রঘুনাথপুর ২
তৃণমূলে দ্বন্দ্ব, নেপো হতে চায় সিপিএম-কংগ্রেস
রাজ্যের অনেক জায়গায় শাসক দল তৃণমূল ভোটের আগেই বিরোধী-শূন্য পঞ্চায়েত পেয়ে গেলেও রঘুনাথপুর ২ ব্লকের চেলিয়ামা গ্রাম পঞ্চায়েতে অন্য ঘটনা ঘটেছে। এখানে কংগ্রেস, সিপিএমের সঙ্গে তৃণমূলের গোঁজ প্রার্থীরা থাকলেও পাঁচটি আসনে তৃণমূলের প্রতীকে কেউ লড়ছেন না। কারণটা নব্য ও আদি তৃণমূলের দ্বন্দ্ব।
রঘুনাথপুর ২ ব্লকে তৃণমূলের লড়াই মোটেই সহজ নয়। এই ব্লক যে বিধানসভা কেন্দ্রের অন্তর্ভূক্ত, সেই পাড়ার বিধায়ক কংগ্রেসের। আবার রঘুনাথপুর ২ পঞ্চায়েত সমিতি বর্তমানে সিপিএমের দখলে রয়েছে। গত বিধানসভা ভোটেও এই ব্লকে এগিয়ে ছিল সিপিএম। তৃণমূলের এই দ্বর্ন্দ্বে দুশ্চিন্তা বাড়ল জেলা নেতাদের।
তৃণমূল সূত্রে খবর, দলের রঘুনাথপুর ২ ব্লকের সভাপতি বরুণ মেহেতা স্থানীয় ভাবে নব্য তৃণমূল বলে পরিচিত। অথচ চেলিয়ামা-সহ ব্লকের বিরাট অংশে দলের পুরনো কর্মী-নেতাদের প্রভাব তুলনামূলক ভাবে বেশি। তাই পঞ্চায়েত ভোটের প্রার্থী ঠিক করা নিয়ে নব্য বনাম আদি তৃণমূলের সংঘাত এখানে তীব্র হয়ে উঠেছিল। বরুণবাবুর বিরুদ্ধে প্রার্থী নির্বাচন নিয়ে জেলা নেতৃত্বের কাছে বার বার অভিযোগ জানিয়েছিল যুব তৃণমূলের ব্লক সভাপতি স্বপন মেহেতা-সহ দলের পুরানো অংশ। তাঁদের অভিযোগ ছিল, “প্রার্থী নির্বাচনে ব্লক সভাপতি দলের দুর্দিনে দলে থাকা নেতা-কর্মীদের গুরুত্ব না দিয়ে সিপিএম থেকে আসা নিজের পছন্দের লোকদের প্রাথী করছেন।”
দলের এক নেতার কথায়, “চেলিয়ামা পঞ্চায়েতে পাঁচটি আসনে দল থেকে কোনও প্রার্থীর নাম ঠিক করা হয়নি। ফলে দলের প্রতীকে কেউ লড়ছেন না। তবে নির্দল হিসেবে দলের পুরনো কর্মীরা লড়ছেন। তাঁদের লোকে চেনেন।” বরুণবাবুর দাবি, “ওই এলাকায় এসইউসি-র সঙ্গে আমাদের নিচু স্তরে জোট হয়েছে বলেই আসনগুলি ওদের জন্য ছাড়া হয়েছে।” তবে এসইউসি-র জেলা সম্পাদক প্রণতি ভট্টাচার্য বলেছেন, “জেলার কোনও এলাকাতেই তৃণমূলের সঙ্গে আমরা জোট করিনি।” দাবি-পাল্টা দাবির মধ্যে গতবার সিপিএমের জেতা এই পঞ্চয়েতের ১৮টি আসনের মধ্যে পাঁচটিতে দলের প্রতীকে প্রার্থী না থাকায় তৃণমূল যে চাপে, তা অবশ্য নেতারা মেনে নিয়েছেন। ব্লকের অন্য পঞ্চায়েতের আসনগুলিতেও তৃণমূলের দ্বন্দ্ব সুস্পষ্ট। এই ব্লকের ৬টি পঞ্চায়েতের ৮০টি আসনের মধ্যে ৩৫টিতে তৃণমূলের প্রার্থীর সঙ্গে গোঁজ প্রার্থীও রয়েছেন। লড়াইটা আদতে সেই নব্য ও আদি তৃণমূলের।
তৃণমূলের পুরনো দিনের নেতা-কর্মীরা অভিমান করে বলছেন, “পাড়া বিধানসভার সিপিএমের প্রাক্তন বিধায়ক মিনু বাউরিকে চেলিয়ামা এলাকা থেকে জেলা পরিষদে তৃণমূলের প্রার্থী করা হয়েছে। অথচ ওই সিপিএমের বিরুদ্ধেই এত দিন লড়াই করেছি। তা কি এই ঘটনা দেখার জন্য?” মিনুদেবীর বিরুদ্ধে নির্দল প্রার্থী হয়েছেন তৃণমূলের তপশিলী জাতি ও উপজাতি সংগঠনের ব্লকের আহ্বায়ক প্রভাস বাউরির স্ত্রী নমিতা বাউরি। প্রভাসবাবু বলেন “ব্লক সভাপতি দুর্দিনে দলের সঙ্গে থাকা কর্মীদের প্রস্তাব না মেনে সিপিএম থেকে আসা একজনকে টিকিট দিয়েছেন। তৃণমূলের সমর্থকেরাও তা মানবেন না। তাই তাঁদের কথা ভেবেই স্ত্রীকে প্রার্থী করেছি।” জেলা পরিষদের অন্য একটি আসনে তৃণমূলের এক প্রার্থীর বিরুদ্ধে মনোনয়ন জমা দিয়েছিলেন দলের প্রাক্তন ব্লক কার্যকরী সভাপতি তথা ব্লকের শ্রমিক সংগঠনের নেতা কার্তিক বাউরি। শেষ পর্যন্ত জেলা সভাপতি শান্তিরাম মাহাতোর হস্তক্ষেপে তিনি মনোনয়ন প্রত্যাহার করেছেন। তবে মঙ্গলদা গ্রামসভার আসনে তৃণমূলের প্রার্থীর বিরুদ্ধে নির্দল হয়ে লড়ছেন কার্তিকবাবুর ছেলে সুভাষ বাউরি। এলাকার তৃণমূল কর্মীদের অনেকর মুখে মুখেই শোনা যাচ্ছে, “এ বার তাঁদের লড়াই অন্যরকম। দলের প্রতীকে এখানে যাঁরা লড়ছেন, তাঁদের অনেকেই নব্য তৃণমূল। ওঁদের হারিয়ে প্রমাণ করতে চাই যে আদিরাই এখানকার সংগঠন ধরে রেখেছে।” তবে দলের ব্লক সভাপতি বলছেন, “বুথ স্তর থেকে সর্বসম্মত আলোচনায় উঠে আসা ব্যক্তিদেরই প্রার্থী করা হয়েছে। যাঁরা নির্দল হয়ে দাঁড়িয়েছেন তাঁরা আমাদের দলের কেউ না।” তৃণমূলের অন্তর্কলহে শিঁকে ছিড়েছে কংগ্রেসের। বিধানসভা দখল করার পরে এলাকায় তাঁরা সাংগঠনিক কাজকর্ম বাড়িয়েছে। উপরন্তু পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে যুব তৃণমূলের ব্লক সম্পাদক সুশান্ত চক্রবর্তী ও চেলিয়ামা অঞ্চলের যুব তৃণমূলের আহ্বায়ক শম্ভুনাথ দে অনুগামীদের নিয়ে কংগ্রেসে যোগ দেওয়ায় বাড়তি সুবিধা হয়েছে। ব্লক কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক অনিমেষ চার বলেন, “বিধায়ক আমাদের দলের হওয়ায়, এলাকায় উন্নয়নের কাজ করে সংগঠন গড়ে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়েছি। তারপরে তৃণমূল ছেড়ে নেতা-কর্মীরা চলে আসায় আমরা তৃণমূলের পালের হাওয়া কেড়ে নিয়েছি।” স্বস্থিতে সিপিএমও। দলের চেলিয়ামা জোনাল সদস্য শ্বাশত মুখোপাধ্যায় বলেন, “বিধানসভা ভোটে দুই দলের জোট হওয়ার পরেও এই ব্লকে প্রায় ৭৫০ ভোটে লিড ছিল আমাদের। এ বার ওরা ঐক্যবদ্ধ নয়। তারপরে তৃণমূলের নিজেদের দ্বন্দ্ব আমাদের বাড়তি সুবিধা দিচ্ছে।” তৃণমূলের জেলা সভাপতি অবশ্য বলছেন, “নির্দল প্রার্থীদের সরে আসার নির্দেশ দিয়েছি। ওই ব্লকে তৃণমূল ভাল ফল করবে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.