কারও বাবা পেশায় খেতমজুর, কারও বাবা দিনমজুরি করে সংসার চালান। কেউ বা ট্রেনে গান গেয়ে দিন গুজরান করেন। পরিবারে ওদের সকলেরই চরম আর্থিক অনটন। ঠিক ভাবে দু’বেলা পেট ভরে খাওয়া না জুটলেও দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে লড়াই করতে করতে ওরা হারিয়ে যায়নি। ভবিষ্যতে কেউ সেনাবাহিনীর জওয়ান হতে চায়, কেউ বা শিক্ষক। তাদের স্বপ্নের প্রথম স্তর অবশ্য তাঁরা সকলেই পেরিয়ে গিয়েছে। এ বার মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় ভাল ফল করতে অনটন বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। পরবর্তী স্তরেও সেই দারিদ্র্য কাটিয়েই অদম্য জেদ ও ইচ্ছাশক্তির জেরে জীবনযুদ্ধ জয়ের লড়াই লড়তে চায় ওরা। ওরা মানে মিলন রায়, ইমরান মোল্লা, জয়ন্ত মল্লিক।
জয়ন্ত এবার মনিগ্রাম হাইস্কুল থেকে ৬০ শতাংশ নম্বর নিয়ে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করেছে। বাড়ি বনগাঁর সুকপুকুড়িয়াতে। বাবা আশুতোষবাবু দৃষ্টিশক্তিহীন। ট্রেনে গান গেয়ে ভিক্ষা করেন। কয়েক বছর আগে ইন্দিরা আবাস যোজনায় ঘর পেয়েছেন। বিয়ে দিয়ে দিয়েছেন দুই মেয়ের। এখন একমাত্র লক্ষ্য ছেলেকে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করা। কিন্তু সাধ এবং সাধ্যের মধ্যে যে বিস্তর ফারাক রয়েছে, তা ভালই বুঝতে পারছেন আশুতোষবাবু। জয়ন্ত চায় ভূগোল নিয়ে পড়াশুনা করে ওই বিষয়ে শিক্ষকতা করতে। হাবরা শ্রীচৈতন্য কলেজ থেকে ভর্তির ফর্মও তুলেছে সে। কিন্তু চিন্তা অর্থের। জয়ন্তের কথায়, “পড়তে চাইলেই আর পড়তে পারব কিনা জানি না। শুনেছি ভূগোল নিয়ে পড়লে অনেক খরচ।” |
মিলনও এ বার উচ্চমাধ্যমিকে মনিগ্রাম হাইস্কুল থেকে ৪১১ নম্বর পেয়ে পাশ করেছে। স্বপ্ন ইংরাজির শিক্ষক হওয়া। বাবা সমর রায় দিনমজুরি করেন। বনগাঁ দীনবন্ধু মহাবিদ্যালয় এবং গোবরডাঙা হিন্দু কলেজ থেকে ভর্তির ফর্ম তুলেছে মিলন। টালি ও চাঁচের বেড়ার বাড়িতে প্রতিটি কোণে কোণে অনটনের ছাপ।
ওই একই স্কুল থেকে ৫৪৮ নম্বর পেয়ে মাধ্যমিক পাশ করেছে ইমরান। তার বাবা আখতার মণ্ডল খেতমজুরি করেন। পাট কাঠি আর টালির ঘর ইমরানদের। সেই ঘরে বসেই ছেলেটি স্বপ্ন দেখে, বড় হয়ে সেনা অফিসার হবে। অনটন তার স্বপ্নকে যে কোনও দিন ভেঙে চুরমার করে দিতে পারে, তা-ও অবশ্য ভালই জানে সে। কিন্তু তবু মনের ইচ্ছার জোরেই জীবনযুদ্ধ চালিয়ে যেতে চায় ইমরান।
|
এই সংক্রান্ত খবর:
দারিদ্রেও লড়াই থামেনি ওদের
|