বহু আসনেই মুখোমুখি লড়াই পুরুলিয়ায়
বার বার বৈঠকেও ঐক্য হল না ফ্রন্টে
তিন দশকে সার্বিক ঐক্যের চেষ্টা হয়েছিল এই প্রথম বার। কিন্তু, প্রার্থী নিয়ে পুরুলিয়া জেলা বামফ্রন্টে অনৈক্যের পুরানো ছবিটা বদলাল না।
জেলা পরিষদের একটি আসনে সিপিএমের বিরুদ্ধেই প্রার্থী দিল ফরওয়ার্ড ব্লক (ফব)। নিতুড়িয়ার ওই আসনটি প্রথম থেকেই চেয়েছিল ফব। সিপিএম সেখানে প্রার্থী দেওয়ায় ফব পাল্টা মনোনয়ন দেয়। অন্য দিকে কাশীপুর, আড়শা, নিতুড়িয়া, বান্দোয়ানে পঞ্চায়েত সমিতি স্তরে ফ্রন্টের বড় শরিকের বিরুদ্ধে প্রার্থী দিয়েছে অন্য শরিক সিপিআই। এই পরিস্থিতির মধ্যেই বৃহস্পতিবার পুরুলিয়ায় এসে দুই জায়গায় কর্মিসভা করেছেন রাজ্য বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু। ঐক্য হয়নি কার্যত স্বীকার করে নিয়ে তাঁর মন্তব্য, “ব্যতিক্রমী ক্ষেত্র ছাড়া ঐক্য হয়েছে।” ফ্রন্ট সূত্রের খবর আড়শা ও কোটশিলার ওই দুই কর্মিসভায় বিমানবাবু ঐক্যবদ্ধ হয়ে লড়ার জোরালো বার্তা দিয়েছেন। যদিও ঘটনা হল, ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াইয়ে ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টার বদলে অনেক জায়গাতেই নিজেদের মধ্যে বিবাদে জড়িয়ে পড়েছে বামফ্রন্ট।
মনোনয়ন শেষে পুরুলিয়ায় শুরু দেওয়াল লিখন। ছবি: সুজিত মাহাতো
এমনিতে পুরুলিয়ায় বাম শরিকদের মধ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচনে প্রার্থী নিয়ে বিবাদ দীর্ঘদিনের। অতীতে জেলা পরিষদ থেকে গ্রাম পঞ্চায়েত—সর্বত্রই পরস্পরের বিরুদ্ধে প্রার্থী দেওয়ার বহু নজির রয়েছে। কিন্তু, ২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে সার্বিক বিপর্যয়ের পরে পঞ্চায়েত ভোটের আগে প্রথম থেকেই সার্বিক ঐক্যের মাধ্যমে ভোটে প্রার্থী দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন বাম নেতৃত্ব। সর্বসম্মত ঐকমত্যে পৌঁছানোর জন্য পঞ্চায়েত নির্বাচন ঘোষণার অনেক আগে থেকেই নজিরবিহীন ভাবে জেলা বামফ্রন্ট কমপক্ষে গোটা পনেরো বৈঠক করেছিল।
তাতেও যে শেষরক্ষা হয়নি, তা নীচের পরিসংখ্যান থেকেই স্পষ্ট। জেলা পরিষদ ছাড়া পঞ্চায়েত সমিতি স্তরে জেলার মোট আসন ৪৪৬টি হলেও সিপিএম প্রার্থী দিয়েছে ৪২২টিতে, ফব দিয়েছে ৮৬টিতে, সিপিআই লড়ছে ৮টিতে এবং আরএসপি ১টি আসনে। অর্থাৎ, মোট আসনের চেয়ে ৭১ জন অতিরিক্ত বামপ্রার্থী মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরেও বাম অনৈক্যের চিত্র ধরা পড়ছে। জেলায় পঞ্চায়েত স্তরে মোট আসন ১৯৪৪। সিপিএম প্রার্থী দিয়েছে ১৮২৭টিতে, ফব-র প্রার্থী সংখ্যা ৪১৪। সিপিআই ৪৫টি এবং আরএসপি ৯টি আসনে লড়ছে। অর্থাৎ, এখানেও ৩৫১ জন অতিরিক্ত প্রার্থী মনোনয়ন জমা করেছেন। পরিসংখ্যান থেকেই স্পষ্ট, গ্রামসভার আসনেও একে অপরের বিরুদ্ধে লড়ছেন বামপ্রার্থীরা।
পঞ্চায়েত সমিতি গ্রাম পঞ্চায়েত
মোট আসন: ৪৪৬ মোট আসন: ১৯৪৪
সিপিএম: ৪২২ সিপিএম: ১৮২৭
ফরওয়ার্ড ব্লক: ৮৬ ফরওয়ার্ড ব্লক: ৪১৪
সিপিআই: ৮ সিপিআই: ৪৫
আরএসপি: ১ আরএসপি: ৯
অতিরিক্ত প্রার্থী: ৭১ অতিরিক্ত প্রার্থী: ৩৫১
বাম নেতাদের একাংশের অবশ্য দাবি, মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন (১০ জুন) পেরোয়নি। ফলে, তার আগেই ঐক্য হয়নি বলাটা ঠিক নয়।
জেলা পরিষদের ক্ষেত্রে দলের শীর্ষ নেতৃত্বের সিদ্ধান্তেই প্রার্থী স্থির হয়। ফব সূত্রের খবর, নিতুড়িয়া ব্লকে জেলা পরিষদের আসন একটি আসন বাড়ায় ফব নেতৃত্ব সেই আসনটি তাঁদের ছাড়ার জন্য দাবি করেছিলেন স্থানীয় ফব নেতারা। তাঁদের যুক্তি, নিতুড়িয়ার রায়বাঁধ, গুনিয়াড়া, শালতোড় সড়বড়ি পঞ্চায়েত এলাকায় তাদের সাংগঠনিক অবস্থা আগের তুলনায় ভাল। তাই ওই এলাকার জেলা পরিষদের আসন তারাই পাওয়ার দাবিদার। কিন্তু, সিপিএম ওই আসনটিতে প্রার্থী দেওয়ার পরে দেরি না করে পাল্টা প্রার্থী দিয়েছে ফব। এলাকার এক ফব নেতার ক্ষোভ, “ছোট শরিকদেরই সব সময় জোটধর্ম বজায় রাখার ব্যাপারে চাপ না দিয়ে বড় শরিক হিসাবে সিপিএম কেন জোটধর্ম পালন করে আসনটি ছেড়ে দিচ্ছে না?” ফব সূত্রেই জানা যাচ্ছে, নিতুড়িয়ায় জেলা পরিষদের আসনে প্রার্থী দেওয়ার ক্ষেত্রে জেলা ফব নেতৃত্বর অনুমোদন মেলার পরেই প্রার্থী দেওয়া হয়েছে।
অন্য দিকে, সিপিআইয়ে দাবি ছিল, কাশীপুর পঞ্চায়েত সমিতিতে চারটি আসনের। সিপিএম একটি আসন ছেড়েছিল। সেখানে চারটিতেই প্রার্থী দিয়েছে সিপিআই। পাশাপাশি বান্দোয়ান, আড়শা, নিতুড়িয়া পঞ্চায়েত সমিতিতে আসন চেয়েও না পেয়ে সেখানে প্রার্থী দিয়েছে সিপিআই। সার্বিক বামজোট হয়েছে একমাত্র পাড়া ব্লকে। সিপিআইয়ের জেলা সম্পাদক ভক্তিপদ মাজি বলেন, “আমরা জেলা পরিষদে একটা আসন ও পাঁচটি পঞ্চায়েত সমিতিতে কিছু আসন চেয়েছিলাম। সেই সামান্য দাবিও মানা হয়নি।”
বস্তুত, সার্বিক ঐক্যের চেষ্টা হলেও প্রথম থেকেই যে ব্লকগুলি নিয়ে মতানৈক্য ছিল, বহু আলোচনাতেও সেই এলাকাগুলি নিয়ে জট কাটেনি। দাবি না মানায় ফ্রন্টের বৈঠকে শেষদিকে যোগ পর্যন্ত দেয়নি সিপিআই। ভক্তিপদবাবু বলেন, “পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সার্বিক ঐক্যের প্রয়োজনীয়তা সকলে বুঝলেও আমাদের দাবির গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। স্থানীয় স্তরের নেতা-কর্মীরা এটা বুঝতে পেরেই প্রার্থী দিয়েছেন।” এখনও পর্যন্ত প্রার্থীপদ প্রত্যাহার না করার ব্যাপারেই অনঢ় জেলা সিপিআই নেতৃত্ব।
তবে সাবধানী ফব। গত তিন দশকে জেলায় কখনওই সার্বিক ঐক্য হয়নিন স্মরণ করিয়ে ফব-র জেলা সভাপতি নিশিকান্ত মেহেতার মন্তব্য, “এ বার আমরা সকলেই আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলাম সার্বিক জোট করার। তা সত্ত্বেও কিছু বিতর্ক রয়েছে। মেটানোর চেষ্টা চলছে।”
শনিবার ৮মে আলোচনায় বসছে জেলা বামফ্রন্ট। কারণ ১০ তারিখ পেরিয়ে গেলে মনোনয়ন প্রত্যাহার করার উপায় নেই। এখন দেখার, রফাসূ্ত্র বের করে এই সঙ্কট থেকে বেরোতে পারে কি না বামফ্রন্ট।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.