সংসারের ভাত-ডালের ব্যবস্থা করতে বাবার সঙ্গে মাঝে মধ্যেই ছেলেটাকে জন মজুরের কাজ করতে যেতে হয়। সেই পরিস্থিতিতেও পড়াশোনা চালিয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছে বাঁকুড়ার জয়পুর থানার হেতিয়া অঞ্চলের চালতাকোনা গ্রামের শ্রীকান্ত খাঁড়া। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় সে এ বার জুজুড় হাইস্কুলের ৭২ জনের মধ্যে সবার সেরা হয়েছে। তার প্রাপ্ত নম্বর ৪০৯।
শ্রীকান্তের বাবা ভূমিহীন, কৃষি মজুর। বোন শারীরিক প্রতিবন্ধী। মাকে নিয়ে চারজনের সংসার চলে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। তাই পড়া ছেড়ে মাঝে মধ্যেই সে বাবার সঙ্গে কৃষি মজুরের কাজ করতে যায়। স্কুলের প্রধান শিক্ষক জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায় বলেন, “স্কুলে কখনও প্রথম, দ্বিতীয় বা তৃতীয় হয়েছে শ্রীকান্ত। আর এ বার উচ্চ মাধ্যমিকে স্কুলের সবার থেকে বেশি নম্বর সে পেয়ে নজির সৃষ্টি করেছে। |
শ্রীকান্তের কথায়, “কাজের ফাঁকেই পড়াশোনা চালিয়ে গিয়েছি। বড় হয়ে স্বনির্ভর হতে চাই। পরিবারের দারিদ্র যে ভাবেই হোক আমাকে দূর করতেই হবে।” কিন্তু সে পথ মসৃন নয়। শ্রীকান্তের বাবা রাখাল খাঁড়ার দুশ্চিন্তা, “স্কুল শিক্ষকদের সাহায্যে ছেলে স্কুলের গণ্ডি পার হল। কিন্তু এ বার ওকে কী ভাবে কলেজে পড়াব?” আরও এক দুঃস্থ মেধাবী তন্ময় ভট্টাচার্যের বাড়ি ইন্দাস থানার শাশপুর গ্রামে। তার বাবা মুদির দোকানের কর্মচারী। যা রোজগার, তাতে সংসার চালানো দুষ্কর। তাই তন্ময়ের মা চায়ের দোকান খুলেছেন। চরম অর্থ কষ্টের মধ্যেও সেই ছেলেই বিষ্ণুপুর মহকুমার মধ্যে সম্ভাব্য প্রথম হয়েছে। তার প্রাপ্ত নম্বর ৪৫৬। স্কুলের নাম শাশপুর ডি এন এস ইনস্টিটিউট। স্কুলের প্রধান শিক্ষক নীরদবরণ শ্যাম বলেন, “অভাবি এই ছাত্রের শুরু থেকে ভাল ফলাফলের জন্য সব রকম সাহায্য করে এসেছি আমরা। এ বার তো সকলকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে সে।” কিন্তু চিন্তায় মাথায় হাত পড়েছে তন্ময়ের পরিবারের। তন্ময়ের ইচ্ছে সে ইংরেজি অনার্স নিয়ে পড়বে। কিন্তু সে খরচ কোথা থেকে আসবে? |