চোলাই মদে আসক্ত বাবার অকাল মৃত্যুর পরে সংসারের হাল ধরেছেন মা। অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে কাজ করে তিনি যা রোজগার করেন, তাতে দুই ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে কোনওরকমে সংসার চলে। এই দারিদ্রের মধ্যেও স্রেফ পরিশ্রম আর মেধার জোরেই এ বার উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় ৪২০ নম্বর পেয়েছে শালতোড়ার রামপুরের নিত্যানন্দ মহন্ত। তা সত্ত্বেও তাঁর ভবিষ্যত নিয়েই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
রামপুর বিবেকানন্দ বিদ্যাপীঠের এই ছাত্রের প্রাপ্ত নম্বর: বাংলায় ৮৮, ইংরেজিতে ৮০, দর্শনে ৮১, সংস্কৃতে ৮৪ দিন মজুর কালীপদ মহন্ত চোলাই মদে আসক্ত ছিলেন। নেশা ছাড়ানোর চেষ্টা করেছিলেন জোৎস্নাদেবী। কিন্তু সব চেষ্টাই ব্যর্থ হয়। এক দিন রাতে মদ খেতে বেরিয়ে আর তিনি ফিরলেন না। পরের দিন স্থানীয় একটি পুকুরে তাঁর দেহ ভাসতে দেখা যায়। জোৎস্নাদেবী বলেন, “অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে রান্নার কাজ করে সামান্য আয় হয়। তাতে খাওয়া-পরার বন্দোবস্ত হলেও ছেলেমেয়েদের উঁচু ক্লাস পর্যন্ত পড়ানো সম্ভব নয়। বড় ছেলেকে উচ্চ মাধ্যমিকের পরে আর পড়াতে পারিনি। নিত্যানন্দের পরে এক মেয়ে রয়েছে। ছেলেকে কলেজে পড়াতে পারব না।” |
নিত্যানন্দ ও সুকদেব। —নিজস্ব চিত্র |
নিত্যানন্দ বলে, “কলেজে পড়ার খরচ অনেক। পাড়ার এক দাদা কম খরচে তাঁর কোচিংয়ে আমাকে টিউশন পড়িয়েছেন। স্কুলের শিক্ষকেরা পড়ার বইয়ের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। কলেজে ভর্তি হলে কোথা থেকে এই সব পাবো?’’ রামপুর বিবেকানন্দ বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক রঞ্জিতকুমার খাঁয়ের আক্ষেপ,“নিত্যানন্দ মেধাবী। কিন্তু দারিদ্রের জন্য ওঁর ভবিষ্যৎ অন্ধকার হতে বসেছে।”
একই প্রশ্নের মুখে বাঁকুড়ার রাজগ্রামের সুকদেব লক্ষ্মণও। রাজগ্রাম বিবেকানন্দ হিন্দু বিদ্যালয়ের এই ছাত্র এ বার উচ্চমাধ্যমিকে ৪২৫ নম্বর পেয়েছে। তার প্রাপ্ত নম্বর: বাংলায় ৭৪, ইংরেজিতে ৮৪, ভূগোলে ৯৩, সংস্কৃতে ৯০ ও দর্শনে ৮৪। সুকদেবের বাবা স্বরূপবাবু রাজগ্রামেই একটি কাপড়ের দোকানে কাজ করেন। তিনি বলেন, “রোজগারও বেশি কিছু নয়। কাজে না গেলে মাইনে পাই না। সুখদেব ছাড়াও আমার একটি মেয়ে রয়েছে। অনেক কষ্টে ছেলেকে উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত পড়ালাম। আর সম্ভব নয়।” সুখদেব কিন্তু ইংরেজিতে অনার্স নিয়ে পড়ে শিক্ষক হতে চায়। স্বপ্নভঙ্গের চোখে সে বলে, “মাধ্যমিকের পরে বিজ্ঞান নিয়ে পড়তে চেয়েছিলাম। টাকার অভাবে তা হয়নি।
এ বার ইংরেজি নিয়ে পড়তে চাইছি। এমনই অদৃষ্ট যে তাও ভেস্তে যেতে বসেছে।” রাজগ্রাম বিবেকানন্দ হিন্দু বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আশিস পাত্র বলেন, “স্কুলের শিক্ষকরাই ওকে বাড়তি সময়ে পড়িয়েছেন। কিন্তু ওর মতো মেধাবী শুধু টাকার অভাবে পড়াশোনা বন্ধ করে দিলে খুব ক্ষতি হয়ে যাবে।” |