কপ্টারে যাত্রী হবে কত, প্রশ্ন
গগন বিহারের আমোদ দিতে মহানগরে পবনহংস
ভাড়া মিলবে, এই আশায় এক-একটা কোম্পানি হেলিকপ্টার নিয়ে শহরে আসছে। কিছু দিন থাকছে। পাততাড়ি গুটিয়ে চলেও যাচ্ছে।
এ বার যেমন আসছে পবনহংস। কাল, রবিবার কেন্দ্রীয় উড়ানসংস্থাটি কলকাতায় আনছে তাদের দশ আসনের কপ্টার। যে কেউ ভাড়া নিতে পারেন। নিয়মিত যাত্রী মিলবে, এমন নিশ্চয়তা এখনও না-মিললেও সংস্থার জিএম (মার্কেটিং) সঞ্জয়কুমারের আশা, শহরকে আকাশ থেকে পাখির নজরে দেখতে চান যাঁরা, তাঁরাই আপাতত উদ্যোগটিকে ধরে রাখবেন। মহানগরের আকাশে দশ মিনিটের সেই ‘জয় রাইড’-এ সওয়ারিপিছু ভাড়া ধরা হয়েছে ১৭০০ টাকা।
এপ্রিলের গোড়ায় অন্য এক সংস্থাও বেহালা থেকে সাত আসনের কপ্টার নিয়ে ‘জয়-রাইড’ শুরু করেছিল। দু’মাসে খদ্দের মিলেছিল সাকুল্যে দু’বার! বার পাঁচেক অন্যান্য কাজে ভাড়া খাটে। ব্যস, ওখানেই শেষ। প্রয়াগ নামে সংস্থাটির চিফ ইঞ্জিনিয়ার মানস গোস্বামী জানাচ্ছেন, ওঁদের কপ্টার এখন কেদারবদ্রিতে চলছে। এর পরে রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তীসগঢ় বা ঝাড়খণ্ডে ভোটের সময়ে তা ভাড়া দেওয়া হবে। সংস্থা-সূত্রের ইঙ্গিত, অন্যত্র যখন ভাড়া মিলবে না, তখন কপ্টারটিকে ফের কলকাতায় আনা হতে পারে।
কিন্তু প্রয়াগ তো নিয়মিত দুর্গাপুর-হলদিয়ায় কপ্টার ওড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল! তার কী হল?
মানসবাবুর ব্যাখ্যা, “দুর্গাপুর বা হলদিয়ায় তেমন পরিকাঠামো নেই। উপরন্তু রাজ্য সরকার চাইছে দু’ইঞ্জিনের কপ্টার। আমাদেরটা এক ইঞ্জিনের।”
এর আগে কলকাতা থেকে হেলিকপ্টার পরিষেবা চালাতে গিয়ে ব্যর্থ হয়েছে আর এক সংস্থা কার্ট এয়ার। যাত্রী হয়েছিল নামমাত্র, এবং এক বারের জন্যও কেউ সুন্দরবন-দিঘা-শান্তিনিকেতন বেড়াতে যাওয়ার উৎসাহ দেখাননি বলে জানিয়েছেন তার কর্তারা। “যথেষ্ট সংখ্যক ভারী শিল্প না-থাকলে ছোট বিমান বা হেলিকপ্টারে নিয়মিত যাত্রী পাওয়া মুশকিল।” বলছেন কার্ট এয়ারের সিইও প্রদীপ বিশ্বাস।
সুতরাং তাঁরাও মুখ ফিরিয়েছেন। তাঁদের দু’টো হেলিকপ্টার এখন অন্য রাজ্যে উড়ে বেড়াচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে পবনহংসের আমোদ-সফর কতটা সাড়া ফেলবে? জিএম সঞ্জয়বাবু বলেন, “কলকাতায় এত লক্ষ লক্ষ মানুষ! মনে হয়, জয় রাইডে নিয়মিত যাত্রী পাওয়া যাবে।” পশ্চিমবঙ্গে এখন বেসরকারি হেলিকপ্টার না-থাকার সুবাদে ভাড়ার কারবারও জমে ওঠার সম্ভাবনা দেখছেন তিনি। হলদিয়া বা দুর্গাপুরে নিয়মিত কপ্টার-পরিষেবার প্রস্তাব নিয়ে কী ভাবছেন?
সঞ্জয়বাবু বলেন, “আগে কলকাতা পৌঁছই। তার পরে সমীক্ষা করে দেখব।” প্রসঙ্গত, পবনহংস যে হেতু কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনস্থ সংস্থা, তাই পরিষেবার বাণিজ্যিক দিকটা এই মুহূর্তে অতটা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে না-ও উঠতে পারে বলে সংস্থা-সূত্রের ইঙ্গিত।
বেসরকারি সংস্থাগুলোর ক্ষেত্রে কিন্তু প্রাথমিক বাধ্যবাধকতাই হল বাণিজ্যিক সাফল্য। এবং প্রয়াগের মানসবাবুর মতে, কপ্টার-পরিষেবাকে সরাসরি পর্যটনের সঙ্গে জুড়লে তবেই তা সফল হতে পারে। তাঁর কথায়, “সিকিম থেকে বাগডোগরায় নিয়মিত কপ্টার ওড়ে। তেমন বাগডোগরা থেকে দার্জিলিঙে কপ্টার চালালে ভাল সাড়া মিলতে পারত। অথচ রাজ্যের তরফে সে প্রয়াস চোখে পড়ছে না!” শিল্প-মহলের একাংশের অভিমত, সর্বাগ্রে দিঘা-সুন্দরবন-হলদিয়া-শান্তিনিকেতন-দার্জিলিঙে বড় বাজেটের আধুনিক হোটেল, রিসর্ট ইত্যাদি বেশি সংখ্যায় গড়তে হবে। “যাঁরা হাজার হাজার টাকা খরচ করে হেলিকপ্টারে চেপে যাবেন, তাঁরা তেমন জায়গায় থাকতে চাইবেন, এটাই স্বাভাবিক।” মন্তব্য এক শিল্প-কর্তার।
ঘটনা হল, পশ্চিমবঙ্গে নির্মীয়মাণ নতুন পর্যটন-প্রকল্পগুলোর দু’-তিনটে ছাড়া অধিকাংশ চেনা ছকের মামুলি গণ্ডিতেই আবদ্ধ বলে শিল্প-বাণিজ্য মহলের একাংশের আক্ষেপ।

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.