|
|
|
|
মাঠে ফসল, সভা ভরাতে সমস্যায় দলগুলি |
অর্ঘ্য ঘোষ • ময়ূরেশ্বর |
সব কিছু ঠিকঠাক চললে হাতে মাস খানেকও সময় নেই। অন্য নির্বাচনে এই সময় সীমার মধ্যে সরগরম হয়ে উঠত রাজনৈতিক ময়দান। কিন্তু এ বারে সভা সমাবেশ ভরাতে যথেষ্ট বেগ পেতে হচ্ছে রাজনৈতিক দলগুলিকে। কারণ, গ্রাম্য এলাকায় যাঁদের কালো কালো মাথায় সভা সমাবেশ ভরাট হয়ে উঠত তাঁদেরই এখন দিনরাত মাথার ঘাম পায়ে ফেলতে হচ্ছে। কার্যত নাওয়া-খাওয়ার সময় নেই।
কারণ, প্রাকৃতিক দুর্যোগের জন্য জেলার বহু জায়গায় এখনও পাকা ধান মাঠেই রয়ে গিয়েছে। কোথাও কাটা ধান থেকে গাছ বেরিয়ে গিয়েছে। পড়ে রয়েছে তিল-কলাইও। চাষি, খেতমজুর, দিনমজুর এখন সেই সব ফসল ঘরে তুলতে ব্যস্ত। কেউ কেউ বেশি মজুরির জন্য ধান কাটতে চলে যাচ্ছেন দূরের গ্রামে। এ ফলে সভা-সমাবেশ ভরাতে আশানুরূপ লোক পাচ্ছেন না রাজনৈতিক দলের নেতারা। জেলা কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এ বারে জেলায় বোরো চাষ হয়েছে ৫৭ হাজার ৮২৫ হেক্টর জমিতে। উত্পাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল হেক্টর প্রতি ৪.২৫ টন। তিল চাষ হয়েছে ১৯২৩ হেক্টর জমিতে। বৃষ্টি ও ঝড়ের কারণে ৯২৩৮ হেক্টর জমির ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ২১ কোটি ৭৮ লক্ষ ৮৬ হাজার টাকা। একই সঙ্গে ৬৯৩ হেক্টর জমির তিল নষ্ট হয়েছে। এ ক্ষেত্রে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১ কোটি ৪ লক্ষ টাকা।
কৃষি দফতরের হিসেব অনুযায়ী বৈশাখের শেষ কিংবা জ্যৈষ্ঠের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে বোরো ধান উঠে যাওয়ার কথা। ১৫-২০ জ্যৈষ্ঠের মধ্যে তিলও উঠে যাওয়ার কথা। জেলা সহকারী কৃষি আধিকারিক (তথ্য) অমরকুমার মণ্ডল বলেন, “এখনও পর্যন্ত প্রায় ৩ হাজার হেক্টর জমির বোরো ধান এবং ৪০০ হেক্টর জমির তিল মাঠেই রয়ে গিয়েছে।” বেসরকারি হিসেবে ওই পরিমাণ আরও বেশি। ৫ বিঘা জমিতে বোরো চাষ করেছেন ময়ূরেশ্বর থানার ডাঙাপাড়া গ্রামের সিপিএম কর্মী নিতাই কোনাই। তিনি বলেন, “বৃষ্টির কারণে কাটা ধান মাঠেই পড়ে রয়েছে। ওই সব ফসল ঘরে তুলতে রীতিমতো ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত লড়াই করতে হচ্ছে। সময় মতো খেতেও পারছি না। রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ সব মাথায় উঠেছে।” একই বক্তব্য নানুরের সাওতা গ্রামের তৃণমূল কর্মী আব্দুল লতিফেরও। তিনি এ বার বিঘে দুই জমিতে তিল চাষ করেছেন। তাঁর কথায়, “অর্ধেক কেটে শুকনোর জন্য মাঠে মেলে রাখা হয়েছে। কিন্তু বৃষ্টির জন্য সেই তিলও ঘরে তুলতে পারছি না। এই চাষের জন্য যে টাকা ঋণ নিয়েছি, তা শোধ করব কী করে চিন্তায় রয়েছি। মিটিং-মিছিল যাওয়ার মানসিকতাই নেই।”
শুধু চাষিরাই নন, এই পরিস্থিতিতে ব্যস্ত দিনমজুর, খেতমজুররাও। মুর্শিদাবাদের যে সব এলাকায় প্রচুর ধান চাষ হয়েছে সেই সব জায়গায় ভিড় জমাচ্ছেন বীরভূমের মজুররা। ভোরে ভটভটি কিংবা বাসে করে দলবেঁধে তাঁরা চলে যাচ্ছেন কুলি, খরজুনা, বেলগ্রাম, আন্দি, হলদি, বড়ঞা, একম্বা প্রভৃতি গ্রামে। সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত কাজ করলেই মিলছে ২০০ থেকে ২২০ টাকা। যাতায়াতের খরচ বাদ দিয়ে হাতে থাকে ১৮০-২০০ টাকা। কেউ কেউ আবার দলগত ভাবে সন্ধ্যা পর্যন্ত ঠিকাতে ওই কাজ করেন। যে ক্ষেত্রে পারিশ্রমিক মিলছে দৈনিক ৩৫০-৪০০ টাকা পর্যন্ত। ময়ূরেশ্বরের কাঞ্চনা গ্রামের তৃণমূল সমর্থক সমর ভল্লা, কনুটিয়ার সিপিএম কর্মী হায়দর আলিদের কথায়, “বাইরে থেকে ধান কেটে ফেরার পরে আর মিটিং-মিছিলে যাওয়ার উত্সাহ পাই না।”
সমস্যার কথা স্বীকার করে নিয়েছেন রাজনৈতিক দলের নেতারা। সিপিএমের ময়ূরেশ্বর জোনাল কমিটির সম্পাদক অরূপ বাগ, তৃণমূলের নানুর ব্লক কার্যকরী সভাপতি অশোক ঘোষ বলেন, “কর্মী-সমর্থকদের মাঠে ফসল পড়ে রয়েছে। তাই তাঁরা ওই কাজে ব্যস্ত। ইচ্ছে থাকলেও তাঁরা রাজনৈতিক কর্মসূচিতে যোগ দিতে পারছেন না। তাই সভা-সমাবেশেও আশানুরূপ জমায়েত হচ্ছে না।” |
|
|
|
|
|