দশ আসনের একটিতেও প্রার্থী নেই সিপিএমের। মাত্র দু’টিতে হাজির কংগ্রেস। এমন পরিস্থিতিতে পঞ্চায়েতের দখল যখন অনায়াসে হাতে আসার কথা, জামুড়িয়ার চিচুড়িয়া পঞ্চায়েতে তৃণমূলের বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে দলেরই একাংশ। ছয় আসনে দলের বিক্ষুব্ধেরা নির্দল হিসেবে দাঁড়িয়ে পড়ায় পঞ্চায়েত দখলে লড়াইয়ের রাস্তায় যেতেই হচ্ছে তৃণমূলকেই।
চিচুড়িয়া পঞ্চায়েতে সব আসনে প্রার্থী প্রত্যাহার করে নিয়েছে সিপিএম। তিনটি আসন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দখল করতে চলেছে তৃণমূল। বাকি সাত আসনের একটিতে তৃণমূল প্রার্থীর সঙ্গে লড়াই কংগ্রেসের। একটিতে কংগ্রেস, তৃণমূল ও নির্দলের মধ্যে ত্রিমুখী লড়াই। বাকি পাঁচটিতে তৃণমূলের প্রতিদ্বন্দ্বী নির্দল প্রার্থীরা, যাঁরা আদতে তৃণমূলেরই একটি গোষ্ঠীর কর্মী। আর এর ফলে জামুড়িয়ার কেন্দা ও শ্যামলা পঞ্চায়েত বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় তৃণমূল দখল করলেও চিচুড়িয়ায় তা হয়ে উঠছে না।
জামুড়িয়া ২ ব্লক তৃণমূলের একটি সূত্রে জানা যায়, চিচুড়িয়ায় দলের দু’টি গোষ্ঠী রয়েছে। একটির মাথায় রয়েছেন দলের ব্লক যুব সভাপতি গোপীনাথ পাত্র ও প্রাক্তন যুব সভাপতি রথীন কুণ্ডু। অন্যটিতে রয়েছেন দলের ব্লক সভাপতি তাপস চক্রবর্তী ও দলের প্রদেশ সদস্য মুকুল বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুগামীরা। এই দু’পক্ষের মধ্যে মাঝেমাঝেই বিবাদ বাধে। তৃণমূলেরই একটি সূত্রে জানা যায়, চিচুড়িয়া পঞ্চায়েতে ছ’জন নির্দল প্রার্থী এবং জামুড়িয়া পঞ্চায়েত সমিতিতে এক জন নির্দল প্রার্থী দাঁড় করিয়েছেন গোপীনাথবাবুরাই।
গোপীনাথবাবুর দাবি, দলীয় স্তরে কোনও আলোচনা না করেই ব্লক সভাপতি তাপসবাবু, তাঁর ছেলে কৌস্তভ ও তৃণমূল নেতা সুকুমার ভট্টাচার্যেরা প্রার্থীপদের টিকিট বিলি করেছেন। গোপীনাথবাবুর অভিযোগ, “মূলত টাকার বিনিময়ে টিকিট দেওয়া হয়েছে। মনোনয়ন দাখিলের সময়ে দলের জেলা স্তরের নেতাদের কথায় বেশ কিছু প্রার্থী মনোনয়ন দাখিল করেছিলেন। পরে যাঁদের টিকিট দেওয়া হবে না ব্লক সভাপতি হিসেবে তাপসবাবু তাঁদের মনোনয়ন প্রত্যাহারের নির্দেশ দেননি। তাই তাঁরা নির্দল প্রার্থী হিসেবে থেকে গিয়েছেন। তাপসবাবুর নিজের পঞ্চায়েত এলাকা হিজলগড়াতেও এমন প্রার্থীকে মনোনয়ন প্রত্যাহার করাতে পারেননি। এখন উল্টে তাঁদের উপরে হামলা চালানো হচ্ছে।”
ব্লক সভাপতি তাপসবাবু যদিও দাবি করেন, চিচুড়িয়ার দশটি আসনের মধ্যে পাঁচটিতে রথীনবাবুদের সুপারিশ মেনেই প্রার্থীপদ দেওয়া হয়েছে। যার মধ্যে রথীনবাবুর স্ত্রী-সহ তিন জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছেন। তাপসবাবুর বক্তব্য, “রথীনবাবুর বোঝা উচিত ছিল, এক জনের কথায় সব টিকিট দেওয়া যায় না। তা না মেনে ছ’জন নির্দল দাঁড় করিয়েছেন। এই ছয় আসনের একটিতে তৃণমূলের যিনি প্রার্থী, তাঁকে রথীনবাবুর কথাতেই টিকিট দেওয়া হয়েছে। তা সত্ত্বেও তাঁর বিরুদ্ধে নির্দল প্রার্থী দিয়েছেন তিনি।” টাকার বিনিময়ে টিকিট দেওয়ার কথা ‘হাস্যকর’ দাবি করে তাপসবাবু জানান, গোপীনাথবাবু ও রথীনবাবুর বিরুদ্ধে সবিস্তার রিপোর্ট তৈরি করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে।
ভোটের প্রচার শুরু হতে না হতেই তৃণমূলের এই দুই গোষ্ঠীর মধ্যে গোলমালও শুরু হয়েছে। রথীনবাবু জামুড়িয়ার কেন্দা ফাঁড়িতে বুধবার রাতে অভিযোগ দায়ের করেন, বাগডিহা গ্রামে পঞ্চায়েত সমিতির তৃণমূল প্রার্থী ঊমারানি শীলের বাড়িতে বৈঠক সেরে সন্ধ্যায় মোটরবাইকে চড়ে বাড়ি ফেরার সময়ে স্থানীয় তৃণমূল নেতা যাদব বাগের নেতৃত্বে এক দল লোক রাস্তা আটকে তাঁকে মারধর করে। মাথায় রিভলভার ঠেকিয়ে প্রচারে না আসার জন্য হুমকিও দেওয়া হয় বলে তাঁর অভিযোগ। বিষয়টি ফাঁড়ি ছাড়াও দলের উচ্চ নেতৃত্বকে জানিয়েছেন বলে রথীনবাবুর দাবি। যাদববাবু অবশ্য পাল্টা অভিযোগ করেন, রথীনবাবু নির্দল প্রার্থী মৃত্যুঞ্জয় মণ্ডলের হয়ে প্রচারের নামে বাগডিহা গ্রামে গিয়ে দলীয় প্রার্থী পল্টু মণ্ডলের বাড়িতে চড়াও হন ও হুমকি দেন। যাদববাবুর দাবি, “রথীনবাবু যখন গ্রাম থেকে ফিরছিলেন তখন তৃণমূল কর্মীরা তাঁকে ঘিরে ধরে জানতে চান, পুরনো নেতা হয়েও কী ভাবে তিনি দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রচার করছেন। সে নিয়ে বচসার পরে রথীনবাবু ফিরে যান। মারামারি হয়নি।” পল্টুবাবু জানান, তিনি বৃহস্পতিবার রথীনবাবুর বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ করেছেন। |