেমন করে পড়াশোনা চালাব, জানি না। তবে আমার ডাক্তার হতে ইচ্ছে করে। গ্রামে অনেকে চিকিৎসা পান না। গ্রামেই চিকিৎসা করতে চাই।” তার দাদা অমিত ওই স্কুলেই দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়ে। |