নাবালিকার বিয়ে হয়ে যাচ্ছে— টেলিফোনের ওপর প্রান্তে এই কথা শুনেই ঠিকানা জোগাড় করে ছুটেছিল পুলিশ। তখনও তাঁরা জানত না নাবালিকা বিয়ে বন্ধ করার পাশাপাশি ধরা পড়বে নাবালিকার পুরনো প্রেমিকও!
ঘটনাটি মঙ্গলবার রাতে হাসনাবাদ থানার উত্তর হরিপুর গ্রামের। নিজের নাবালিকা প্রেমিকার বিয়ে হয়ে যাওয়ার দুঃখে সোজা হাসনাবাদ থানায় ফোন করেছিলেন প্রেমিক। মঙ্গলবার রাত তখন প্রায় ১২টা। বিয়ে শেষ হয়েছে। খাবার জায়গায় এঁটো পাতাগুলো পরিস্কার হয়নি তখনও। খবর পেয়ে বিয়ে বাড়িতে বিনা নিমন্ত্রণে হাজির হন হাসনাবাদ থানার ওসি।
অনেক দিন ধরেই হাসনাবাদ থানার উত্তর হরিপুর গ্রামের এক পেশায় কাঠের মিস্ত্রি নিজের ছোট মেয়ের জন্য ‘ঘরজামাই’ খুঁজছিলেন। স্বরূপনগরের মির্জাপুর গ্রামের এক ছেলে মিলেও যায়। মঙ্গলবারই ছিল বিয়ের দিন। কিন্তু গোল বাধল তারপর। ছোট মেয়ের বয়স যে পনেরো বছর। নাবালিকা মেয়েকে বিয়ে দেওয়ার অপরাধে বাবাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মেয়েকেও নিয়ে যাওয়া হয় থানায়।
কিন্তু ঘটনা এখানেই শেষ নয়। বিয়েবাড়িতে যখন তুমুল হইচই চলছে তখন আশেপাশেই বছর পঁচিশের প্রেমিককে ইতস্তত ঘোরাঘুরি করতে দেখে সন্দেহ হয় পুলিশের। নাবালিকার নজর তাঁর দিকে যেতেই চিৎকার করে ওঠে সে। এই যুবকই তো বছর দু’য়েক আগে অপহরণ করেছিল তাকে! কিন্তু এখানে ঘুরঘুর করছে কী মতলবে? পুলিশের খাতায় ‘পলাতক’ ওই যুবককে মারধর শুরু করে জনতা। পরে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়।
ওই নাবালিকা পুলিশকে জানিয়েছে, তাঁর দিদির যখন বিয়ে হয় তখন সে পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী। ভাই বা দাদা না থাকায় ছোট মেয়েকে কাছে রাখার জন্য ঘরজামাই খুঁজতে শুরু করে নাবালিকার বাবা-মা। কিন্তু এর ভিতরই পেশায় মোটর গ্যারেজের শ্রমিক ওই যুবকের সঙ্গে আলাপ হয় তার। মেলামেশাও শুরু হয়। কিন্তু ঘরজামাই হওয়ার প্রস্তাবে বেঁকে বসে বছর দু’য়েক আগে তাকে অপহপণ করেছিল ওই যুবক। এরপর নাবালিকার বাবা থানায় অপহরণের অভিযোগ করেন। মেয়েটিকে অবশ্য ছেড়ে দিয়েছিলেন ওই যুবক। কিন্তু নিজে সেই থেকে বেপাত্তা। এ দিন ফিরেছিলেন প্রেমিকার বিয়ে আটকাতে।
ধৃতদের বুধবার বসিরহাটের এসিজেএম আদালতে পেশ করা হলে বিচারক নাবালিকাকে তাঁর মায়ের কাছে ফেরত পাঠিয়ে দেন। নাবালিকার বাবার জামিন মঞ্জুর করা হয়। অপহরণের মামলায় ধৃত যুবকের ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। |